, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin admin

রমজান মাসে কাশ্মীরে ‘শান্তি’ থাকবে তো?

প্রকাশ: ২০১৮-০৫-২৩ ১৩:৫২:৪৮ || আপডেট: ২০১৮-০৫-২৩ ১৩:৫২:৪৮

Spread the love

রমজান মাসে কাশ্মীরে ‘শান্তি’ থাকবে তো?
রমজান মাস এবং অমরনাথ যাত্রার প্রেক্ষিতে একতরফা সংঘর্ষ বিরতির বার্তা দিলো মোদী সরকার৷ তবে এই সিদ্ধান্ত সার্থক হবে কিনা তাই নিয়ে রয়েছে মতভেদ৷তাছাড়া এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের শান্তি বার্তার সদর্থক কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না৷ সংবাদ ডয়চে ভেলেকের।

রমজান মাসে ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে সংঘর্ষ বিরতির জন্য মোদী সরকারের একতরফা সিদ্ধান্ত সার্থক হবে কিনা তাই নিয়ে রয়েছে বিতর্ক৷ যাঁরা এর বিপক্ষে, তাঁরা মনে করেন, এই সিদ্ধান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে৷ জঙ্গিরা নিজেদের সংঘবদ্ধ হবার এবং হাতিয়ার সংগ্রহ করার সুযোগ পাবে৷ এক কথায় জঙ্গিদের হাত আরো শক্ত হবে৷ নিরাপত্তা বাহিনীর বজ্র আঁটুনি ঢিলে হবে৷ আর যাঁরা সংঘর্ষ বিরতির পক্ষে, তাঁরা মনে করেন, মোদী সরকারের এটা একটা বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত৷ শান্তিকে সব সময়ই সুযোগ দেওয়া উচিত এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় কাশ্মীরিদের আস্থা বাড়ানো দরকার৷ কাজেই এটা স্বাগতযোগ্য৷

কাশ্মীর উপত্যকায় গিয়ে স্বয়ং মোদী বিপথগামী কাশ্মীরি যুবকদের হিংসার পথ ত্যাগ করে রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার যে ডাক দেন, তাতে এখনও পর্যন্ত কোনো সদর্থক প্রভাব পড়েনি, মোদীর কাশ্মীর সফরের প্রতিবাদে এবং প্রশাসনিক কড়াকড়িতে উপত্যকায় হরতাল পালন করে সেটা বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে, এতে কিছু হবার নয়৷

মোদীর এই বার্তা দেবার পেছনে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কাজ করছে: বিশ্বনাথ চক্রবর্তী
এই বিষয়ে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যায়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর অভিমত জানতে চাওয়া হলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‘এর মধ্য দিয়ে মোদী সরকার একটা বার্তা দেবার চেষ্টা করেছেন৷ তাতে ফল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না৷ তবে মোদীর এই বার্তা দেবার পেছনে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কাজ করছে৷ অর্থাৎ সংখ্যালঘুদের কাছে সদর্থক বার্তা দিতে চাওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরেও সেই বার্তাটা যেন পৌঁছোয়৷ যাকে বলে, এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল৷ পাকিস্তানুসহ মুসলিম দুনিয়ায় ভারতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা৷ তাতে অবশ্য ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে কোনো হেরফের হবার নয়৷ পাকিস্তান জানে, মুসলিম দুনিয়ার সহানুভূতি আদায় করার একটা বাহানামাত্র৷ তাতে কাশ্মীর পরিস্থিতির ইতরবিশেষ হবে বলে মনে করেন না৷

সরকারের তরফে বলা হয়, সংঘর্ষ বিরতি নিঃশর্ত নয়৷ নিরীহ মানুষদের জানমাল রক্ষায় দরকার হলে নিরাপত্তা বাহিনী পালটা ব্যবস্থা নেবার অধিকার থাকবে৷ রমজান মাস ও অমরনাথ যাত্রার প্রেক্ষিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং বিরোধী নেতা ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা সেনা অভিযান বন্ধ রাখার জন্য মোদী সরকারকে প্রস্তাব দেন৷ তাতে ২০০০ সালের রমজান মাসে অটল বিহারি বাজপেয়ী সরকারের আমলে সেনা অভিযান বন্ধ রাখার কথা উল্লেখ করা হয়৷ কিন্তু পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়াত কনফারেন্সের মদতপুষ্ট স্থানীয় যুবকরা তাতে কান দেয়নি৷ এই সংঘর্ষ বিরতিকে তাঁরা প্রহসন আখ্যা দিয়েছে৷

উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে হিজবুল মুজাহিদিনের কথিত কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হবার পর থেকে স্থানীয় সহিংসতা বেড়ে গেছে৷ সংঘর্ষে নিহত স্থানীয় কাশ্মীরি জঙ্গিদের লাশ দাফন করা যেন সরকারবিরোধী মিছিল ও প্রতিবাদের এক উপলক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মারা যায় ৬৪জন সন্দেহভাজন কাশ্মীরি৷

তার জায়গা পূরণে পুলিশের পরিসংখ্যান অনুসারে এই বছরেই জঙ্গিদলে নাম লেখায় প্রায় ৭০ জন স্থানীয় যুবক৷ পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, রমজান মাসে কাশ্মীরে সেনা অভিযান স্থগিত রাখা সাময়িক ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে, কিন্তু স্থায়ী শান্তি ফেরাতে আরো অনেক দীর্গ ও জটিল প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে৷ পাকিস্তানের সঙ্গে ২০০৩ সালের অস্ত্রবিরতি রেখার বর্তমান পরিস্থিতির এখন জীর্ণদশা৷ এর পুনরুদ্ধার জরুরি৷ তার থেকেও জরুরি রাজনৈতিক হাত বাড়ানো, সম্ভব হলে বিনাশর্তে, যেটা করেছিলেন বাজপেয়ী৷ এক্ষেত্রে সেটা করতে হবে নরেন্দ্র মোদীকে৷ রাজনৈতিক দায়িত্ব নিয়ে হাত বাড়াতে হবে মোদীকে৷ অন্যথায়, রমজান মাসের সংঘর্ষ বিরতি মাঠে মারা যাবে বলে মনে করছেন কাশ্মীরি বিশেষজ্ঞ মহল৷

নাম না করে নিয়ন্ত্রণ রেখায় গোলাগুলি বর্ষণের মাত্রা বাড়ায় এবং হালে মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানি জঙ্গিদের জড়িত থাকার দায় কার্যত স্বীকার করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিবৃতির প্রেক্ষিতে মোদী পাকিস্তানকে বিঁধেছেন৷ মোদীর সদর্থক বার্তার প্রভাব এখনও দেখা যায়নি উপত্যকায়৷ গত শনিবার মোদীর কাশ্মীর সফরকালে রাজ্যের জনজীবন কার্যত স্তব্ধ ছিল৷ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হরতাল ডাকায় গন্ডগোলের আশঙ্কা ছিল৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের গৃহবন্দি করে প্রশাসন৷ মোবাইল ও ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়৷ শ্রীনগরে প্রধানমন্ত্রী কৃষ্ণগঙ্গা জলবিদ্যুৎ এবং শ্রীনগর রিং রোড প্রকল্পের উদ্বোধন করেন৷ ঐ অনুষ্ঠানেই তিনি বলেন, যেসব কাশ্মীরি যুবক হিংসার পথ বেছে নিয়েছে,তাঁদের বলছি, শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিকল্প কিছু হয় না৷ একটি পাথর ছুঁড়লেও স্থিতিশীলতা বিপন্ন হয়, এটা বুঝতে হবে৷

অন্যদিকে, জম্মু-কাশ্মীরের আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর উভয় তরফেই গোলাগুলি বর্ষণ সমানে চলেছে৷ পাকিস্তানি গোলাগুলিতে মারা গেছে এক শিশু ও বৃদ্ধাসমেত তিনজন৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারতের ৩০টি সীমান্ত চৌকি এবং সীমান্ত লাগোয়া ২টি ভারতীয় গ্রাম৷ অবশ্য ভারতের সীমান্ত বাহিনী প্রত্যাঘাত চালিয়ে যাচ্ছে৷

Logo-orginal