, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Avatar rtm

২৭তম তারাবীহ : উম্মাহর প্রতি কুরআনের বার্তা

প্রকাশ: ২০১৮-০৬-১২ ১৯:৩৬:৫৪ || আপডেট: ২০১৮-০৬-১২ ১৯:৩৭:৫৫

Spread the love
২৭তম তারাবীহ : উম্মাহর প্রতি কুরআনের বার্তা

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম: ২৭তম তারাবীহ আজ। আজকের তারাবীহতে পবিত্র কুরআনের সর্বশেষ ৩০তম পারা তিলাওয়াতের মাধ্যমে খতম সমাপ্ত করা হবে। তিলাওয়াত করা হবে সূরা নাবা থেকে সূরা নাস পর্যন্ত। ৩০তম পারার সূরা বাইয়্যিনাহ, যিলযাল, নাসর, ফালাক ও সর্বশেষ সূরা নাস- এপাঁচটি সূরা ছাড়া সব কটি সূরা মক্কায় অবতীর্ণ। আজকের তারাবীহতে পঠিতব্য অংশের আলোচনা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

১. সুরা নাবা মক্কায় অবতীর্ণ সুরা৷ এতে ৪০ টি আয়াত ও দুটি রুকু রয়েছে৷ এই সুরার বিষয়বস্তু হচ্ছে, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান বিষয়ক৷ সুরার শুরুতে মুশরিকদের কিয়ামত সম্পর্কিত অস্বীকারমূলক ও বিদ্রুপাত্মক প্রশ্নের আলোচনা এসেছে৷ “তারা পরস্পরে কি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? মহা সংবাদ সম্পর্কে, যে সম্পর্কে তারা মতানৈক্য করে৷” (১-৩)
কারো মতে মহা সংবাদ মানে কুরআন৷ তবে অগ্রাধিকারযোগ্য মত হচ্ছে, কুরআন নয়; কিয়ামত উদ্দেশ্য৷
তারপর আল্লাহর কুদরতের দলিল, কিয়ামতের দৃশ্য, জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা এসেছে৷ ভূমিকে বিছানা, পর্বতমালাকে পেরেক, মানুষকে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি, নিদ্রাকে ক্লান্তি দূরকারী, রাত্রিকে আবরণ, দিনকে জীবিকা অন্বেষণের সময়, মাথার উপর আকাশ ও সূর্য আলো দানকারী হিসেবে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন৷ তিনি পুনরায় জীবন দিতে পারেন৷ সকল যুগের সকল মানুষকে একত্র করে তাদের মাঝে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম৷
কিয়ামতের দিন সংঘটিত হবে৷ প্রত্যেকের আমলনামা তার সামনে পেশ করা হবে৷ শেষ ফয়সালা জানিয়ে দেয়া হবে৷ কাফিররা তাদের ফয়সালা শুনে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে, হায় আফসোস! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম৷

২. সুরা নাযি’আত মক্কায় অবতীর্ণ সুরা৷ এতে ৪৬ টি আয়াত ও দুটি রুকু রয়েছে৷ এই সুরায়ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা ও ভয়াবহতার বিবরণ দেয়া হয়েছে৷ সুরার শুরুতে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন কাজে আদিষ্ট পাঁচ প্রকার ফেরেশতার কসম করেছেন৷ এরপর বলেছেন, যারা কিয়ামত দিবসের অস্বীকার করে, তাদের অবস্থা সেদিন এমন হবে যে, তাদের ভেতর ধরফর করবে, অন্তর ভীত-বিহবল হবে৷ অপদস্থতায় তাদের দৃষ্টি নত হবে৷ আজ যারা ফেরাউনে পরিণত হয়েছে, আল্লাহর নবীর কথা মানতে প্রস্তুত নয়, হয়ত ফেরাউনের পরিণতি সম্পর্কে তাদের জানা নেই৷ যিনি আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন, সুবিন্যস্ত করেছেন, রাত-দিনের ধারাবাহিকতার এই পদ্ধতি জারি রেখেছেন৷ পাহাড়কে মজবুত করেছেন৷

সব শেষে যারা দুনিয়ার জীবনের উপর আকৃষ্ট, এটাকেই সবকিছু মনে করে৷ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করে, সীমালঙ্ঘন করে ও পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়, তাদের পরিণাম ও ঠিকানা জাহান্নাম৷ পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশি থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত৷

৩. সুরা আবাসা মক্কায় অবতীর্ণ সুরা৷ ৪৬ টি আযাত৷ এই সুরা থেকে শেষ পর্যন্ত সবকটি সুরা এক রুকু-বিশিষ্ট৷ এই সুরার শুরুতে অন্ধ সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রা,র কাহিনি আলোচিত হয়েছে৷ যিনি ইলম অর্জনের লক্ষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়েছিলেন এমন সময়, যখন তিনি কয়েকজন কুরায়শের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত দিতে ব্যস্ত ছিলেন৷ এতে স্বভাবতই তিনি একটু নাখোশ হলেন এবং ইবনে উম্মে মাকতুমের প্রতি তিনি ভ্রূক্ষেপ করলেন না৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে এই সুরা নাযিল হলো৷ আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সতর্ক করে দিলেন৷ এরপর পর থেকে যখনই ইবনে উম্মে মাকতুম রা,কে আসতে দেখতেন, এগিয়ে নিয়ে আসতেন এবং বলতেন, তিনি তো এমন ব্যক্তি, যার জন্যে আমাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে৷ এই ঘটনাও কুরআনের সত্যতার আরেক দলিল৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের রচিত হলে নিজেকে সতর্ক করে দেয়ার কোনো কথা ছিলো না৷

এরপর মানুষের অকৃতজ্ঞ হওয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে যে, তারা নিজেদের সৃষ্টির মূল ভুলে আল্লাহর সঙ্গে নাফরমানিতে লিপ্ত হয়৷ তাদের অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বে এনে দুনিয়ার জীবন চলাচল করিয়ে কবর পর্যন্ত নিয়ে যাই৷ তারপর আবার পুনর্জীবন দান করি৷ এসবই আল্লাহ তাআলার কুদরত এবং একত্বের দলিল৷ এরপর কিয়ামতের ভয়াবহতার দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নিকটাত্মীয়কে পর্যন্ত ভুলে যাবে৷ নিজের চিন্তায়ই বিভোর থাকবে সবাই৷ তবে অনেক চেহারায় সেদিন সাফল্যের ঝলক পরিলক্ষিত হবে৷ আর অসংখ্য চেহারা সেদিন ব্যর্থতা আর অপদস্থতার অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকবে৷

৪. সুরা তাকওয়ীর মক্কায় অবতীর্ণ সুরা৷ এতে ২৯ টি আয়াত রয়েছে৷ তাকওয়ীর অর্থ জ্যোতিহীন হওয়া বা নিক্ষেপ করা৷ প্রথম ১৪ টি আয়াতে মাখলুকাতের মধ্যে ইনকিলাব সৃষ্টি হবে এবং যে ভয়াবহ দৃশ্যের অবতারণা হবে এবং এর প্রভাব থেকে জগতের কোনো কিছুই বাদ যাবে না, সেসবের আলোচনা৷ সেদিন সবকিছুই বদলে যাবে৷ সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে, নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে, পর্বতমালা অপসারিত হবে, গর্ভবতী উষ্ট্রী উপেক্ষিত হয়ে পড়বে, বন্যপশুরা জমায়েত হয়ে যাবে, সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে, জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হলো?

পরের ১৫ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তিন কসম করে কুরআনের সত্যতা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের বাস্তবতার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে৷ বলা হয়েছে, তোমাদের সাথী পাগল নন৷ তিনি সেই ফেরেশতাকে প্রকাশ্য দিগন্তে দেখেছেন৷ এই কুরআন বিতারিত শয়তানের উক্তি না৷ এটা তো কেবল বিশ্বাসীদের জন্যে উপদেশ, তার জন্যে যে তোমাদের মধ্যে সোজা চলতে চায়৷ তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছার বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না৷

৫. সুরা ইনফিতার মক্কায় অবতীর্ণ সুরা৷ এতে ১৯ টি আয়াত রয়েছে৷ প্রথমে ওই পরিবর্তনসমূহের আলোচনা হয়েছে, যা কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় এই জগতে পরিলক্ষিত হবে৷ এরপর ভালোবাসা মিশ্রিত কথায় অনুযোগ করা হচ্ছে যে, হে মানুষ! কিসে তোমায় তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল? যে তাঁর অনুগ্রহ তোমাকে ভুলিয়ে দিয়ে নাফরমানি আর অকৃতজ্ঞতা লিপ্ত করল? বাস্তব কথা হচ্ছে, তোমার তো কিয়ামতের দিনে বিশ্বাস নেই৷ অথচ সেদিন শীঘ্রই আসন্ন৷ সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ সেদিন তোমাদের কৃতকর্মের রিপোর্ট পেশ করবেন৷ এরপর তোমাদেরকে দুভাগে ভাগ করা হবে৷ সৎকর্মশীলগণ থাকবে জান্নাতে এবং দুষ্কর্মরা থাকবে জাহান্নামে৷

৬. সুরা মুতাফফিফীনের কিছু আয়াত মক্কায় অবতীর্ণ ও কিছু আয়াত মদিনায়৷ ৩৬ টি আয়াত রয়েছে৷ কিয়ামতের অবস্থা ও ভয়াবহতার আলোচনা করা হয়েছে৷ সুরার শুরুতে তাতফীফ তথা মাপে কম দেয়ার নিন্দা করা হয়েছে৷ তাতফীফ অর্থ শুধু মাপে কম দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না, বরং যে কোনো ব্যাপারে প্রাপককে প্রাপ্য থেকে কম দেয়াও তাতফীফের অন্তর্ভুক্ত৷ ইনসাফ না করা, নিজের দোষ না দেখে অপরের দোষ তালাশ করা, নিজের জন্য যা পছন্দ করি না, অপর ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ করা, নিজের হক তো চেয়ে নিই, কিন্তু অপরের হক আদায় করি না; এ জাতীয় স্বভাবের সব লোক এই সতর্কবাণীর অন্তর্ভুক্ত৷ বলা হয়েছে, “যারা মাপে কম করে, তাদের জন্যে দুর্ভোগ৷ যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণমাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদেরকে মেপে দেয়, কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম করে দেয়৷” (১-৩)

এরপর ওই পাপিষ্ঠদের পরিণতির আলোচনা এসেছে, যারা আল্লাহর দ্বীনের আলোকে নিভিয়ে দেয়ার জন্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে৷ এর বিপরীতে ওই সমস্ত নেককার এবং পূণ্যবানদের আলোচনা এসেছে, যাদেরকে পরকালে চিরকালীন নিয়ামতে ভূষিত করা হবে৷

ইল্লিয়্যীন ও সিজ্জীন: ইল্লিয়্যীন অর্থ উঁচু স্থান৷ এক হাদীসে এসেছে, ইল্লিয়্যীন সপ্তম আকাশে আরশের নিচে এক স্থানের নাম৷ এতে মুমিনদের রূহ ও আমলনামা রাখা হয়৷ সিজ্জীন অর্থ চিরস্থায়ী কয়েদ৷ একটি বিশেষ স্থানের নাম৷ এখানে কাফেরদের রূহ অবস্থান করে এবং এখানেই তাদের আমলনামা থাকে৷ (মা’আরিফ)

কালো অন্তর বিশিষ্টরা দুনিয়াতে আল্লাহর নেক বান্দাদের নিয়ে উপহাস করত, কিন্তু কিয়ামতের দিন বিষয়টি সম্পূর্ণ উল্টে যাবে৷ সেদিন নেককার লোকেরা এ সমস্ত পাপিষ্ঠদের নিয়ে উপহাস করবে৷ (২৯-৩৬)

৭. সুরা ইনশিকাক মক্কায় অবতীর্ণ সুরা৷ এতে ২৫ টি আয়াত রয়েছে৷ সুরার শুরুতে সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন পরিবর্তনের আলোচনা এসেছে, যা কিয়ামতের পূর্বে প্রকাশিত হবে৷ তারপর কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পর হিসাব-নিকাশের পর মানুষ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে৷ কারো আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে আর কারো আমলনামা পিঠের পশ্চাদ্দিক থেকে দেয়া হবে৷ (১-১৫)
এরপর তিনটি কসম করে বললেন, নিশ্চয়ই তোমরা এক সিঁড়ি থেকে আরেক সিঁড়িতে আরোহণ করবে৷ অর্থাৎ সেদিন এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় পতিত হবে৷ বিভিন্ন ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হবে৷ অবশ্য ঈমানদারগণ সেই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বেঁচে যাবে৷

৮. সুরা বুরুজ মক্কায় অবতীর্ণ সুরা৷ এতে ২১ টি আয়াত রয়েছে৷ সুরার শুরুতে আল্লাহ তাআলা তিনটি কসম করলেন৷ “গ্রহ-নক্ষত্র বিশিষ্ট আকাশের কসম, কিয়ামত দিবসের কসম এবং শুক্রবার ও আরাফার দিবসের কসম৷”
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেন- অভিশপ্ত হয়েছে গর্ত ওয়ালারা অর্থাৎ অনেক ইন্ধনের অগ্নিসংযোগকারীরা৷
এখানে শাহিদ দ্বারা শুক্রবার দিন এবং মাশহুদ দ্বারা আরাফার দিন উদ্দেশ্য৷
এখানে আসহাবুল উখদুদ বা গর্তওয়ালা দ্বারা মুশরিক বাদশাহ যু-নাওয়াস উদ্দেশ্য৷ সে সেময়কার সত্য দ্বীন ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করার কারণে ২০ হাজার মানুষকে গর্তে ফেলে জীবন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছিল৷ তারা আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে মূর্তিপূজা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন৷ হাদীসের কিতাবে এক যুবকের দ্বীনের উপর অটল-অবিচলতা দেখে হাজার হাজার মানুষের ঈমান আনার কাহিনি এবং সেসময়ের বাদশাহর ধমকি সত্ত্বেও ঈমান থেকে ফিরে না আসা এবং সবাইকে গর্তের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হবার বিবরণ বিবৃত হয়েছে৷

আজকাল সভ্যতার ধ্বজাধারী ইউরোপ-আমেরিকানদের মুসলমানদেরকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত করার ইতিহাস কি বিস্মৃত হবার মতো? সে সময়কার জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড আজ আধুনিক বিশ্বে ক্লাস্টার বোমা, রাসায়নিক বোমা, মিসাইল, ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমানু বোমায় রূপান্তরিত হয়েছে৷ সে সময়কার জলন্ত অগ্নিকুণ্ড থেকে আজকালের আধুনিক বোমাগুলো বেশি ভয়াবহ, যা মুহূর্তের মধ্যেই এলাকার পর এলাকা এবং হাজার হাজার মানুষকে ছাই-ভস্ম করে দেয়৷ এই বোমা মেরে তারা হিরোশিমা-নাগাসাকি জ্বালালো, এ যুগে এসে আফগানিস্তান এবং ইরাক জ্বালালো৷ ফিলিস্তিন, সিরিয়া তো এখনো জ্বলছে৷ ঈমানদার নারী, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সবাই তাদের টার্গেট৷ বাদশাহ যু-নাওয়াসের আগুন থেকে এই আগুনের ভয়াবহতা কি কম? বরং আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ভয়াবহতা আগের যুগের অগ্নিকুণ্ডের চাইতে অনেক বেশি৷ ধ্বংসক্ষমতা অনেক তীব্র৷

তারপর আল্লাহ তাআলা সে সমস্ত মানুষকে সতর্ক করলেন যে, যারা মুমিন নারী-পুরুষদের নির্যাতন-নিপীড়নে অতিষ্ঠ করেছে, তারপর তাওবা করে নি, তাদের জন্যে আছে জাহান্নামের শাস্তি, আর আছে দহন যন্ত্রণা৷ (১০)
সুরার শেষের দিকে আল্লাহ তাআলার কুদরত ও কঠিন পাকড়াওয়ের কথা এসেছে- “তোমার পালনকর্তার পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন৷” ফেরাউন ও সামুদের পরিণতি যার জ্বলন্ত প্রমাণ৷

৯. সুরা তারিক মক্কায় অবতীর্ণ সুরা৷ এতে ১৭ টি আয়াত রয়েছে৷ সুরার শুরুতে আল্লাহ তাআলা আসমানের এবং উজ্জ্বল নক্ষত্রের কসম করে বলেন: প্রত্যেক মানুষের উপর একজন তত্বাবধায়ক রয়েছে৷ যিনি আল্লাহর ইচ্ছায় তার হেফাজতের দায়িত্বও পালন করেন৷ এরপর আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করার পর বলেন, কিয়ামতের দিন যখন মানুষ আল্লাহ তাআলার আদালতে দাঁড়াবে, তখন গোপন সবকিছু বেরিয়ে আসবে৷ সুরার শেষের দিকে কুরআনের সত্যতা প্রমাণে আল্লাহ তাআলা আসমান-যমীনের শপথ করলেন৷ তারপর কাফিরদের চক্রান্তের অসারতার কথা তুলে ধরলেন৷

১০. সুরা আ’লা মক্কায় অবতীর্ণ সুরা৷ এতে ১৯ টি আয়াত রয়েছে৷ সুরার শুরুর দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহান আল্লাহর তাসবীহ ও পবিত্রতা বর্ণনা করার হুকুম দেয়া হয়েছে৷ তিনি সৃষ্টি করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন৷ যিনি সবকিছু সুপরিমিত করেছেন ও ঈমানের পথ দেখিয়েছেন৷ এই সুরায় কুরআনের আলোচনা হওয়ার পর তা মুখস্থকরণ সহজ হওয়ার বিষয়ে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে৷ (৬)
তারপর বলা হয়েছে, আপনি মানুষের ইসলাহ ও আখলাক গঠনে কুরআনে কারীমের দ্বারা নসিহত ও উপদেশ প্রদান করুন৷

সুরার শেষের দিকে বলা হয়েছে, যারা দুনিয়াকে আখেরাতের উপর অগ্রাধিকার দিবে না, তারা কামিয়াব এবং সফল হয়ে গেছে৷

১১. সুরা গাশিয়াহ মক্কায় অবতীর্ণ সুরা৷ এতে ২৬ টি আয়াত৷ গাশিয়াহ হলো কিয়ামতের আরেক নাম৷ অর্থাৎ আচ্ছন্নকারী৷ কেননা কিয়ামতের ভয়াবহতা সবকিছুকে ঢেকে দিবে৷ অনেক চেহারা সেদিন লাঞ্ছিত হবে৷ ক্লান্ত-শ্রান্ত হবে৷ তারা সে সমস্ত ইবাদতগুজার লোক হবে, যারা অনেক কষ্ট ও সাধনা করে ইবাদত করেছে, কিন্তু তাদের আকিদা সহীহ না থাকার কারণে তাদের কষ্টের ইবাদত বিফলে যাবে৷ কোনো কাজে আসবে না৷ তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে৷ অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে সজীব৷ তাদের ইবাদত ও সাধনায় বাতিল আকিদার সংমিশ্রণ ছিলো না৷ তাদের ঠিকানা হবে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম৷

এই সুরায় কিয়ামতে অবিশ্বাসী ও হঠকারীদের পথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহ তাআলা তাঁর কুদরতের কয়েকটি নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার কথা বলেছেন৷ এরমধ্যে উট অন্যতম, যাতে মরু জাহাজ বলা হয়৷ উপরের আকাশ যা কোনো খুঁটি ছাড়াই স্থির রয়েছে৷ নিচে ভূপৃষ্ঠ যা চলাচল, ক্ষেত-কৃষি ও ফসলের জন্যে উপযোগী৷ এবং অগ্র-পশ্চাতে সারি সারি পর্বতমালা, যা যমীনের স্থিরতার জন্য পেরেকস্বরূপ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ এরপর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হুকুম দেয়া হয়েছে যে, আপনি উপদেশ প্রদান করুন, এটাই আপনার দায়িত্ব৷ বাকি সব হিসাব-নিকাশ আমার উপর ছেড়ে দিন

Logo-orginal