, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

আনবিটেবল’ মাহমুদুর রহমান” ডঃ তুহিন মালিক,

প্রকাশ: ২০১৮-০৭-২৩ ১২:০৮:৩০ || আপডেট: ২০১৮-০৭-২৩ ১২:০৮:৩০

Spread the love

আনবিটেবল’ মাহমুদুর রহমান” ডঃ তুহিন মালিক,
ডক্টর তুহিন মালিক তার ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, বহু যাতনার পরও আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি। সুস্পষ্ট ভাষায় বলেই গেছেন ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কারণ একজন ভিভিআইপির পুত্র ও উপদেষ্টাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলাম। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। এ লড়াই থামবে না।’  আসলে আদর্শের লড়াই কখনো থামে না। আদর্শের যেমন পরাজয় হয় না, তেমনি আদর্শের কোনো মৃত্যুও নেই। যুগে যুগে অকুতোভয় যোদ্ধারা অপরাজিতই থাকবেন। চিরকালই তারা ’আনবিটেবল’।

ডক্টর তুহিন মালিক এই স্ট্যাটাসের সাথে একটি লিংক শেয়ার করেছেন। সেই লিংকের লেখাটি নীচে দেয়া হলো।

‘আনবিটেবল’ মাহমুদুর রহমান
ডক্টর তুহিন মালিক, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এক. ৭০ মামলায় জামিনের পরও মুক্তি পাননি আমার দেশ পত্রিকার অকুতোভয় সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। সুপ্রিম কোর্টের জামিনের আদেশ কারাগারে পৌঁছার পরও ১২ দিন ধরে সুকৌশলে বেআইনিভাবে আটকে রাখা হয় পিডব্লিউ। ১২ দিন পর যখন পিডব্লিউ আদেশ প্রত্যাহার করা হয়, তখন ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ককটেল মারার এক অদ্ভুত মামলায় নতুন করে তাকে ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। এই মামলায় ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৪৪ জনের নাম রয়েছে আসামির লিস্টে। কিন্তু অভিযোগ দায়েরের তিন বছর পর, দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে সর্বশেষ মামলায় জামিন পাওয়া মাহমুদুর রহমানকে জামিনে মুক্তি দেয়ার বদলে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারেই রেখে দেয়া হলো। অথচ পুরো দেশবাসী সাক্ষী যে, তিনি সেই সময় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা অফিসেই অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘কোনো অপরাধে দায়ের হওয়া মামলায় জড়িত থাকতে পারে, এমন সন্দেহে কাউকে শ্যোন অ্যারেস্ট করা যাবে না।’ অথচ তার এই নির্দেশের পাঁচ দিনের মাথায় শ্যোন অ্যারেস্ট করে গ্রেফতার দেখানো হলো মাহমুদুর রহমানকে। তার অপরাধ, তার সত্য-বলিষ্ঠ লেখনী, তার সাহসী সংবাদ, তার সততা ও বলিষ্ঠতা। আর এ কারণেই পুরো সরকার তার মসনদসহ ভীত পর্যুদস্ত হয়ে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড দমননীতি চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই ঈমানি শক্তিতে বলীয়ান এই মানুষটিই আজ এ দেশে সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার। দুদকের মামলায় তার বিরুদ্ধে কোনো একটা অভিযোগই প্রমাণ করা গেল না আদালতে। অথচ নোটিশ গ্রহণ না করার তুচ্ছ অভিযোগে তিন বছরের জেল দেয়া হলো তাকে। সরকারের নৈতিক স্খলনের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই সম্পাদককে যুক্তি-তর্ক-প্রমাণ দিয়ে সাজা দিতে না পারলেও তার ভাগ্যে জুটেছে আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড। হাস্যকর সব ‘যুক্তি’ দেখিয়ে অসংখ্য মিথ্যা মামলায় তাকে পরাজিত করেও যেন শান্তি পাচ্ছে না সরকার। মামলায় পরাজিত করতে পারলেও, তার আদর্শকে পরাজিত করতে পারছে না। আর এই না পারাটাই যে তাদের সবচেয়ে বড় পরাজয়, সেটা নতুন করে আবার এই ককটেল মামলা দিয়ে প্রমাণ করা হলো।

দুই. ক্ষমতাসীনের কাছে মাহমুদুর রহমান যে কতটা আতঙ্কের নাম এর প্রমাণ হচ্ছে, ১২০ দিন ধরে নিজ পত্রিকা অফিসে অবরুদ্ধ অবস্থায় এই মানুষটির বিরুদ্ধে ককটেল মারার হাস্যকর অভিযোগ আনা হলো। স্কাইপ কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা করা হয়। কিন্তু মামলার পর থেকেই মন্ত্রীদের ক্রমাগত হুমকিতে তিনি বুঝে যান তাকে হয়তো গুম করা হতে পারে। সে কারণেই তিনি চার মাস ধরে তার পত্রিকার অফিসে স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ ছিলেন। আর এই অবরুদ্ধ অবস্থাতেই ডিবি পুলিশ ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল কাওরানবাজার অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করে। অথচ এখন নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ককটেল মামলার রিমান্ড আবেদনে পুলিশ উল্লেখ করেছে, ‘ঘটনার সময়- ২৮ জানুয়ারি ২০১৩ সকাল আনুমানিক ৮টা ৩০ মিনিট, ঘটনাস্থল- শাহবাগ, মামলা নং ৫০(১) ২০১৩। এজাহারভুক্ত সর্বমোট আসামির সংখ্যা ৪৪ জন।’ এখানে মাহমুদুর রহমানের কোনো নাম নেই। তার মানে সরকার কতটা দুর্বল, ভীত ও হতাশাগ্রস্ত হলে পুরো দেশবাসীর সামনে নিজ কার্যালয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অবরুদ্ধ একজন মানুষকে এহেন হাস্যকর ঘটনায় অভিযুক্ত করা যেতে পারে! মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের একের পর এক মামলা দেয়া হয়তো এক দিন শেষ হবে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সরকারের আক্রোশের সীমা কি শেষ হবে কখনো? 

তিন. মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আক্রোশের কারণ কী? তিনি ফাঁসকৃত স্কাইপ কথোপকথন পত্রিকায় ছাপিয়েছেন। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল তার পত্রিকায় শিরোনাম করে ছাপিয়েছেন ‘উইকিলিকসে শেখ মুজিবের শাসনকাল’। ১৮ ফেব্রুয়ারির আমার দেশের শিরোনাম ‘ভয়ঙ্কর ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারচক্র’। আর তার অপরাধ কি এটা যে, তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, নাস্তিকদের বিরুদ্ধে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে কলম ধরেছেন। অথচ সেদিন পুরো পত্রিকা অফিস ঘেরাও-ভাঙচুর-মারধর করে স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা ছাড়াও অন্য দু’টি মামলায় ভাঙচুর, পুলিশকে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু এর আগেই বিশ্বখ্যাত ইকোনমিস্ট পত্রিকায় ছাপা হয় স্কাইপ কেলেঙ্কারির সব কথোপকথন। আর মাহমুদুর রহমান ইকোনমিস্টের লেখাগুলোই তার পত্রিকায় ছাপিয়েছেন। একই কাজ তখন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকা এবং একাত্তর টেলিভিশনও করেছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। তাদের প্রকাশনা বা সম্প্রচারও বন্ধ করা হয়নি। তাদের অফিসও সিলগালা করা হয়নি। অন্য দিকে পুলিশকে হত্যাচেষ্টা কিংবা গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগের ঘটনার সময় তো তিনি কার্যালয়ের ভেতরেই অবরুদ্ধ ছিলেন। যারা স্কাইপ কেলেঙ্কারি করলেন, তারা সম্মানিত হলেন। আর যিনি অপকর্ম শনাক্ত করলেন, তিনি হয়ে গেলেন অপরাধী!

চার. দৃঢ়চেতা সাহসী এই মানুষটি রিমান্ডে অসুস্থ হয়ে পড়লে অসুস্থ অবস্থাতেই আমরণ অনশন শুরু করে বলেন, ‘রাষ্ট্রের নিপীড়ন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে আমার এই অনশন গণতান্ত্রিক লড়াই। জুলুমের বিরুদ্ধে আদর্শিক এবং যার যার ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গা থেকে লড়াই সংগ্রাম চালানো ন্যায়সঙ্গত। যেহেতু আমি বন্দী এবং রিমান্ডে রয়েছি, সেহেতু আমার প্রতিবাদের সর্বোচ্চ শক্তি হিসেবে অনশন করছি।’ ১০৫৫ দিন ধরে নির্মম নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে শৃঙ্খলিত মাহমুদুর রহমান শরীরের ওজন হারিয়ে জীর্ণ দেহে আজো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। বহুবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কারাগারে। সুচিকিৎসা মেলেনি কখনো। শারীরিক দুর্বলতাকে মনের শক্তি দিয়ে জয় করেই তিনি ইস্পাতের মতো শক্ত। বহু যাতনার পরও আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি।

সুস্পষ্ট ভাষায় বলেই গেছেন ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কারণ একজন ভিভিআইপির পুত্র ও উপদেষ্টাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলাম। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। এ লড়াই থামবে না।’ আসলে আদর্শের লড়াই কখনো থামে না। আদর্শের যেমন পরাজয় হয় না, তেমনি আদর্শের কোনো মৃত্যুও নেই। প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ গত পরশু প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে বললেন, ‘মাহমুদুর রহমানকে এভাবে আর নির্যাতন না করে বরং ফাঁসি দিয়ে দিন’। কিন্তু মাহমুদুর রহমানদের ফাঁসি দিলে কিংবা তারা কারাগারে মারা গেলেও কি প্রতিপক্ষ জয়ী হবে? মিথ্যা মামলায় পরাজিত করতে পারলেও কি মাহমুদুর রহমানদের আদর্শকে পরাজিত করতে পারবে? যুগে যুগে অকুতোভয় যোদ্ধারা অপরাজিতই থাকবেন। চিরকালই তারা ’আনবিটেবল’।

লেখক : সুপ্রিম কোর্টের আইনজ্ঞ ও সংবিধানবিশেষজ্ঞ
ই-মেইল : drtuhinmalik@hotmail.com

Logo-orginal