, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

এখনও আসছে রোহিঙ্গাদের ঢল

প্রকাশ: ২০১৮-০৮-২৪ ০১:০২:৩৯ || আপডেট: ২০১৮-০৮-২৪ ০১:০২:৩৯

Spread the love

এখনও আসছে রোহিঙ্গাদের ঢলমিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া শরণার্থী সংকটের সূচনা হওয়ার পর প্রায় এক বছর হতে চললেও রোহিঙ্গাদের পালিয়ে বাংলাদেশে আসা বন্ধ হয়নি।

দুই মাস আগেও হামিদা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারী তার স্বামী আর দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্পে। রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, পালিয়ে আসার আগের আতঙ্ক জাগানো দিনগুলোর অভিজ্ঞতার কথা।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সীমান্তের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ভয়ে কয়েক সপ্তাহ নিজেদের ঘরে ঘুমাতে পারেননি হামিদার স্বামী। গ্রেপ্তার আতঙ্কে কোনো কোনো রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও তাকে রাত কাটাতে হয়েছে উঁচু গাছের ডালে।

১৮ বছর বয়সী হামিদার দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলের বয়স দুই বছর; আর মেয়ের বয়স মাত্র তিন মাস। বালুখালীতে তাদের আশ্রয় হয়েছে বাঁশের তৈরি ঝুপড়ি ঘরে। বলা হচ্ছে, এটাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।

গত বছর ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযান শুরুর পর দলে দলে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দিয়ে তাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ সরকার।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে মিয়ানমারের সৈন্যদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে হত্যা, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠে আসে। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা একে জাতিগত দমন অভিযান হিসেবে বর্ণনা করে আসছেন।

গত এক বছরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা সাত লাখ ছাড়িয়েছে। আরও চার লাখের মত রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে কয়েক দশক ধরে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে মিয়ানমার সরকার নতুন আসা শরণার্থীদের ফেরত নিতে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও তাতে কোনো অগ্রগতি নেই। বরং রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় হামিদার মত আরও অনেকে এখনও নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে আসছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স।

পশ্চিমা মিত্ররা একসময় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে দেশটির ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ হিসেবে বিবেচনা করলেও রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা নিপীড়েন বন্ধে উদ্যোগী না হওয়ায় শান্তিতে নোবেলজয়ী এই নেত্রীকে বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হতে হয়েছে। সেই সঙ্গে নানামুখী আন্তর্জাতিক চাপ সামলাতে হচ্ছে তার সরকারকে।

রাখাইনে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাওপোড়াওয়ের যেসব অভিযোগ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এসেছে, তার বেশিরভাগই অস্বীকার করে আসছেন সু চি।

বাংলাদেশকে উল্টো চাপে রাখার কৌশল নিয়ে গত মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে এক বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার বিষয়টি বাংলাদেশের ওপরই নির্ভর করছে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে ১৩ হাজারের মত রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছেন কক্সবাজারে। এর মধ্যে চলতি অগাস্টেই এসেছে অন্তত দেড়শ রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে ছয়জনের সঙ্গে কথা বলে রাখাইনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছে রয়টার্স।

এই রোহিঙ্গারা বলেছেন, গতবছর অগাস্ট- সেপ্টেম্বরে অধিকাংশ মানুষ পালিয়ে যাওয়ার পর মাসের পর মাস শূন্য গ্রামে জীবন সংগ্রাম চালাতে হয়েছে তাদের।

তাদের কেউ কেউ নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন আর গ্রেপ্তারের ভয়ে শেষ পর্যন্ত বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আবার কেউ কেউ দীর্ঘদিন ঘর থেকে বের হতে পারেননি; কৃষিকাজ আর মাছ ধরা বন্ধ থাকায় থাকতে হয়েছে অনাহারে।

হামিদা রয়টার্সকে বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামে এখন আলো জ্বালানোরও উপায় নেই। রাতে বাচ্চারা কাঁদলে আমি মোমবাতি পর্যন্ত জ্বালাতে পারতাম না। পুরোপুরি ব্ল্যাকআউট। আলো দেখলেই সেনাবাহিনী আসে, ধরে নিয়ে যায়।

একই ধরনের তথ্য পাওয়ার কথা বলেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ক্যারোলিন গ্লুকও।

নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বরাতে তিনি রয়টার্সকে বলেন, মানুষ আমাদের বলছে, তাদের সেখানে দিন কেটেছে কারাবন্দির মত। কারফিউ এতটাই কড়া যে তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি, মাছ ধরতে যেতে পারেনি। আলো জ্বালার অনুমতি ছিল কেবল নির্দিষ্ট একটা সময়।

গত সপ্তাহে ইউএনএইচসিআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এখনও যারা মিয়ানমারে রয়ে গেছেন, তারাও বাংলাদেশে চলে আসার পরিকল্পনা করছেন।

হামিদা রয়টার্সকে বলেন, গতবছর অগাস্টের আগে উত্তর রাখাইনে তাদের গ্রামের জনসংখ্যা ছিল পাঁচ হাজারের মত। আর দুই মাস আগে যখন তিনি গ্রাম ছেড়ে আসেন, তখন পুরো এলাকা যেন বিরানভূমি; লোক ছিল মাত্র একশর মত।

রয়টার্স লিখেছে, হামিদার বক্তব্য তারা নিজেরা যাচাই করতে পারেনি। তবে বালুখালিতে তার আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরাও একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন।

হামিদা বলেন, গতবছর যখন গ্রামের সবাই বাংলাদেশে চলে আসতে শুরু করল, তখন পথের খরচ জোগাড় করতে না পারায় তার পরিবারকে থেকে যেতে হয়। অভিযানের প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পরও সেনাবাহিনী নিয়মিত তাদের গ্রামে টহলে যেত, কখনও কখনও রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে যেত, কাউকে আবার বিনা পারিশ্রমিকে সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণের কাজে শ্রম দিতে বাধ্য করা হত।

রাখাইনে যে নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা থেকে গতবছর সংঘাতের সূচনা হয়েছিল, তা যে এখনও মেটেনি- তা স্বীকার করেছেন মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন এনএলডির মুখপাত্র মিও নায়ান্ট।

তিনি রয়টার্সকে বলেন, গত এক বছরে সেখানকার পরিস্থিতি বদলায়নি। অবস্থার উন্নতি হতে, সম্প্রীতি ফিরতে অনেক সময় লাগবে।সুত্রঃ বিডিনিউজ২৪।

Logo-orginal