, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

জিলকদ মাসের প্রথম ১০ দিনের গুরুত্ব

প্রকাশ: ২০১৮-০৮-১১ ১৫:২৭:০২ || আপডেট: ২০১৮-০৮-১১ ১৫:২৭:০২

Spread the love

জিলকদ মাসের প্রথম ১০ দিনের গুরুত্ব
জিলকদ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলতঃ-

১. আল্লাহ তা‌’আলা বলেন :
﴿ وَالْفَجْرِ، وَلَيَالٍ عَشْرٍ ﴾ [الفجر:1-2]
কসম ভোরবেলার। কসম দশ রাতের। (সূরা ফাজর : ১-২) ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : এর দ্বারা উদ্দেশ্য জিলহজ মাসের দশ দিন।
২. আল্লাহ তা‌আলা বলেন :
﴿ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَّعْلُومَاتٍ ﴾ [الحج:28]
তারা যেন নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করে। (হজ : ২৮) ইবনে আব্বাস বলেছেন : অর্থাৎ জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন।
৩. ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ দিনগুলোর তুলনায় কোনো আমল-ই অন্য কোন সময় উত্তম নয় । তারা বলল : জিহাদও না ? তিনি বললেন : জিহাদও না, তবে যে ব্যক্তি নিজের জানের শঙ্কা ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে, অতঃপর কিছু নিয়েই ফিরে আসেনি। (বুখারী)
৪. ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট কোন দিন প্রিয় নয়, আর না তাতে আমল করা, এ দশ দিনের তুলনায়। সুতরাং তাতে তোমরা বেশী করে তাহলীল, তাকবীর ও তাহমীদ পাঠ কর। (তাবারানী ফীল মুজামিল কাবীর)
৫. সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাহিমাহুল্লাহর অভ্যাস ছিল, যিনি পূর্বে বর্ণিত ইবনে আব্বাসের হাদীস বর্ণনা করেছেন : যখন জিলহজ মাসের দশ দিন প্রবেশ করত, তখন তিনি খুব মুজাহাদা করতেন, যেন তার উপর তিনি শক্তি হারিয়ে ফেলবেন। (দারামী, হাসান সনদে)
৬. ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : জিলহজ মাসের দশ দিনের ফযীলতের তাৎপর্যের ক্ষেত্রে যা স্পষ্ট, তা হচ্ছে এখানে মূল ইবাদাতগুলোর সমন্বয় ঘটেছে। অর্থাৎ সালাত, সিয়াম, সাদকা ও হজ, যা অন্যান্য সময় আদায় করা হয় না। (ফাতহুল বারী)
৭. উলামায়ে কেরাম বলেছেন : জিলহজ মাসের দশদিন সর্বোত্তম দিন, আর রমযান মাসের দশ রাত, সব চেয়ে উত্তম রাত।

এ দিনগুলোতে যেসব আমল করা মুস্তাহাব :
১. সালাত : ফরয সালাতগুলো দ্রুত সম্পাদন করা, বেশী বেশী নফল আদায় করা। যেহেতু এগুলোই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার সর্বোত্তম মাধ্যম। সাওবান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শোনেছি : তুমি বেশী বেশী সেজদা কর, কারণ তুমি এমন কোন সেজদা কর না, যার কারণে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন না এবং তোমরা গুনা ক্ষমা করেন না। (মুসলি) এটা সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য।
২. সিয়াম : যেহেতু অন্যান্য নেক আমলের মধ্যে সিয়ামও অন্যতম, তাই এ দিনগুলোতে খুব যত্নের সাথে সিয়াম পালন করা। হুনাইদা বিন খালেদ তার স্ত্রী থেকে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জনৈক স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিলহজ মাসের নয় তারিখ, আশুরার দিন ও প্রত্যেক মাসের তিন দিন রোজা পালন করতেন। (ইমাম আহমদ. আবূদাউদ ও নাসায়ী) ইমাম নববী জিলহজ মাসের শেষ দশ দিনের ব্যাপারে বলেছেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব।

৩. তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ : পূর্বে ইবনে ওমরের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : তাতে রয়েছে, তোমরা বেশী বেশী তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ পড়। ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ইবনে ওমর ও আবূহুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহুমা এ দশ দিন তাকবীর বলতে বলতে বাজারের জন্য বের হতেন, মানুষরাও তাদের দেখে দেখে তাকবীর বলত। তিনি আরো বলেছেন, ইবনে ওমর মিনায় তার তাবুতে তাকবীর বলতেন, মসজিদের লোকেরা তা শুনত, অতঃপর তারা তাকবীর বলত এবং বাজারের লোকেরাও, এক পর্যায়ে পুরো মিনা তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠত।
ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু এ দিনগুলোতে মিনায় তাকবীর বলতেন, প্রত্যেক সালাতের পর, বিছানায়, তাঁবুতে, মজলিসে ও চলার পথে। স্বশব্দে তাকবীর বলা মুস্তাহাব। যেহেতু ওমর, ইবনে ওমর ও আবূহুরায়রা স্বব্দে তাকবীর বলেছেন।
মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত, এ সুন্নতগুলো জীবিত করা, যা বর্তমান যুগে প্রায় পরিত্যক্ত এবং ভুলে যাওয়ার উমক্রম হয়েছে, এমনকি নেককার লোকদের থেকেও, অথচ আমাদের পূর্বপুরুষগণ এমন ছিলেন না।
৪. আরাফার দিন রোজা : হাজী ছাড়া অন্যদের জন্য আরাফার দিনের রোজা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে বলেছেন : আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, ইহা পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছরের গুনার কাফ্ফারা হবে। (মুসলিম)
৫. নহরের দিন তথা দশই জিলহজের ফযীলত : এ দিনগুলোর ব্যাপারে অনেক মুসলমানই গাফেল, অথচ অনেক আলেমদের নিকট নিঃশর্তভাবে এ দিনগুলো উত্তম, এমনকি আরাফার দিন থেকেও। ইবনুল কাইয়ূম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন, নহরের দিন। আর তাই হজ্জে আকবারের দিন। যেমন সুনানে আবূদাউদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় দিন হলো নহরের দিন, অতঃপর মিনায় অবস্থানের দিন। অর্থাৎ এগারোতম দিন। কেউ কেউ বলেছেন : আরাফার দিন তার থেকে উত্তম। কারণ, সে দিনের সিয়াম দুই বছরের গুনার কাফ্ফারা। আল্লাহ আরাফার দিন যে পরিমাণ লোক জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন, তা অন্য কোন দিন করেন না। আরো এ জন্যও যে, আল্লাহ তাআলা সে দিন বান্দার নিকটবর্তী হন এবং আরাফায় অবস্থানকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন। তবে প্রথম বক্তব্যই সঠিক : কারণ, হাদীস তারই প্রমাণ বহন করে, এর বিরোধী কিছু নেই। যাই হোক, উত্তম হয় আরাফার দিন নয় মিনার দিন, হাজী বা বাড়িতে অবস্থানকারী সবার উচিত সে দিনের ফযীলত অর্জন করা এবং তার মুর্হূতগুলো থেকে উপকৃত হওয়া।

ইবাদাতের মৌসুমগুলো আমরা কিভাবে গ্রহণ করব ?
প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য ইবাদাতের মৌসুমগুলোতে বেশী বেশী তাওবা করা। গুনা ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা। কারণ, গুনা মানুষকে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রাখে। গুনা ব্যক্তির অন্তর ও আল্লাহর মাঝে বাঁধার সৃষ্টি করে। বান্দার আরো উচিত কল্যাণকর ও শুভদিনগুলোতে এমন সব আমল ও কাজে নিয়োজিত থাকা, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ। যে আল্লাহর সাথে সত্যতার প্রমাণ দেবে আল্লাহও তার সাথে তাঁর ওয়াদা বাস্তবায়ন করবেন। তিনি বলেন :
﴿ وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ﴾ [العنكبوت:69]
আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্ট চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। (আনকাবূত : ৬৯)
তিনি অন্যত্র বলেন :
﴿ وَسَارِعُواْ إِلَى مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ ﴾ [آل عمران:133].
আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাঘফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। (আলে-ইমরান : ১৩৩)

হে মুসলিম ভাই, এ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর জন্য সজাগ থাক, তার প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ রাখ, তা যেন কোনভাবেই তোমার থেকে অবহেলায় অতিবাহিত না হয়। ফলে তুমি লজ্জিত হবে, কিন্তু তোমার লজ্জা সেদিন কোন কাজে আসবে না। কারণ, দুনিয়া ছায়ার ন্যায়। আজকে আমরা কর্মস্থলে অবস্থান করছি আগামিকাল অবস্থান করব প্রতিদান ও হিসাব-নিকাশের দিবসে, জান্নাত কিংবা জাহান্নামে। তুমি তাদের মত হও, এ আয়াতে আল্লাহ যাদের উল্লখ করেছেন :
﴿ إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَباً وَرَهَباً وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ ﴾ [الأنبياء:90].
তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত। আর আমাকে আশা ও ভীতি সহকারে ডাকত। আর তারা ছিল আমার নিটক বিনয়ী। (আম্বিয়া : ৯০)

আল্লাহ সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন আমিন!
#সংগৃহীত।

Logo-orginal