, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin admin

“অবহেলা” আবদুল্লাহ আল মামুন

প্রকাশ: ২০১৮-০৯-০২ ২২:০১:৫৪ || আপডেট: ২০১৮-০৯-০২ ২২:০১:৫৪

Spread the love

অবহেলা  আবদুল্লাহ আল মামুনআরটিএমনিউজ২৪ডটকমঃ’অবহেলা’ এটি কোন একটি সাধারণ শব্দ নয়। অবহেলা একটি সামাজিক ব্যাধিও বটে। পৃথিবীতে যত অন্যায় কিংবা অনৈতিক কাজ আছে, তার পিছনে “অবহেলা” প্রত্যয়টি অতোপ্রতভাবে জড়িত। আমি মনে করি পৃথিবীর যত অন্যায় কাজের কারণ আছে তারমধ্যে “অবহেলা” নামক প্রত্যয়টি যুক্ত করতে হবে, স্থান দিতে হবে অন্যতম কারন হিসেবেও।

একজন মানুষ খারাপ হওয়ার পিছনে হয়ত পারিবারিক অবহেলা নয়ত সামাজিক অবহেলা নতুবা রাষ্ট্রীয় অবহেলা বিদ্যমান। যা আপনি নিরপেক্ষ চিন্তাভাবনায় খুজে পাবেন। একজন মানুষ এমনে এমনে অপরাধী হয়না, যার পিছনে দায়ী থাকে পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রীয় “অবহেলা” নামক শব্দটি।

আপনারা হয়ত ভাবতেছেন, আমি অপরাধ নামক শব্দটির পিছনে “অবহেলা” নামক শব্দটি কেন যুক্ত করলাম? তার কয়েকটি উদাহারণ আমি যুক্তিতে প্রমাণ করার চেষ্টা করব।
★কিশোর অপরাধ:
বর্তমান আধুনিকতার যুগে কিশোর অপরাধ নামক শব্দটি খুব বেশি শুনা যাই। কিশোর অপরাধ শব্দটি নৃশংস অপরাধে সামিল হয়েছে। বর্তমানে মাদক পাচার, ইভটিজিং এমনকি হত্যার মত জঘন্য কাজেও কিশোর শব্দটি জড়িত। একজন কিশোর অন্য আরেকজন কিশোরকে খুব নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে, এমন নিউজও আজ-কাল সংবাদ পত্রে পাওয়া যাই। যা বর্তমান সময়ের সুনাগরিক সমাজকে ভাবিয়ে তুলে। আমার মতে এ কিশোর অপরাধ নামক শব্দটির পিছনে অন্যতম প্রধান কারন “অবহেলা”।

কিশোর অপরাধের অপরাধীদের মধ্যে একটি অংশ হল পথশিশুরা। এই পথশিশুরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলার স্বীকার। এই পথশিশুরা অন্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নামক মৌলিক অধিকার বঞ্চিত। দিনদিন এই বঞ্চিত নামক অবহেলার স্বীকার হয়েই একসময় অপরাধ জগতে ঢুকে পড়ে। তারপর শুরু হয় চুরি, ডাকাতি, হত্যা, মাদক পাচার ইত্যাদি জঘন্য তম কাজ। তারা যদি তাদের মৌলিক অধিকারগুলো পেত, তাহলে তারা হয়ত গড়ে উঠত একজন সুনাগরিক হিসেবে।

এছাড়া বর্তমানে কিশোর অপরাধের আরেকটি অংশ দেখা যাই, যারা মৌলিক অধিকার গুলো প্রাপ্ত। যাদের বেড়ে উঠা তথাকথিত আধুনিক পরিবারগুলোতে। তারা তাদের মৌলিক অধিকার গুলো পেলেও পারিবারিক অবহেলা নামক শব্দটির সাথে জড়িত। আধুনিক পরিবারগুলোতে দেখা যাই, বেশিরভাগ সন্তান বেড়ে উঠে চাইল্ড কেয়ার কিংবা কাজের বুয়ার আদর স্নেহ পেয়ে। এরা বাবা মায়ের আদর স্নেহ, পারিবারিক মায়া মমতা নামক শব্দটি থেকে বঞ্চিত। যার কারণে বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশেও বয়স্ক কেন্দ্র নামক প্রতিষ্ঠান দেখা যাই। আধুনিক পরিবারের সন্তানরা মা-বাবার অবহেলার স্বীকার হয়ে নিজের একাকিত্বে এক সময় মাদকসেবন থেকে শুরু করে অপরাধ জগতের বিভিন্ন স্তরে ঢুকে পড়ে। যার পিছনে পারিবারিক অবহেলা নামক প্রত্যয়টি জড়িত।
★মাদক পাচার:
মাদক পাচার কাজে যারা জড়িত থাকে তাদের অধিকাংশ পরিবার জানেনা যে, তার সন্তান মাদক পাচার কাজে জড়িত। যখন সন্তান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকে পড়ে কিংবা সম্পূর্ণরূপে নিজেকে মাদক পাচার কাজে জড়িয়ে নেই, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তখন তার পরিবার জানতে পারে। পরিবার কিংবা সমাজ যদি সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কার সাথে বন্ধুত্ব করছে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আগে থেকে খুজ নিত তাহলে সন্তান এসব বেআইনি কাজে লিপ্ত থাকা সম্ভব হত না। এতে অপরাধ অনেকাংশে কমে যেত। সমাজ এবং পরিবারের দায়িত্বহীনতার অবেহেলায় আজ সন্তান অপরাধ জগতের বাসিন্দা।

★জঙ্গিবাদ:
জঙ্গিবাদ নামক প্রত্যয়টি আজ কমবেশি সবার জানা। জঙ্গিবাদের সাথে যারা যুক্ত হচ্ছে তার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হল পারিবারিক অবহেলা। জঙ্গিবাদ নিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আলোচনায় আজ কথাটি বেরিয়ে এসেছে। একজন মানুষ পারিবারিক অবহেলার স্বীকার হয়ে একাকিত্বে ভুগলেই জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদেরকে গ্রাস করে। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা বুঝিয়ে মানুষদের জঙ্গিবাদের দিখে ঠেলে দেই। পারিবারিক অবহেলা না থাকলে হয়ত মানুষটি জঙ্গিবাদের অন্ধকার জগতে না গিয়ে প্রভাতের সূর্যের আলোর মত আলোকিত হতো।

সাম্প্রতিক সময়ের উপরোল্লিখিত তিনটি অপরাধ বিবেচনা করলে দেখা যাই যে, অবহেলা নামক প্রত্যয়টি অপরাধীকে অপরাধী হওয়ার পিছনের অন্যতম কারন। আমরা যদি আমাদের পরিবার কিংবা সমাজের সদস্যদের অবহেলা না করি, তাহলে তারা অপরাধী হওয়া থেকে অনেকাংশে হ্রাস পাবে। অপরাধী উপাধি প্রাপ্ত মানুষের সংখ্য কমে যাবে। এতে সমাজে ন্যায় নামক প্রত্যয়টি প্রতিষ্ঠা হওয়ার সুযোগ পাবে। যা পৃথিবী নামক গ্রহের শ্রেষ্ঠ জীবদের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা।

লেখক: আবদুল্লাহ আল মামুন, তরুন সংগঠক ও সমাজকর্মী, শিক্ষার্থী কক্সবাজার সিটি কলেজ।

Logo-orginal