admin
প্রকাশ: ২০১৮-১০-২৩ ১০:৫২:১৮ || আপডেট: ২০১৮-১০-২৩ ১০:৫২:১৮
বিক্রির সময় একটি চক্রের কাছ থেকে হাতে-নাতে উদ্ধার করা ঠিকানাবিহীন শিশু হিমালয়ের স্থান বদলেছে। তবে স্থায়ী কোন ঠিকানা মেলেনি এখনো। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিওনাটাল (নবজাতক) ওয়ার্ড থেকে গত ১৭ অক্টোবর নগরীর রৌফাবাদের ছোটমনি নিবাসে শিশুটিকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্থান বদলের আগে দীর্ঘ দশমাস ধরে হাসপাতালের ওয়ার্ডেই বেড়ে উঠছিল শিশুটি। সুস্থ শিশুকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে রাখা ঠিক হচ্ছে না মর্মে আদালতকে জানানোর পর আদালত সমপ্রতি শিশুটিকে সমাজ সেবা অধিদফতরের অধীন ছোটমনি নিবাসে হস্তান্তরের আদেশ দেয়। এরপর শিশুটিকে সেখানে হস্তান্তর করা হয় বলে নিশ্চিত করেন চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি। ছোটমনি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক নুরুন নাহার জান্নাতি শিশুটিকে গ্রহণ করেন।
হাসপাতালের সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা অভিজিৎ সাহা এবং নবজাতক ওয়ার্ডের চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারিদের উপস্থিতিতে শিশুটি হস্তান্তরের সময় বেদনাঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রায় দশমাস ধরে তাদের আদর-যত্নেই বেড়ে উঠছিল শিশুটি। আর শিশুটির সার্বিক পরিচর্যা বাবদ সবধরণের সহায়তা করেছে চমেক হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতি। সমিতির সদস্য সচিব ও সমাজসেবা কর্মকর্তা অভিজিৎ সাহা বলেন, একটি সুস্থ শিশুকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে রাখলে শিশুটির স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে ছোটমনি নিবাসে শিশুটিকে হস্তান্তরে আদালতে আবেদন জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে শিশুটিকে ছোটমনি নিবাসে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন আরো অনেক শিশুর মাঝে শিশুটি বেড়ে উঠার পরিবেশ পাবে।
এদিকে, শিশুটিকে উদ্ধার করার সময় তিনজনকে আটক করা হলেও তাদের কাছ থেকে তেমন কোন তথ্য বের করতে পারেনি পুলিশ। ফলে শিশুটির মা-বাবা কিংবা কোন ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। একটি পরিবার শিশুটিকে নিজেদের
সন্তান দাবি করে আদালতে আবেদন করে। এর সত্যতা নিশ্চিতে ডিএনএ টেস্ট করার আদেশ দেয় আদালত। তবে টেস্টে ওই পরিবারের দাবির সত্যতা মেলেনি।
আর একজন নার্সসহ একাধিক দম্পতি শিশুটিকে দত্তক পেতে আদালতে আবেদন জানালেও এখনো পর্যন্ত কোন পরিবারে শিশুটিকে দেয়নি আদালত। ফলে স্থায়ী কোন ঠিকানা এখনো পায়নি ঠিকানাবিহীন হিমালয়। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে- শিশু দত্তকের ক্ষেত্রে নিঃসন্তান দম্পতির আবেদন আদালত গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে থাকেন। কিন্তু যে কয়টি পরিবার হিমালয়কে পেতে আবেদন করেছে, তারা কেউ নিঃসন্তান নয়। কোন দম্পতিকে এখনো পর্যন্ত শিশুটি না দেয়ার এটাই অন্যতম কারণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৭ অক্টোবর থেকে শিশুটি রৌফাবাদের ছোটমনি নিবাসে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির উপ-তত্ত্বাবধায়ক নুরুন নাহার জান্নাতি। নিবাসে মোট একশ শিশু থাকার সুবিধা রয়েছে জানিয়ে নুরুন নাহার জান্নাতি বলেন- এতদিন ২৫ জন শিশু ছিল নিবাসে। হিমালয়সহ এখন এ সংখ্যা ২৬ জন। আদালতের পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত শিশুটিকে (হিমালয়) এখানেই রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
নিবাস সূত্রে জানা যায়- সাত বছর বয়স পর্যন্ত ঠিকানাবিহীন শিশুদের এখানে রাখার সুযোগ রয়েছে। এরপর সরকারি শিশু পরিবারে (শিশু সদন) এসব শিশুদের স্থানান্তর করা হয়। যেখানে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত থাকার সুযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য- বিক্রির সময় নগরীর প্রবর্তক মোড় এলাকা থেকে গত ১৬ জানুয়ারি শিশুটিকে উদ্ধার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। উদ্ধারের পর ওই দিন (১৬ জানুয়ারি) রাতেই চমেক হাসপাতালের নবজাতক (নিওনাটাল) ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। ওই সময় শিশুটির বয়স ছিল মাত্র তিন দিন। এরপর সময় গড়িয়েছে আপন নিয়মে। থেমে থাকেনি শিশুটির বয়সও। দেখতে-দেখতে শিশুটির বয়স এখন দশ মাস পেরিয়ে গেছে। নবজাতক ওয়ার্ডের চিকিৎসক-নার্সরা আদর করে শিশুটির নাম রেখেছিলেন হিমালয়। অনেকে হিমেল নামেও ডেকেছেন তাকে।উৎসঃ আজাদী।