, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin admin

★আত্মীয়তার-বন্ধন★ আবদুল্লাহ মামুন

প্রকাশ: ২০১৮-১০-১৩ ২০:৫২:১৯ || আপডেট: ২০১৮-১০-১৩ ২০:৫২:১৯

Spread the love

★আত্মীয়তার-বন্ধন★ আবদুল্লাহ মামুন“আত্মীয়তা” একটি মাত্র শব্দ। অথচ সেই শব্দের প্রতি রয়েছে মানবকুলের অবাধ ভালবাসা। সামাজিকতার এসময়ে আত্মীয়তা শব্দটি ভুলা কিংবা অস্বীকার করার সুযোগ নাই, নেই কোন সম্ভাবনা। আত্মীয় শব্দটা শুধু ইনসান জগতে নয় বরং এর অস্তিত্ব দেখা যাই ভূপৃষ্টের সর্বত্র সব প্রাণীকূলের মধ্যে। যা চোখ-কান খোলা রাখলে আমরা দেখতে পারি, অনুভব করতে পারি।

সাধারণত আত্মীয়তা বলতে রক্তের সম্পর্কের দ্বারা সৃষ্ট সম্পর্ককে বুঝায়। পৃথিবীতে এই সম্পর্ককে আত্মীয়তা বলে প্রকাশ করে। কিন্তু আমি এই সম্পর্ককে আত্মীয়তা বলা পছন্দ করি না বা করতে চাই না। আমি এ সম্পর্ককে আত্মীয়তা বলে আত্মীয়তা শব্দটিকে নারাজ করতে চাই না।

আমার মতে, মানুষের এই ক্ষুদ্র জীবনে যেই সম্পর্ক মানুষের রোগে, শোকে, অভাবে, বিপদে সর্বসময়ে সহযোগীতা করে,তাই আত্মীয়তা। এই সম্পর্কটা আত্মীয়তা শব্দের পরিশব্দ হিসেবে বেশ মানানসই। রক্তের সম্পর্কের কেউ বাড়িতে এলে পেট ভরে একবেলা খাওয়ানোর নাম আত্মীয়তা নয়। এই ক্ষুদ্র জীবনে বিভিন্ন সময়ে যে কঠিন সমস্যার উদ্ভব হয়, সেই সমস্যা সমাধানে পাশে থেকে যারা শরীর, জ্ঞান, বুদ্ধি, অর্থ নিয়ে সামনে অগ্রসর হয়, তারাই আত্মীয়।

আত্মীয়তার অর্থ আমরা ভুলে গেছি। বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে মানুষ পশুতে পরিনত হয়েছে৷ তাদের মাঝে ভালবাসা, মায়া, মমতা হ্রাস পেয়েছে। তারা আত্মীয়রার মূল অর্থ ভুলতে বসেছে। যাকে সুখের সময়ে সবার আগে কিংবা দুঃখের জীবন যুদ্ধে সবার আগেত দূরের কথা, সবার পিছনেও থাকেনা, তাদের আত্মীয় বলে পরিচয় দিও না। সে বিশ্বাসঘাতক। তার বাড়ির ত্রিসীমানায় ও যেয়ো না। ফাঁকি দিয়ে সে তোমার ঘরে প্রবেশ করে তোমার সুখের অংশীদার হবে। কিন্তু সে ভুলেও তোমার দুঃখের সহ ভাগী হবে না। তাকে আত্মীয় না বলে নাম ধরে ডাকাই তোমার শ্রেয়। যে সুখের মত দুঃখের সময়ও তোমার পাশে এসে সহানুভূতি জানাই, সেই আত্মীয়। তার সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক থাক বা না থাক। তোমার সহোদর ভ্রাতা যদি দুঃখের সময় তোমার বিপদে প্রতিশোধ নিতে চাই, তার সঙ্গে সংশ্রব না রাখাই ভাল। কারণ, সে ভ্রাতা হলেও বেগানা। তার সাথে সম্পর্ক রাখাটাই দুষের।

মহামানব মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি প্রভাতে জাগ্রত হয়ে পাড়া-প্রতিবেশি ও আত্মীয়দের খবর নিত। কই, সে প্রেমত আজ মানুষের মাঝে দেখিনা। তাহলে এখন কেমন আত্মীয়!!
যারা সুখে দুঃখে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে, তারাই আত্মীয়। সে রক্তের সম্পর্কের হোক বা না হোক। যারা স্রষ্টার আনুগত্য লাভে মানুষকে ভালোবেসে সমাজের তরে স্কুল-মাদ্রাসা-হাসপাতাল-রাস্তা নির্মাণ করে, পীড়িত দরিদ্রদের অভাবে নিজ ধন সম্ভার খুলে দেই তারাই পরম আত্মীয়। আত্মীয় শব্দটি জন হাওয়ার্ড, হাজী মহসিন এর মত ব্যক্তিদের পাশেই মানাই। জন হাওয়ার্ড সারা ইউরোপে বিয়াল্লিশ হাজার মাইল পায়ে হেঁটে কারাগার সমূহ পরিদর্শন করেছিল। কই, সে কারাগারে ত তার কোন আত্মীয় ছিল না। তাই ইচ্ছা ছিল কারাগেরর যন্ত্রণাগুলো সবিস্তারে বর্ণনা করে মানুষকে অন্যায় থেকে দূরে রাখা। এটাইত পরম আত্মীয়ের উদাহরণ।

পরিবারের বুড়া বুড়িকে জীবনের শেষ অবস্থায় বয়ষ্ক কেন্দ্রে দেখা যাই। কেন? তাদের কী কোন আত্মীয় নেই? তাদের সব আত্মীয় কি একসাথে মরে গেছে? এমন আত্মীয় ত কারো কাম্য নয়। আত্মীয় হতে হবে Wagram যুদ্ধের সেই বিখ্যাত ডাক্তারের মত, যার নিজের পা গোলার আঘাতে চূর্ণ- বিচূর্ন হওয়ার পরও সামনে থাকা গোলার আঘাতে আহত হওয়া সৈনিককে বাঁচিয়েছিল। নিজে মৃত্যুর পথে দাঁড়িয়ে পরম আত্মীয়ের মত সে আহত সৈনিককে অস্ত্রোপচার করে বাঁচিয়েছিল। আত্মীয়ত এমনই হওয়া চাই।

সত্যিকারের আত্মীয় হবে সে, যে সুখের সময় যেমন পাশে থাকবে, তেমনি দুঃখের সময়ও আপন সর্বোচ্ছ দিয়ে আগলে রাখবে। এমনটাই হওয়া চাই। তাহলে এই পৃথিবী নামক ভূখন্ড আত্মীয়তার বন্ধনে নতুর মাত্রা শুরু করবে। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে ভালবাসা নামক প্রত্যয়। এমনটাই সবার আত্মার কাম্য।

Logo-orginal