, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

চট্টগ্রামে তিন পুলিশের সহায়তায় ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র

প্রকাশ: ২০১৮-১০-১৭ ১১:৪৮:৪২ || আপডেট: ২০১৮-১০-১৭ ১১:৪৮:৪২

Spread the love

চট্টগ্রামে তিন পুলিশের সহায়তায় ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র
প্রতারণার ফাইল ছবি।
চট্টগ্রাম: পুলিশের সহায়তায় প্রতারণার মাধ্যমে ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ প্রতারণায় ব্যবহার হয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) তিন সদস্য।খবর বাংলানিউজের ।

তিন পুলিশ সদস্য হলেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) উৎপল চক্রবর্তী, এসআই জহিরুল ইসলাম ও সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রসিকিউশন শাখার কনস্টেবল রাজু।

তাদের ব্যবহার করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলামের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ১৪ লাখ টাকা। গত ২৩ জুলাই ২০১৮ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দফায় বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে এসব টাকা।

এ ঘটনায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বায়েজিদ বোস্তামী থানায় একটি মামলা (নম্বর-৫৪) দায়ের করেন সাবেক কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম। মামলার এজাহারে তিনি দণ্ডবিধির ১৭০/৪২০/৪০৬/১০৯ ধারায় অভিযোগ আনেন।

২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ বোস্তামী এসআই মুহাম্মদ হেলাল উদ্দীন ঢাকার তেজগাঁও থানার একটি মামলায় (নম্বর ৪৪/৪১৬) গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে থাকা আকমল হোসেন (৪৬) ও মো. আমজাদ হোসেন তালুকদার (৪০) কে বায়েজিদ বোস্তামী থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। গ্রেফতার দেখানোর পর ১০ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পলাতক আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা সংগ্রহ, গ্রেফতার দুইজনের ঠিকানা যাচাই ও মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এ তিন বিষয় উল্লেখ করে চট্টগ্রামের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর দুইজনকে সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। সোমবার (১৬ অক্টোবর) শুনানী শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান আকমল হোসেন ও মো. আমজাদ হোসেন তালুকদারের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো দুই আসামিকে আগে থেকে চিনতেন না প্রতারণার শিকার হওয়া কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম। শুধু মোবাইল ফোনে যোগাযোগের সূত্র ধরে পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাহাবুব পরিচয় দেওয়া অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছে বিকাশের মাধ্যমে ১৪ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন।

মামলার এজাহারে মো. শফিকুল ইসলাম উল্লেখ করেছিলেন-গত ২৩ জুলাই ২০১৮ দুপুরে ডিসি মাহবুব পরিচয় দিয়ে পাওনা টাকার একটি অভিযোগ সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে বিকাশের মাধ্যমে দুপুর ২টার দিকে ২০ হাজার টাকা ও বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেন।

কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ২৩ জুলাই ২০১৮ দুপুরে এসআই উৎপল চক্রবর্তী পাঁচলাইশ শহীদনগর ওয়াজেদিয়া পাড়ায় তার বাড়িতে গিয়ে তার খোঁজ করেন। তখন তিনি চট্টগ্রাম আদালতে ছিলেন। পরে পরিবারের কাছ থেকে শফিকুল ইসলামের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাকে কল দেন এবং ডিসি মাহাবুব পাঠিয়েছেন বলে জানান। তিনি (শফিকুল ইসলাম) চট্টগ্রাম আদালতে আছেন জানালে তাকে ডিসি মাহাবুব ফোন করবেন বলে জানান উৎপল চক্রবর্তী। ডিসি মাহাবুব কল করে তিনি (শফিকুল ইসলাম) কোথায় আছেন জানতে চান। তখন তিনি আদালতে আছেন জানালে রাজু নামে এক কনস্টেবল তার সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানান ডিসি মাহাবুব পরিচয় দেওয়া অজ্ঞাত ব্যক্তি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তিনি চেকআপ করার জন্য চকবাজার এলাকায় চলে যান।

পরে রাজু আদালতে তাকে না পেয়ে ডিসি মাহাবুবকে জানান। ডিসি মাহাবুব তাকে (শফিকুল ইসলাম) কল করে ধমক দেন। একপর্যায়ে ডিসি মাহাবুব বলেন- আপনার (শফিকুল ইসলাম) ভাইয়ের কাছ থেকে এক লোক আড়াই লাখ টাকা পান। আপনার ভাই মারা গেছেন, সেই টাকার জিম্মাদার আপনি ছিলেন। আপনি এ টাকা দিচ্ছেন না তাই আপনার নামে চট্টগ্রাম ডিআইজি অফিসে অভিযোগ আছে। আমাকে (ডিসি মাহাবুব) ১ লাখ টাকা দিলে পাওনাদারকে আর টাকা দিতে হবেনা। পরে তিনি বিশ্বাস করে ৫০ হাজার টাকা দেন।

মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ডিসি মাহাবুব পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিকে বিশ্বাস করি যেহেতু তিনি বলার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের এসআই, কনস্টেবল আমার সামনে চলে আসছেন। পরে তার (ডিসি মাহাবুব) সঙ্গে ফোনে কথা হতো। একদিন ডিসি মাহাবুব আমাকে ফোন করে বলেন-তিনি সিএমপিতে ডিসি হেডকোয়ার্টার হিসেবে পোস্টিং হয়ে আসবেন। এজন্য তার ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে। আমি যেন তাকে টাকা ধার দিয়ে সহায়তা করি। এর মধ্যে বায়জিদ বোস্তামী থানার এসআই জহিরুল ইসলামকে আমার বাড়ির সামনে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য পাঠান ডিসি মাহাবুব। এসআই জহিরুল ইসলাম আমার সঙ্গে দেখাও করেন। পরে ডিসি মাহাবুব আমাকে ছয়টি বিকাশ নম্বর দেন এবং এ ছয়টি বিকাশ নম্বরে আমি মোট ১৪ লাখ টাকা দেই। পরে জানতে পারি তিনি একজন প্রতারক। তখন আমি বায়জিদ থানায় মামলা করি।

মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ডিসি মাহাবুব পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি হলেন-গ্রেফতার হওয়া আকমল হোসেন। ছয়টি বিকাশ নম্বরের তিনটি তার নামে নিবন্ধিত। দুইটি মো. আমজাদ হোসেন তালুকদারের নামে নিবন্ধিত ও একটি তার স্ত্রীর নামে নিবন্ধিত।

এদিকে মো. শফিকুল ইসলামের মৃত ভাই রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার মোস্তফা নামে এক ব্যক্তি আড়াই লাখ টাকা পেতেন বলে জানান মো. শফিকুল ইসলাম।

ডিসি মাহাবুব পরিচয় দিয়ে ফোন করে টাকা চাওয়ার দুইদিন পর মোস্তফা তার কাছে পাওনা টাকা চান বলে জানান মো. শফিকুল ইসলাম।

ডিসি মাহাবুব পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির পক্ষে মো. শফিকুল ইসলাম বাড়িতে গিয়েছিলেন বলে বাংলানিউজের কাছে স্বীকার করেন এসআই উৎপল চক্রবর্তী।

তিনি বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, ‘ডিসি মাহাবুব পরিচয় দিয়ে ফোন করে তাকে সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলামের বাড়িতে যেতে বলেন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। ফোন করা মোবাইল নাম্বারটি সরকারি ছিল না। ট্রু কলার অ্যাপসে নাম্বারটি এডিসি মাহাবুব হিসেবে দেখা গিয়েছিল তাই সিনিয়র কোনো কর্মকর্তা ভেবে সঙ্গে সঙ্গে কাউন্সিলর শফিকুল ইসলামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখন জানতাম না তিনি প্রতারক।’

এ বিষয়ে জানতে বায়েজিদ বোস্তামী থানার এসআই জহিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মনে নেই বলে জানান। গোয়েন্দা পুলিশের প্রসিকিউশন শাখায় কর্মরত কনস্টেবল রাজুর মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সিএমপির সিনিয়র সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ জোন) সোহেল রানা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। মঙ্গলবার দুই আসামির তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবো। প্রতারকদের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Logo-orginal