, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

সৌদিকরণে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরছে প্রবাসীরা, দেখার কেউ নেই”

প্রকাশ: ২০১৮-১০-০৪ ২৩:২৮:৫৮ || আপডেট: ২০১৮-১০-০৫ ০০:০৫:৫০

Spread the love

সৌদিকরণে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরছে প্রবাসীরা, দেখার কেউ নেই"আবুল কাশেম, মধ্যপ্রাচ্যঃ মধ্যপ্রাচ্যের সবকটি দেশে নির্যাতিত জাতির নাম বাংলাদেশী । চাকুরী বৈষম্যতে বেশ বেকাদায় অদক্ষ বাংলাদেশীরা । আরবের সবকটি দেশে নিম্নমানের সবকটি কাজ যেমন রাস্তা ঝাড়ু, স্কুল-হাসপাতালের ক্লিনার, পার্কে গাছের কাজ, ইত্যাদি কাজে নিয়োজিতদের মধ্যে অধিকাংশরা বাংলাদেশী ।

এইদিকে মালেশিয়ায়ও প্রবাসীদের উপর চলছে স্টীম রোলার, অব্যহত রয়েছে ধরপাকড়, প্রতিনিয়ত দেশে শুন্যহাতে ফেরত আসছে অসহায় শ্রমিকরা ।

অন্যদিকে কোন প্রকার কাজ না শিখে ফ্রি ভিসায় পাড়ি দেয় অনেকে, ফ্রি ভিসায় প্রতিজনকে এইসব দেশে আসতে গুনতে হয় ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা । বর্তমানে সৌদিআরবে ফ্রি ভিসার লোকেরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ, পারছেনা একামা লাগাতে, পাচ্ছেনা কাজ। এদের অনেকে দেশে ফেরত যেতে অপেক্ষার প্রহর গুনছে ।

আজহার মাহমুদ চাঁদপুরের টগবগে যুবক ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফ্রি ভিসায় পাড়ি দিয়েছিল দাম্মামের জোবাইলে, কাজ পেয়েছিল ভাল এক কোম্পানীতে, কিন্তু বিধিবাম গত সেপ্টেম্বরে একামা নবায়ন করতে গিয়ে বর্ধিত ফি, কফিল থেকে কোম্পানীতে একামা ট্রান্সফার ফি ও কফিলের ফি সব মিলিয়ে প্রায় ১৮০০০ হাজার রিয়াল যাহা বাংলাদেশী প্রায় চার লক্ষ টাকা প্রয়োজন একামা নবায়নের জন্য, কিন্ত হতভাগা প্রবাসী তার একামা নবায়ন করতে পারেনি ।

আজহারের মত লাখো বাংলাদেশীর প্রবাসের স্বপ্ন এখন ডুমুরের ফুল । চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে জেদ্দার রাস্তা থেকে ধরে এক কাপড়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি পুলিশ । গত সপ্তাহে এয়ার আরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রবাসীদের দুর্দশা দেখার কেউ নেই, না সরকার ,না দুতাবাস, সবার নিকট আমরাতো মিসকিন। অথচ অন্যন্যা দেশের প্রবাসীদের সমস্যা দেখার আলাদা সেল গঠন করা আছে । ব্যতিক্রম আমরা বাঙ্গালীরা ।

আরটিএমের সাথে টেলিফোনে আলাপ চট্টগ্রামে এই ব্যবসায়ী জানান, প্রবাস জীবনের তিলে তিলে গড়া কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা ফেলে এক কাপড়ে বাংলাদেশ আসতে হল, আ আদ্যক্ষরের ব্যবসায়ী অনুরোধ করেছেন নাম প্রকাশ করতে । তিনি যোগ করেন সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলে এখনো সোদি সরকারের সাথে নিগোশিয়েট করে অনেক কিছু করা যায়, অন্যতায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে বাংলাদেশ ।

সৌদি ফেরত ১৪৪ বাংলাদেশী যুবক
অন্যদিকে গত ৩ অক্টোবর, বুধবার দুপুর ৩টা ৫৫ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি-৮০৬ বিমানে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন ১৪৪ সৌদি ফেরত বাংলাদেশী যুবক, যাদের একামা থাকা সত্ত্বেও ধরে পাঠিয়ে দিয়েছে সেদেশের পুলিশ ।

বিমানবন্দরে দায়িত্বরত জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) জনশক্তি জরিপ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান আনসারী বলেন, ‘সৌদি আরব থেকে ১৪৪ পুরুষ শ্রমিক ফিরেছেন। তারা অভিযোগ করছেন, তাদের ধরে ধরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছি, জেলা জনশক্তি অফিসের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিতে।’

সৌদি ফেরত শ্রমিকরা জানান, তাদের কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অাজ অন্তত ৩০০ জন দেশে ফিরেছে। অাগামীকালও কিছু শ্রমিক দেশে ফেরত অাসবে। তবে নির্দিষ্ট করে কোনো কারণ বলেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ।

সৌদি ফেরত অপর এক শ্রমিক আসিফ ইকবাল বলেন, ‘সৌদি সরকার যাকে পাচ্ছে ধরে ধরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কাগজপত্র ঠিক থাকা সত্ত্বেও জেলে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আজকে ফ্লাইটে অন্তত ৩০০ জন দেশে ফিরে আসছে। কালকে আরও আসবে।
১৪৪ জন ফেরত আসার নিউজ দেশের সবকটি জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে, অথচ বাংলাদেশী কতৃপক্ষের টনক নড়েনি ।

এইদিকে সৌদি আরবে এক সমীক্ষায় জানা যায়, ২০২০ সালের মধ্যে থেকে নিজ দেশে ফিরে যাবে বাংলাদেশিসহ ৬ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিক। প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে ব্যাংক অব সৌদি ফ্রান্সি। সৌদি সরকার বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে (যারা ফ্যামেলি নিয়ে থাকেন ) গত পহেলা মহরম ১৪৪০ হতে আকামা নবায়ন করতে বর্ধিত ফি নিতে শুরু করেছে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়। যা(প্রতি মাসে) ২০২০ সাল নাগাদ পর্যায়ক্র্নত্রনাল শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ৮’শ রিয়ালে পৌঁছবে ।

ভিশন ২০৩০ অনুসারে সৌদি অর্থনীতিতে পণ্যের ওপর বিভিন্ন ধরনের করারোপ সহ তেল রফতানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য শিল্পায়নের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। যাতে করে সৌদি নাগরিকদের কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

ব্যাংক অব সৌদি ফ্রান্সির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বর্তমানে সৌদি আরবে ১ কোটি ৬০ লাখ বিদেশি নাগরিক কাজ করছে। এবং প্রতি বছর ১ লাখ ৬৫ হাজার বিদেশি নাগরিক দেশটি ছেড়ে চলে যাচ্ছে।এদের মধ্যে বর্তমানে ১৫ লাখের বেশী বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছে….
প্রশ্ন হলো ২০২০ সালে পরে আমরা কি পারবো এদেশে থাকতে?

আমাদের দ্বারা কি সম্ভব ১৫০০-২০০০ রিয়াল বেতনে চাকরি করে কপিলের ফায়দা দিয়ে ২০২০ সালে ১২০০০ রিয়াল দিয়ে আকামা নবায়ন করতে?

ইতিমধ্যে জানা গেছে সৌদি আরবে লক্ষাধিক বাংলাদেশীর একামা নেই । অনেকে আবার নতুন নিয়মে একামা নবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন । কপিলের ফায়দা , একামার ফি, হেলথ ইন্সুরেন্স ইত্যাদির ফি জোগাড় করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা।

অন্যদিকে প্রবাসীদের সমস্যা নিয়ে সরকারের কোন মাথাব্যাথা নেই বলে অভিযোগ করেছে অনেক প্রবাসী,

যেসব কাজ প্রবাসীরা করতে পারবেনা ।

১ মহররম ১৪৪০ থেকে শুরু করে ৩ ধাপে ১২ রকম পণ্যের সব ক’টিকে পুরোপুরি প্রবাসীমুক্ত করা হবে । সৌদি শ্রমমন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল সাইট থেকে জানা যায়, প্রথম ধাপে ৪ রকমের পণ্য, দ্বিতীয় ধাপে ৩ রকমের পণ্য এবং তৃতীয় ধাপে আরো ৫ রকমের পণ্য সৌদিকরণ করা হবে ।
প্রথম ধাপ : মহররম ১, ১৪৪০ (১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮)

১. গাড়ি এবং মটরবাইকের দোকান ।

২. নারী, পুরুষ, শিশুদের সব রকমের তৈরি পোষাক বা রেডিমেট গার্মেন্টস, প্রসাধনী এবং জুতোর দোকান ।
৩. গৃহস্থালী তৈজষপত্র,বা আওয়ানী মানজিলায়ত।
৪. গৃহসামগ্রী, আসবাবপত্র ফার্নিচার বা আসাসি মানজিলিয়াত ।
দ্বিতীয় ধাপ : ১ রবিউল আউয়াল, ১৪৪০ (১০ নভেম্বর ২০১৮)

১. বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুৎ চালিত সামগ্রী ।
২.চশমার দোকান ।
৩. এবং ঘড়ির দোকান ।
তৃতীয় ধাপ : ১ জামাদিউল আউয়াল, ১৪৪০ (৮ জানুয়ারি ২০১৯)

১। হাসপাতাল, ফার্মেসী এবং হাসপাতাল সামগ্রী

২। গৃহ নির্মাণ সামগ্রী এবং সরঞ্জাম ।

৩। সবরকম গাড়ি যন্ত্রাংশের দোকান ।
৪। গালিচা, কার্পেট বা পাপোশ ।
৫। চকোলেট বা মিষ্টান্ন জাতীয় পণ্যের দোকান ।

উল্লেখিত সবগুলো সেক্টরে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ প্রবাসী শ্রমিকরা কর্মরত আছেন । সৌদিকরণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়াতে কাজ হারাতে যাচ্ছেন হাজার হাজার সৌদি প্রবাসী ।

বাংলাদেশ সরকারকে আমরা আহবান করব দেশের বৃহত্তম স্বার্থে সৌদিআরব ও মালেশিয়া প্রবাসীদের সহযোগিতায় দক্ষ কূটনৈতিক দিয়ে কমিটি করে ঐসব দেশের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করার জন্য ।

Logo-orginal