, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

সৌদিতে তিন বাংলাদেশীকে শরীয়াহ আইনে ডান হাত ও বাম পা কর্তনের নির্দেশ

প্রকাশ: ২০১৮-১০-২১ ১১:৪৪:০২ || আপডেট: ২০১৮-১০-২১ ১১:৪৪:০২

Spread the love

সৌদি

সৌদিতে তিন বাংলাদেশীকে শরীয়াহ আইনে ডান হাত ও বাম পা কর্তনের নির্দেশ
সৌদির সাজা প্রদানের ফাইল ছবি।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা সেজে ভারতীয় নাগরিককে অপহরণ করে অর্থ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আটক তিন বাংলাদেশীকে শরীয়াহ আইনে প্রত্যেকের ডান হাত ও বাম পা কর্তন এবং আটক হওয়ার দিন থেকে এক বছর কারাভোগের রায় দিয়েছেন আদালত। রায় কার্যকরের পর তাদের দেশে প্রেরণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় শহর জুবাইলে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনা এটি। ওই দিন ঘটনাস্থল থেকে আটক হন তারা। তাদের জবানবন্দী ও জব্ধকৃত আলামতের ভিত্তিতে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ৮ মে সেদেশের আদালত এই রায়ে দেন।

সৌদি আরবে সাজাপ্রাপ্ত তিন বাংলাদেশি হলেন- কুমিল্লার তিতাস থানার কাশীপুর গ্রামের কামাল উদ্দিনের ছেলে কাউসার মাহমুদ (পাসপোর্ট এফ-১১৫২৫২০), নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার ঝরছার গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে শাহিনুর (পাসপোর্ট এ-০৯৭৭৭৬২) ও মাদারীপুরের রাজৈর থানার দুর্গাবার্দি গ্রামের মোহাম্দ সৈয়দ আলীর ছেলে রুবেল খালাসী (পাসপোর্ট এবি-১৪৭২৪৭২)। 

আপিলের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ায় উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ নেই তাদের। তাই অভিযুক্ত তিন বাংলাদেশীর পক্ষে তাদের স্বজনরা সৌদি সরকারের কাছে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দ- মওকুফের জন্য আবেদন করেছেন। শেষ পর্যন্ত তাদের এ সাজা কার্যকর হচ্ছে নাকি ক্ষমা করে দেওয়া হচ্ছে সেজন্য আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে তাদের।

কী ঘটেছিল সেদিন

সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মো. সারোয়ার আলম প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব বরারবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন সম্প্রতি। চিঠিতে তিন বাংলাদেশির অপরাধের ধরন এবং সৌদি আদালতের রায়ের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন।

তিনি চিঠিতে আদালতের রায়ের তথ্যানুযায়ী উল্লেখ করেন-২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় শহর জুবাইলের রাস্তায় কর্তব্যরত পেট্রোল পুলিশ একটি চলন্ত করোলা গাড়ীর পিছন হতে এক ব্যক্তি সাহায্য চাচ্ছে মর্মে দেখতে পায়।

পুলিশ ওই গাড়ি থামার নিদের্শ দিলেও চালক না থামিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে। ধাওয়া করে পুলিশ ওই গাড়ির পেছন সীটে ্কজন ভারতীয় নাগরিককে (সাহায্য প্রার্থী) দেখতে পান। পুলিশ ওই গাড়িতে থাকা তিন বাংলাদেশিকে নকল পিস্তল, দুইজন নেপালি নাগরিকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও একজন ভারতীয় নাগরিকের ইকামা কার্ডসহ তাদের আটক করে।

তাদেরকে জুবাইল (রিয়াদ) পুলিশ স্টেশনে হস্তান্তর করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ওই  ভারতীয় নাগরিককে তার কর্মস্থল হতে ভাড়ার বিনিময়ে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত তিনজন গাড়িতে উঠায়।

পরবর্তীতে তিনজন নিজেদেরকে গোয়েন্দা পুলিশ, জেনারেল পুলিশ বলে পরিচয় দিয়ে পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে অর্থ সামগ্রি ছিনিয়ে নেয়।

সারোয়ার আলম আরো উল্লেখ করেন, পরবর্তীতে সৌদি পুলিশের বিস্তারিত তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, এই ঘটনা ছাড়াও ইতিপূর্বে ওই এলাকায় প্রবাসী তিন শ্রমিক আরো অনেক ছিনতাই ও ডাকাতি কর্মকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত।

সেই সকল ঘটনায় ভুক্তভোগীদের জবানবন্দী এবং অভিযুক্তদের সাথে পাওয়া অকাট্য প্রমাণাদির ভিতিএত সর্বোপরি অভিযুক্তদের নিজের মোবাইলে তাদের বিভিন্ন অপকর্মের ভিডিও ও ছবিতে প্রমাণিত হয়েছে যে, ওই তিন ব্যক্তি ডাকাতি চক্র গঠন করে নিজেদের সৌদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বা কর্তাব্যক্তি পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করে আসছিল।

অধিক সংখ্যক অপরাধের কারণে এবং অপরাধের ধরণ বিবেচনা করে আদালত তিন বাংলাদেশিকে ইসলামী আইন অনুযায়ী ডাকাতির শাস্তি হিসেবে (হদ্দে হেরাবা) প্রত্যেকের ডান হাত এবং বাম পা কর্তন এবং আটক হওয়ার দিন থেকে এক বছর কারাভোগের রায় দেন। রায় কার্যাকরের পর তাদের দেশে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে।

শ্রম কাউন্সেলর বলেন, রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপীলের  সময় দেওয়া হয়। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ জেলখানায় তাদের সঙ্গে দেখা করে যেকোনো প্রয়োজনে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়।

কিন্তু ওই তিন বাংলাদেশি বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে এ ব্যাপারে কোনো যোগাযোগ করেনি। সাজা ঘোষণার কিছু দিনের মধ্যে তাদের সৌদি সরকার সাজা মওকুফ করে দেবেন এমন ধারণা থেকে তারা আপীল করা থেকে বিরত থেকেছেন বলে পরে দূতাবাসকে জানিয়েছেন সাজাপ্রাপ্ত তিন বাংলাদেশি।

এদিকে নির্দিষ্ট সময়র মধ্যে আপীল না করায় সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে যেকোনো মুহূর্তে রায় কার্যকরের প্রস্তুতি রয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষের। এই ঘটনাটিকে স্পর্শকাতর উল্লেখ করে সারোয়ার আলম চিঠিতে উল্লেখ করেন এহেন গর্হিত অপরাধের প্রতি অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গীর মাধ্যমে প্রবাসে দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার স্বার্থে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শক্রমে দূতাবাসের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।

আরেক চিঠিতে শ্রম কাউন্সেলর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জানান, …বর্তমান প্রেক্ষাপটে অপরাধীদের পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষমার আবেদন পাওয়া গেলে দূতাবাস সৌদি আরবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবর প্রেরণ করা যেতে পারে।

পরবর্তীতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত তিন বাংলাদেশীর পক্ষে তাদের স্বজনরা আলাদা আলাদাভাবে সৌদি সরকারের কাছে দ- মওকুফ চেয়ে আবেদন করেন।

এরপর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার দ-প্রাপ্ত কাওসার মাহমুদ, শাহিনুর ও রুবেল খালাসীর পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদিত ক্ষমার আবেদন রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ দূতাবাস ক্ষমার এই আবেদন সৌদি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পেশ করবেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের দ- ক্ষমা কওে দেওয়া হবে নাকি শাস্তি কার্যকর করা হবে তা কিছু দিনের মধ্যেই জানা যাবে। #সংগৃহীত ফেইচবুক।

Logo-orginal