, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

চট্টগ্রামে মুসলমান আগমনের ইতিকথা” গ্রন্থটি সোহেল মো. ফখরুদ-দীন’র এক অনন্য সৃষ্টি

প্রকাশ: ২০১৮-১১-২১ ০৯:২৮:১৪ || আপডেট: ২০১৮-১১-২১ ০৯:২৮:১৪

Spread the love

মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন

চট্টগ্রামে মুসলমান আগমনের ইতিকথা" গ্রন্থটি সোহেল মো. ফখরুদ-দীন'র এক অনন্য সৃষ্টি
চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র এর সভাপতি  ইতিহাস-ঐতিহ্য সংগ্রাহক এবং  বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সোহেল মো. ফখরুদ-দীন’র রচিত “চট্টগ্রামে মুসলমান আগমনের ইতিকথা” গ্রন্থটি এক অনন্য সৃষ্টি। লেখক তার গ্রন্থে বর্তমানে চাটগামী পরিবার আরব বংশীয়দের অস্তিত্ব, চট্টগ্রামে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবীর মধ্যে অন্যতম সাহাবী হযরত সাআদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা) সহ অন্যান্য সাহাবীদের ইসলামের আগমনবার্তা, অলী-দরবেশদের ইসলাম প্রচার, আরব বণিকদের আগমন, কর্ণফুলির নামকরণ সহ বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া হযরত বায়েজিদ বোস্তামীকে স্বরণ করে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের কবিতা ও প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও লোককবি আব্দুল গফুর হালীর আঞ্চলিক ভাষার কবিতা স্থান পেয়েছে।

গ্রন্থ: চট্টগ্রামে মুসলমান আগমনের ইতিকথা

লেখক : সোহেল মো. ফখরুদ-দীন 

প্রকাশক: শামসুদ্দীন মোহাম্মদ রাজু 

প্রকাশনী: সাজিদ আলী প্রকাশন 

প্রকাশকাল: নভেম্বর ২০১৭ 

পৃষ্টা: ৬৮ 

শুভেচ্ছা মূল্য: ১৩০ টাকা মাত্র।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন শহর। আর এইটা বাংলার বাবে ইসলাম বা ইসলামের প্রবেশ দ্বার হিসেবে খ্যাত। বর্তমানে অনেক চাটগামী পরিবার আরব বংশীয় লোকদাবী করেন। যা “চট্টগ্রামে মুসলমান আগমনের ইতিকথা” গ্রন্থে উঠে এসেছে। চট্টগ্রামে একাধিক “কদম রসুল” এর অস্তিত্ব দেখা যায়- যেমন চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগীপাহাড় মোমিন রোডস্থ কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদে “কদম রসুল”,সীতাকুণ্ডা থানায় “কদম রসুল” ও “কদম রসুল এলাকা”, চট্টগ্রাম শহরে শেখ ফরিদের চশমা,চন্দনাইশ থানার বাগিচার হাট খান মসজিদে “কদম রসুল”, বাঁশখালী থানায় “কদম রসুল” গ্রাম ইত্যাদি আরবীয়দের আগমনবার্তা বহন করে।

লেখক তার গ্রন্থে  আরবদের দেয়া চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকা যেমন আলকরন,শুলকবহর (সুলক-উল-বহর), ষোলশহর (সালেহে শহর),  হালিশহর (হাবেলী শহর), বাকলিয়া (বকলিয়া/বক্কালিয়া) উল্লেখযোগ্য এলাকার নাম স্থান দিয়েছেন।

লেখক সোহেল মো. ফখরুদ-দীন তার গ্রন্থে, ইতিহাস-ঐতিহ্যের এই চট্টগ্রাম, পীর আউলিয়ার চট্টগ্রাম, বার আউলিয়ার চট্টগ্রাম  সাহাবায়ে ক্বেরাম ও পীর মাশায়েখের পদধূলায় ধন্য এই অভিব্যক্তটি ফুটিয়ে তুলেছেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর ১৭ তম সাহাবী এবং জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবীর মধ্যে অন্যতম সাহাবী হযরত সাআদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা) আরব থেকে সমুদ্র পথে চট্টগ্রামে এসে এখানেই পবিত্র ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী মানুষের কাছে পৌঁছান। তাঁর সাথে আরো যারা সাহাবী ছিলেন তাঁরা হলেন

*হযরত তামিম আনসারী (রা)

*হযরত কায়েস ইবনে ছায়ফরি (রা)

*হযরত উর ওয়াহ ইবনে আছম (রা)

*হযরত আবু কায়েস হারিস (রা) প্রমূখ।

আর বার আউলিয়া চট্টগ্রাম সর্বসাধারণের মুখে মুখে শোনা যায়। যথাক্রমে- সুলতান বায়েজীদ বোস্তামী, মিসকিন শাহ, বদর শাহ, কাতল পীর, শাহ মোহসিন আউলিয়া, শাহ কদল, শাহ ওমর, জঙ্গী শাহ , শাহচান্দ আউলিয়া, শাহ আমানত প্রমুখ। চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে অলী দরবেশদের নাম তুলে ধরেন। তাদের উল্লেখ যোগ্য হযরত শাহ জালাল (রা), হযরত শাহ পরান (রা), শাহ মাখদুম (রা), শেখ জালাল উদ্দীন তাবরিজী (রা) প্রমুখ। চট্টগ্রামের অলী দরবেশদের নিয়ে গবেষক কবি সোহেল মো. ফখরুদ-দীন “বার আউলিয়ার চট্টগ্রাম” শীর্ষক এক কবিতায় লিখেছেন-

                  “শাহ আমানত শাহ কুতুব

                   তাঁরই আগে বদনা শাহ

                   দায়িত্ব পালন করে

                   চট্টল হল ভরসা।

                   শিক্ষার আলো মোল্লা মিসকিন শাহ

                   অর্থের খনি গরীব উল্লাহ,

                   মামলা মোকাদ্দমার একমাত্র ভরসা

                   শহর কুতুব আমানত শাহ।।

                   পানি পথের পাথর ভাসা-মহান অলি

                   মোহসেন শাহ,

                   পটিয়াতে অবস্থান নেন

                   শাহ চান্দ আউলিয়া।

                   শাহ ওমর চকোরিয়াতে

                   শাহ কদল ফটিকছড়ি,

                    শাহ কাতল- কাতালগঞ্জে

                    ঠিকানা নিল লড়ি ছড়ি।”

“বার আউলিয়ার চট্টগ্রাম” কবিতায় আরো  লিখেছেন-

       “সবাই জানি বার আউলিয়ার নাম

স্মৃতির চিহ্ন সীতাকুণ্ড,সাতকানিয়া,আনোয়ারা, চন্দনাইশ,

          কোথায় আছে পীর মুরশীদ

কোথায় আছে জনগন দরবারী বন্ধুগণ

           শ্রদ্ধা ভরে স্বরণ করি

        বার আউলিয়ার অলিগণ।”

লেখক তার “চট্টগ্রামে মুসলমান আগমনের ইতিকথা” গ্রন্থটিতে চট্টগ্রামকে সাধারণত গণমানুষের কাছে বার আউলিয়ার দেশ বলে অভিহিত করেন। 

প্রখ্যাত সুফি ও ধর্ম প্রচারক হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রা) কে নিয়ে  প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ এনামুল হক তার কবিতায় 

লিখেছেন-

“আছে স্বর্গ, মহাশান্তিময় দেবদাস!!

তাই বুঝি বায়েজিদ (রা) ত্যজিয়া সংসার

ত্যজি রত্ন সিংহাসন, ত্যজি দারা সূতে

পাছে ফেলি সংসারের শত কোলাহল

আবিলতাময়,ভুলি সুখ,ভুলি দুঃখ

ভুলি আপনারে, উদাস বিরাগী বেশে,

জগতের এক ধারে মহাশান্তিময়

এইখানে আসি, চির শান্তি লভেছিল।”

বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সোহেল মো. ফখরুদ-দীন তার গ্রন্থে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর কথা উল্লেখ করে বলেন, এই কর্ণফুলি নদীর নামটিও আরবদের দেয়া।আরবীতে করণফুল অর্থ লবঙ্গ। আরবদের লবঙ্গ ভর্তি একটি জাহাজ এই নদীতে নিমজ্জিত হয়েছিল বলেই এ নদীর নাম কর্ণফুলি রাখা হয়।

এই গ্রন্থে প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও লোককবি আব্দুল গফুর হালীর আঞ্চলিক ভাষার কবিতা স্থান পেয়েছে।

কবি লিখেছেন-

     “কর্ণফুলী নদীর আগাত বঙ্গোপসাগর

       সাগর পাহাড়র মাঝে চাঁডিয়া বন্দর

              আহা লাগে কি সুন্দর।।

       নানান দেশর মানুষ আইসতো

                নানান জিনিস লই

        বেচা কিনা গৈত্য তারা

                 সাগর কূলত বই

          সাগরের ঢেউ কূলত লাগি

          পাহাড় ভাঙ্গি পইয্যে চর।।”

তাছাড়া বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সোহেল মো. ফখরুদ-দীন তার গ্রন্থে প্রাচীন চট্টগ্রামের অলী-দরবেশদের প্রতিষ্ঠিত  মসজিদ সহ বিভিন্ন ইসলামী স্থপত্যের আলোকচিত্র সমূহ স্থান দিয়েছেন। তার “চট্টগ্রামে মুসলমান আগমনের ইতিকথা” গ্রন্থটি  কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের এবং ভবিষ্যত গবেষকদের জন্য সহায়তা কিংবা পথ পদর্শক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। এই গ্রন্থটি বাঙালি মুসলমানদের আত্মপরিচয়, আত্মচেতনা এবং জাতীয়তাবোধের অনুপ্রেরণা যোগাবে। দীপ্তময় পথচলায় লেখকের প্রতি  দোয়া ও আন্তরিক ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি।

আলোচক : মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন।  
কলামিস্ট। 
C/O, মাওলানা মন্জিল, চন্দনাইশ পৌরসভা, ওয়ার্ড নং ০২, পূর্ব জোয়ারা (৪৩৮০),  চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম,বাংলাদেশ। মোবাইল: ০১৮২৫৮৬৬৪০৫

Logo-orginal