, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ” আল্লাহ তাদের ভালবাসেন

প্রকাশ: ২০১৮-১১-১৮ ০০:২৫:১৭ || আপডেট: ২০১৮-১১-২৩ ১৫:২৬:১৮

Spread the love

ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ" আল্লাহ তাদের ভালবাসেন
ছবি, সংগৃহীত ।

ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ
বিসমিল্লাহ হীর রাহমানীর রাহিম।

وَاَنۡفِقُوۡا مِنۡ مَّا رَزَقۡنٰكُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ يَّاۡتِىَ اَحَدَكُمُ الۡمَوۡتُ فَيَقُوۡلَ رَبِّ لَوۡلَاۤ اَخَّرۡتَنِىۡۤ اِلٰٓى اَجَلٍ قَرِيۡبٍۙ فَاَصَّدَّقَ وَاَكُنۡ مِّنَ
الصّٰلِحِيۡنَ وَلَنۡ يُّؤَخِّرَ اللّٰهُ نَفۡسًا اِذَا جَآءَ اَجَلُهَا‌ؕ وَاللّٰهُ خَبِيۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ
সরল অর্থঃ আমি তোমাদের যে রিযিক দিয়েছি তোমাদের কারো মৃত্যুর সময় আসার পূর্বেই তা থেকে খরচ করো। সে সময় সে বলবেঃ হে আমার রব, তুমি আমাকে আরো কিছুটা অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি দান করতাম এবং নেককার লোকদের মধ্যে শামিল হয়ে যেতাম। অথচ যখন কারো কাজের অবকাশ পূর্ণ হয়ে যাওয়ার সময় এসে যায় তখন আল্লাহ‌ তাকে আর কোন অবকাশ মোটেই দেন না। তোমরা যা কিছু কর সে বিষয়ে আল্লাহ‌ পুরোপুরি অবহিত। {আল মুনাফিকুনঃ ১০)
সম্বোধনঃ মুহাতারম সভাপতি, সম্মানিত পরিচালক, মঞ্চে উপস্থিত সম্মানিত মেহমান বৃন্ধ, উপস্থিত প্রিয় জন্মভূমির ভায়েরা আচ্ছালামু অয়ালাইকুম ওয়ারাহমতুল্লাহ ।

হামদঃ আমরা শোকর আদায় করি মাবুদের যিনি আমাদেরকে মাহে রবিউল আওয়াল উপলক্ষে একত্রিত করলেন, সুস্থ রাখলেন, মোহাম্মদুর রাসুল (সাঃ) এর জীবন আদর্শ নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দিলেন, তাই সকলে পড়ি আলহামদুল্লাহ ।দরূদ প্রেরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বিশ্বনেতা মোহাম্মদ (সঃ) এর প্রতি। রবের করুণা কামনা করছি সমস্ত আম্বিয়া, সাহাবায়ে কেরাম সালেহীন, ছিদ্দিকগন, শহীদগন ও বিশ্বের মজলুম মানবতার প্রতি ।

ভূমিকাঃ প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরাঃ- আমার আলোচনার বিষয় হচ্ছে ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ । ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ শব্দটির অর্থ হচ্ছে আল্ল¬াহর পথে খরচ । খুশির সংবাদ হচ্ছে আল্লাহর পথে খরচ যারা করে, তাদের তিনি ভালবাসেন, সুবহানআল্লাহ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহর পথে খরচ বলতে কি বুঝানো হচ্ছে? এক কথায় আল্লাহ খুশী হন এমন কাজে অর্থ ব্যয় করাই হচ্ছে ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর পথে খরচ। আল্লাহকে খুশী করার জন্য নিজের জন্য, পরিবার পরিজন, আত্মীয স্বজন, সমাজ ও মানবতার কল্যাণ এবং সর্বপরি আল্লাহর দ্বীন এর প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার কাজে যে অর্থ ব্যয় হয় সবই ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহর অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে খরচ হতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য। খ্যতিলাভ, প্রদর্শনেচ্ছা কিংবা জাগতিক কোন স্বার্থে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কোন কাজে অর্থ খরচ হলেও তা ইনফাক ফী সাবিল্লিাহ হিসেবে আল্লাহর কাছে গৃহীত হবেনা। অপরদিকে আল্লাহকে খুশী করার জন্য নিজের বা পরিবার পরিজনের জন্য খরচ করা হলেও ইনফাক এর সওয়াব আল্লাহ দান করবেন বলে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত।

ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ সুবহান-তায়ালা কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন,
وَاَنۡفِقُوۡا مِنۡ مَّا رَزَقۡنٰكُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ يَّاۡتِىَ اَحَدَكُمُ الۡمَوۡتُ فَيَقُوۡلَ رَبِّ لَوۡلَاۤ اَخَّرۡتَنِىۡۤ اِلٰٓى اَجَلٍ قَرِيۡبٍۙ فَاَصَّدَّقَ وَاَكُنۡ مِّنَ
الصّٰلِحِيۡنَ وَلَنۡ يُّؤَخِّرَ اللّٰهُ نَفۡسًا اِذَا جَآءَ اَجَلُهَا‌ؕ وَاللّٰهُ خَبِيۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ
আমি তোমাদের যে রিযিক দিয়েছি তোমাদের কারো মৃত্যুর সময় আসার পূর্বেই তা থেকে খরচ করো। সে সময় সে বলবেঃ হে আমার রব, তুমি আমাকে আরো কিছুটা অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি দান করতাম এবং নেককার লোকদের মধ্যে শামিল হয়ে যেতাম। অথচ যখন কারো কাজের অবকাশ পূর্ণ হয়ে যাওয়ার সময় এসে যায় তখন আল্লাহ‌ তাকে আর কোন অবকাশ মোটেই দেন না। তোমরা যা কিছু কর সে বিষয়ে আল্লাহ‌ পুরোপুরি অবহিত। {আল মুনাফিকুনঃ ১০)

আমরা রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত পড়লে দেখতে পাই যে , আল্ল-াহর রাসুল (স) ছিলেন সব চেয়ে বেশী অর্থ দানকারী। তিনি অর্থ সম্পদ ঘরে সঞ্চয় করে রাখা পছন্দ করতেননা। এক বিকেল আসর নামায পড়ে আযওয়াযে মুতাহহরাতদের ঘরে দ্রুত চলে যান। সাহাবাগণ পেরেশান হলেন কেননা আল্ল¬াহর রাসুল সাধারনত এই ভাবে দ্রুত ঘরে যেতেননা। তিনি কিছুক্ষন পর আবার ফিরে এসে সাহাবাদেরকে বললেন আমি ঘরে দ্রুত যাবার কারণ হচ্ছে আমার ঘরে স্বর্ণমুদ্রা ছিল আমি নামায পড়তে আসার আগে তা সদকা করার কথা মনে ছিলনা- এখন ঘরে গিয়ে তা সদকা করার নির্দেশ দিয়ে এসেছি।

আল্লাহর রাসুলের সাহাবাগণ জীবন বাজি রেখে দ্বীন প্রতিষ্ঠার যেমনি নজরানা স্থাপন করেছেন অনুরপভাবে সহায় সম্পদ সব কিছু আল্লাহর রাসুলের দরবারে হাজির করে মাল কুরবানীরও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আল্লাহর রাসুলের আসহাবদের মধ্যে যাঁরা মুহাজির ছিলেন তারা আল্লাহকে খুশী করার জন্য নিজের সকল মাল , সম্পদ, ঘর বাড়ী , পরিবার পরিজন রেখে মদীনায় হিজরাত করেন। আর আনসার সাহাবীগণ নিজেদের সম্পদের অর্ধেক তাঁদেরকে দিয়ে দেন। এমনকি একাধিক স্ত্রীর একজনকে তালাক দিয়ে মুহাজির ভাইকে বিবাহ করার সুযোগ করে দেন।

হাদীস শরীফে এসেছে,হযরত খাদীজা সমস্ত সম্পদই আল্ল¬াহর পথে দান করেন। হযরত আবু বকর সমস্ত সম্পদ আল্ল¬াহর রাসুলের দরবারে হাজির করেন । হযরত উমর তাবুক অভিযানের সময় তাঁর মোট সম্পদের অর্ধেক দান করেন। হযরত উসমান বীরে রুমা নামক কূপটি অনেক অর্থ দিয়ে জনৈক ইয়াহুদীর কাছ থেকে খরিদ করে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে দেন। আাব্দুর রহমান ইবন আওফ তাবুক অভিযানের সময় আট হাজার দিনার দান করেন। মুনাফিকরা তাঁকে লোক দেখানোর জন্য দিয়েছেন বলে প্রচার করতে থাকলে আল্লাহ পাক অহী নাযিল করে তাঁর খুলুসিয়াতের সার্টিফিকেট দান করেন।

বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে আল্লাহর বান্দাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে যে যারা আল্লাহর দ্বীনের ক্ষতিসাধন করতে চায় তারা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য অঢেল সম্পদ ব্যয় করছে।
এমতাবস্থায় আল্লাহর দ্বীনের পতাকাবাহীদেরকে খেয়াল রাখতে হবে তারা সময়ের দাবী অনুসারে আল্লাহর দ্বীনের জন্য অর্থ খরচ করছে কিনা? যদি সময়ের দাবী অনুসারে আল্লাহর দ্বীনের জন্য অর্থ ব্যয় করা না হয় তাহলে খেয়াল রাখতে হবে যে এতে আল্লাহর কোন ক্ষতি হবেনা; আমাদেরই ক্ষতি হবে। আমাদেরকে অন্য জাতির পদানত হয়ে থাকতে হবে। তাই আল্লাহ তাআলা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের প্রায় সকল জায়গাতেই জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর কথা বলার সময় ’ জান ও মাল’ উভয়ের কথাই উল্লেখ করেছেন। এক্ষেত্রে মজার ব্যাপার হচ্ছে যে আল্লাহ তাআলা অধিকাংশ জায়গাতেই মালের জিহাদের কথা আগে উল্লেখ করেছেন।

আমার মনে হয় এর কারণ হচ্ছে এই যে মানুষ আবেগে জীবন দিয়ে দিতে পারে কিন্তু কষ্টার্জিত অর্থ খরচ করতে অনেক সময় মন চায়না। কেননা মালের প্রতি মানুষের সহজাত আকর্ষণ রয়েছে। আর এই আকর্ষনের কারণেই ডাকাতের খপ্পারে পড়ার পর অনেক সময় জীবনবাজি রেখেও মালকে আগলে রাখতে দেখা যায়। ্ মালের কথা আগে বলার আরেকটি কারণ সম্ভবত এই যে, মাল ছাড়া দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হওয়া কঠিন। ইসলাম বিরুধীদের নানা ততপরতায় মোকাবিলা করতে গেলেই মালের দরকার: যেমন মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবিলায় বিকল্প মিডিয়া ও মননশীল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালিত করতে গেলে মালের দরকার। মসজিদ, মাদ্রাসা, ইসলামিক সেন্টার , শিশু- কিশোর ও মহিলা- পুরুষদের বিভিন্ন ধরনের তালিম , তারবিয়াত ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করতে অর্থের দরকার হয়। তাই কেউ কেউ মালকে রক্তের সাথে তুলনা করেছেন। একটি শরীর রক্তশূন্য হলে যেমন একজন মানুষ বাঁচতে পারেনা। তেমনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা প্রচেষ্টায়রত কোন সংগঠন মাল ছাড়া সামনে অগ্রসর হতে পারেনা। একথা ঠিক যে পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সাপোর্ট ছাড়া কোন একটি ইসলামী সংগঠন মজবুত সংগঠন হিসেবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হওয়া এবং টিকে থাকা কঠিন।
তাই আল্লহা তায়ালা ঘোষণা করেন,
مَّثَلُ الَّذِيۡنَ يُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَهُمۡ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ اَنۡۢبَتَتۡ سَبۡعَ سَنَابِلَ فِىۡ كُلِّ سُنۡۢبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ‌ؕ وَاللّٰهُ يُضٰعِفُ لِمَنۡ يَّشَآءُ‌ؕ وَاللّٰهُ وٰسِعٌ عَلِيۡمٌ
যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের ব্যয়ের দৃষ্টান্ত হচ্ছেঃ যেমন একটি শস্যবীজ বপন করা হয় এবং তা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়, যার প্রত্যেকটি শীষে থাকে একশতটি করে শস্যকণা। এভাবে আল্লাহ‌ যাকে চান, তার কাজে প্রাচুর্য দান করেন। তিনি মুক্তহস্ত ও সর্বজ্ঞ। {আল বাকারাহঃ ২৬১
اِنَّ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا يُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَهُمۡ لِيَصُدُّوۡا عَنۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ‌ؕ فَسَيُنۡفِقُوۡنَهَا ثُمَّ تَكُوۡنُ عَلَيۡهِمۡ حَسۡرَةً ثُمَّ يُغۡلَبُوۡنَ ؕ وَالَّذِيۡنَ كَفَرُوۡۤا اِلٰى جَهَنَّمَ يُحۡشَرُوۡنَۙ
যারা সত্যকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথ রোধ করার জন্য ব্যয় করেছে এবং এখনো আরো ব্যয় করতে থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ প্রচেষ্টা তাদের অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তারপর তারা বিজিত হবে। আর এ কাফেরদেরকে ঘেরাও করে জাহান্নামের দিকে আনা হবে। {আল আনফালঃ ৩৬)

শিক্ষনীয়ঃ وَاَنۡفِقُوۡا فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ وَلَا تُلۡقُوۡا بِاَيۡدِيۡكُمۡ اِلَى التَّهۡلُكَةِ‌ۖ ‌ۚ‌ۛ وَاَحۡسِنُوۡٓا‌ۚ‌ۛ اِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الۡمُحۡسِنِيۡن
আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না। অনুগ্রহ প্রদর্শনের পথ অবলম্বন করো, কেননা আল্লাহ‌ অনুগ্রহ প্রদর্শনকারীদেরকে ভালোবাসেন। {আল বাকারাহঃ ১৯৫ } অতএব আসুন ইনফাক ফি সাবি লিল্লাহ তথা আল্লাহর রাস্থায় খরচ করে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যায় ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দিন ।আমিন ।
লেখক ও সংকলকঃ আবুল কাশেম (প্রবাসী কলামিস্ট) ই-মেইলঃ kashem5416@gmail.com

Logo-orginal