, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

তৃণমূল থেকে ধীরে ধীরে একজন নেতার উত্থানের মডেল ছিল রহিমুল্লাহ ভাই

প্রকাশ: ২০১৮-১১-২২ ১০:২১:০৯ || আপডেট: ২০১৮-১১-২২ ১০:২২:১৬

Spread the love

তৃণমূল থেকে ধীরে ধীরে একজন নেতার উত্থানের মডেল ছিল রহিমুল্লাহ ভাই
সোশ্যাল ডেস্কঃ ( মুজিবুর রহমান মঞ্জু ) জি.এম রহিমুল্লাহ হিসেবে এক নামে তিনি পরিচিত ছিলেন। তাঁর জি.এম এর পূর্ণরূপ ‘গিয়াসউদ্দিন মুহাম্মদ’ অনেকেই জানত না। আমরা যারা তাঁকে খুব ভালবাসতাম তারা জানতাম। মজা করে আমরা তাঁকে জি.এম ভাই বলেই সম্বোধন করতাম। তিনি আমাদের খুব শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন। তাঁর সঙ্গ এনজয় করতাম আমরা। বয়সের পার্থক্য কিংবা দায়িত্বশীলতার ভারে তিনি কখনোই আমাদের কাছে ভারী ছিলেন না। তাঁর মত সহজ সরল এরকম আমুদে নেতৃত্ব আমি আর কখনো দেখব বলে মনে হয় না।

কক্সবাজারের সদ্য পরপারের বাসিন্দা হওয়া তুখোড় ছাত্রনেতা জি এম রহিমুল্লাহকে নিয়ে স্মৃতিকথা শিবিরের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জুর পোস্ট নেওয়া ।

জনাব মঞ্জু লিখেন, বিশ্বাস করুন তাঁর ইন্তেকালের খবর শুনে আমি ভেবেছিলাম কেউ তাঁকে নিয়ে ট্রল করছে। কারণ মাত্র কয়েকদিন আগে জনাব জি.এম রহিমুল্লাহকে কক্সবাজার সদর আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী করার জন্য সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল। যতদূর জানি কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন তিনি।

তাঁর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ নিয়ে কেউ হয়তো কৌতুক বশতঃ তাঁর মৃত্যুর কথা লিখেছে এটাই আমি মনে করেছিলাম। কিন্তু হায়! কিছুক্ষণের মধ্যেই বজ্রাহতের মত আমার হৃদপিন্ড ধুক্ করে উঠে। হাত পা নিঃসাড় হয়ে আসে। বিশ্বাস করতে বাধ্য হই আমাদের প্রিয় নেতা, ভাই এবং অকৃত্রিম সাথী রহিমুল্লাহ ভাই আর নেই।

তাঁর মৃত্যু সংবাদ যখন আমাদের কাছে এসে পৌঁছায় তখন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ডাঃ শফিকুর রহমান, ডাঃ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, মুঃ আব্দুল হালিম, আব্দুর রব, ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি মুঃ রেজাউল করিমসহ আরও অনেকে আমরা একসঙ্গে ছিলাম। মূহুর্তে সকলের মাঝে শোকের নিস্তব্ধতা নেমে আসে। অশ্রুসজল হয়ে পড়ে সকলের চোখ। অবিশ্বাস্য এ সংবাদে সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে!
তাঁর সাথে সুখ, দূখ, হাসি-কান্নার অজস্র স্মৃতি আমাদের। ছাত্র আন্দোলনের তৃণমূল থেকে থানা, জেলা, বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। যেখানেই দায়িত্ব পালন করেছেন সেখানেই তিনি ছিলেন প্রোজ্বল ও মূখ্য। তিনি কখনও কোথাও গৌণ চরিত্রে ছিলেন না। তাঁর অভিজ্ঞতা এবং বাস্তব অভিজ্ঞানের কারণে তিনি গুরূত্বপূর্ণ হয়ে উঠতেন তাঁর পরিবেশের কাছে।

ছাত্রাবস্থায় আমরা অনেক বিপ্লবী প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করি কিন্তু বাস্তবতাকে ভেদ করে তাকে সত্যতায় রূপ দিতে পারিনা। আমাদের ভালবাসার মানুষ জি.এম সেটা পেরেছিলেন। ছাত্র আন্দোলন শেষে নিজ গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। মিশে গিয়েছিলেন মাটি ও মানুষের সাথে। তিনি যখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন আমরা নিরুৎসাহিত করেছিলাম। এতবড় ছাত্রনেতা হয়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে হাসা-হাসি করেছিলাম। কিন্তু তিনি সেটা গায়ে মাখেননি। নিজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর লম্বা সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সদর উপজেলায়ও তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। ভোট ডাকাতি ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে চ্যালেঞ্জ করে জয়ী হন। তৃণমূল থেকে ধীরে ধীরে একজন নেতার উত্থানের মডেল ছিল রহিমুল্লাহ ভাই।

আমাদের সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে তিনি এভাবে হঠাৎ চলে যাবেন বলেই হয়তো এতো মায়া লাগিয়েছিলেন। আজ রহিমুল্লাহ ভাইকে নিয়ে কোন স্মৃতিকথা লিখতে ইচ্ছা করছেনা। তাঁকে হারিয়ে আমাদের মুখের ভাষা স্তব্ধ।

তিনি যে ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের ছাপ রেখে গেছেন সেটা আমি আমার হৃদয়ে ধারণ করতে চাই। ব্যক্তি জীবনে ইসলামী নৈতিক মূল্যবোধ লালন করে উদার চিত্তে সমাজ উন্নয়নে ব্যাপৃত ছিলেন জি.এম রহিমুল্লাহ। দল মতের উর্ধে উঠে আধুনিক মননে সমাজসেবা ছিল তাঁর কর্মকৌশল। তাই তিনি সফল হয়েছিলেন। ওপারের জীবনেও তিনি সফল হবেন।
কারণ তাঁর কর্মজীবনের স্বাক্ষ্য হয়ে আছি আমরা লাখো মানুষ।
হে মহান আল্লাহ তায়ালা আমার নেতা, বড়ভাই এবং বন্ধুকে তুমি তোমার মহত্বের ছায়াতলে আশ্রয় দিও। এটাই আজ তোমার কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা।

মুজিবুর রহমান মঞ্জু
সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

Logo-orginal