, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

রাউজানে মনোনয়ন যুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হেভিয়েট প্রার্থীদের

প্রকাশ: ২০১৮-১১-১৭ ২১:১৬:৪১ || আপডেট: ২০১৮-১১-১৭ ২১:১৬:৪১

Spread the love

রাউজানে মনোনয়ন যুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হেভিয়েট প্রার্থীদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাউজান, চট্টগ্রামঃ রাউজান চট্টগ্রামের আলোচিত একটি জনপদ । পুর্ব পাকিস্থানের স্পীকার ফজলুল কাদের চৌধুরীর পরিবার নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি সরগরম থাকে সবসময় । সেই সংসদীয় আসনে এবার মনোয়ন যুদ্ধে বিএনপি – আওয়ামী লীগে ফাইট চলছে হেভিয়েট প্রার্থীদের মাঝে ।

চট্টগ্রামের ৬ রাউজানে বিজয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। বিএনপির টার্গেট বিজয়ী হয়ে আসন পুনরুদ্ধার। রাউজানকে ঘিরে প্রধান এই দুই রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য অভিন্ন হলেও সম্ভাব্য প্রার্থী সম্পর্কে রয়েছে নানা মত।

টানা তিনবারের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে এবার মনোনয়নযুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগেরই অর্ধডজন প্রার্থী। তবে প্রার্থীর ছড়াছড়ি নেই বিএনপিতে। সমীকরণও অনেকটা স্পষ্ট। বিএনপি একটি অংশ অবস্থান নিয়েছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের পক্ষে ।

এ ব্যাপারে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, রাউজানে তাদের পরিবারের আলাদা ইমেজ রয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা বেশ কয়েকবার এমপিও নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে তিনিও এ আসনে জয়ী হন। ২০০১ ও ২০০৮ সালে ভোট জালিয়াতি না হলে তার হ্যাট্রিক বিজয় হতো। আগামী নির্বাচনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাদের পরিবারের ওপরই আস্থা রাখবেন বলে মনে করছেন তিনি।

তবে ভিন্নমত আছে বিএনপি নেতাকর্মীদের আরেকটি অংশের। তাদের মতে, রাউজানে যোগ্য প্রার্থী হতে পারেন সাবেক এমপি গোলাম আকবর খোন্দকারই। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠালঘ্ন থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবেও ক্লিন ইমেজ আছে তার। এ প্রসঙ্গে গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, রাউজান থেকে তিনি ১৯৯৬ সালে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার ওপর আস্থা রাখলে তিনি নির্বাচন করতে প্রস্তুত রয়েছেন।

বিএনপি থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পরিবারের যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন এ আসনে। এ ক্ষেত্রে তার ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, তার স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। এ পরিবারের বাইরে মনোনয়ন পেতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকারও।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের এমপি ফজলে করিম চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মাঠে আছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, তার স্ত্রী শেখ সুলতানা রেখা চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, উত্তর জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ও দক্ষিণ জেলা সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগে অনেকের আস্থা ফজলে করিমের উপর, কারণ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আগামী নির্বাচনেও তার ওপর আস্থা রাখবে জনগণ। নেতা-কর্মীরা মনে করেন, রাউজানকে তিনি ফুলের বাগানের মতো সাজিয়েছেন। দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। সন্ত্রাসের এই জনপদ এখন শান্তির জনপদ। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা তার ওপর আবারও আস্থা রাখবেন।

তবে ভিন্নমত পোষণ করছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ। তাদের অভিযোগ, টানা তিনবার এমপি হওয়ায় এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর মধ্যে অহংবোধ তৈরি হয়েছে। তিনি নিজ দলের ভিন্নমতকেও সহ্য করছেন না। এতে সাংগঠনিকভাবে দলের ক্ষতি হচ্ছে।

যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আন্দোলন-সংগ্রামেও ছিলেন সামনের সারিতে। সংগঠক হয়েই শেষ করতে চান রাজনীতির পাঠ। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন করার নির্দেশ দিলে তা মাথা পেতে নেবেন।

ওমর ফারুক চৌধুরীর স্ত্রী শেখ সুলতানা রেখা চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বোন তিনি। ওমর ফারুক চৌধুরী নির্বাচন না করলে তিনিও প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

এ ছাড়া নির্বাচনী মাঠে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। নেতাকর্মীদের কারও কারও মতে, রোটনের পছন্দেই রাউজান পৌরসভায় দেবাশীষ পালিতকে প্রার্থী করেছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। দেবাশীষ বিজয়ী হওয়ায় এলাকায় প্রভাবও কিছুটা বেড়েছে। তিনি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত যোগ দিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় তাকে দীর্ঘ ১৯ মাস কারাভোগ করতে হয়েছে। অন্যান্য আন্দোলন-সংগ্রামেও তিনি সামনের সারিতেই ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আস্থা রাখলে তিনি রাউজানে আওয়ামী লীগের বিজয়গাথা দীর্ঘ করতে পারবেন। তার অভিযোগ, বর্তমান এমপি ফজলে করিম চৌধুরীর বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্তে রাউজান আওয়ামী লীগের ক্ষতি হচ্ছে। পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে দেবাশীষ পালিত মনোনয়ন পেলেও এমপি তার পছন্দের চার প্রার্থীকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে রাখেন। ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনেও বিতর্কিত ভূমিকা ছিল তার।

তবে মনোয়ন দৌড়ে কে এগিয়ে বা কে পাবেন দলের মালা তা দেখতে আরো কদিন অপেক্ষা করতে হবে ।

Logo-orginal