, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

‘খালেদের মত বিপর্যয়ে পড়তে পারেন আপনিও”

প্রকাশ: ২০১৮-১২-০৩ ০৯:০৩:৫৯ || আপডেট: ২০১৮-১২-০৩ ০৯:০৩:৫৯

Spread the love

‘খালেদের মত বিপর্যয়ে পড়তে পারেন আপনিও"
ছবি, সংগৃহীত।

সোশ্যাল ডেস্কঃ আজকে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র ডিরেক্টর সাহেবের সাথে দেখা করতে প্রথমে উনার অফিসে গেলাম। উনি অফিসে নেই। ফোন নাম্বার যোগাড় করে ফোন করলাম। খালেদ মাহমুদ আইবিএর শিক্ষক উনি যে এখন যৌতুক এবং ধর্ষনের মামলায় জেলে আছেন এই বিষয়ে আইবিএর কর্তৃপক্ষ কি করছেন এটা জানতে চাইলাম। উনি প্রথমেই নিশ্চিত করলেন যে উনারা সবাই মনে করেন যে খালেদ নির্দোষ, খুবই ভয়ংকর এবং বাজে ভাবে উনাকে ফাঁসানো হয়েছে। তারপর উনি আমাকে শিক্ষক সমিতির সাথে যোগাযোগ করতে বললেন। উনারা নাকি ব্যাপারটা দেখছেন।

আমি বললাম আপনারা তো উনার ডিরেক্ট সহকর্মী, এই ব্যাপারে আপনারা কি করছেন? উনি অনেক ধরনের কথা বললেন। কিন্তু বুঝলাম শিক্ষক সমিতির ঘাড়ে দিয়ে আইবিএ এই ব্যাপারটা একেবারেই অউন করছে না। আইবিএর শিক্ষকরা নীরব, ছাত্র ছাত্রীরা নীরব, বিশাল প্রতিপত্তিশালী ঝা চক চকে কর্পোরেট এলুমনাইরাও নীরব। আমি আইবিএর সংশ্লিষ্ট কেউ হলে খুবই লজ্জা পেতাম।

ছবি, সংগৃহীত।

তারপর টিচার্স লাউঞ্জে যেয়ে একজন সিনিয়র শিক্ষককে ভাগ্যগুণে পেয়ে গেলাম। উনি আজকে সকালে খালেদের সাথে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সংগে ছিল আরেকটি বিভাগের জুনিয়র একজন শিক্ষক। ওই জুনিয়র শিক্ষকের বিভাগে খালেদ আউট অফ ডিপার্টমেন্ট টিচার হিসেবে একটা কোর্স পড়িয়েছিলেন। সেই শিক্ষকের সাথে ফোনে বিস্তারিত কথা হলো।

ও বললো যে দেখেন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমার পক্ষে এটা মেনে নেয়া খুবই কঠিন যে আমার একজন শিক্ষককে বিনা অপরাধে প্রতিশোধ নেয়ার কারণে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

আমি বললাম, বিনা অপরাধে এটা নিশ্চিত হচ্ছেন কিভাবে?

সে বললো, প্রথমত যৌতুকের কেইসটা এতো হাস্যকর যে এই নিয়ে কোন কথা বলারই দরকার নাই। আর রেইপ কেস এমন একজন সম্বন্ধে আনা হয়েছে যে ওই মহিলা তাঁর বন্ধু স্থানীয়, হয়তো কোন সম্পর্ক থাকতে পারে। এই রেইপের অভিযোগ ঐ মহিলা করেন নাই। করেছে তাঁর স্বামী যার সাথে এখন ঐ তথাকথিত রেইপ ভিকটিম মহিলা সেপারেশনে আছেন। মহিলা তাঁর মেয়ে এবং মাকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকেন।

খালেদ মহিলাকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠান এই মাসের ১২ তারিখে। ২২ তারিখে উনি গ্রেফতার হন যৌতুকের এবং ধর্ষণের মামলায়। সেই সাথে উনার সত্তুরের কাছাকাছি বয়সী বাবাও গ্রেফতার হন। ঐ বৃদ্ধ ব্যক্তিটিও এখন জেলে। খালেদের বয়স্ক মাও জেলে থাকতো, কিন্তু এখন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে বেঁচে গেছেন।

খালেদকে গ্রেফতার করার পর ঐ মহিলাকে পরীক্ষার জন্য মেডিক্যাল টেস্ট করা হয়। কিন্তু রেইপের কোন আলামত পাওয়া যায় নাই। আমি বললাম, এরপর খালেদ জেলে কিভাবে যায়? আর তার বৃদ্ধ বাবারই বা কি অপরাধ।

সে বললো যে, খালেদের এক্স ওয়াইফ নিজে পুলিশ অফিসার। তার বাবা র‍্যাবের এক্স ডিজি। এখন পাবলিক সার্ভিস কমিশনে আছেন। তাহলে এটা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নোংরা প্রতিশোধ? ও বললো ঠিক তাই।

এই গুটি কয়েক শিক্ষকরা এখন খালেদকে বিভিন্ন রকম ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছে। কেন্দ্রীয় কারাগারে আজ সকালে দেখা করতে গিয়েছিলেন খালেদের সাথে।

খালেদ মানসিক ভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। সে একেবারেই ভেঙ্গে পড়েনি। সে বার বার বলেছে, আমি কোন অন্যায় করি নাই, তাই আমার ভয় পাওয়ার কিছু নাই। জেলের খাবার খুব নিম্নমানের এবং পর্যাপ্ত না। ফুলব্রাইট স্কলারশীপ পাওয়া বুয়েটের এক্স স্টুডেন্ট খালেদ মনে হয় কোনদিন কল্পনা করে নাই যে ওকে জেলের ভাত খেতে হবে। কিন্তু সেই খাবারও এতো অপর্যাপ্ত তো যে খিদে মেটে না। তাই খালেদ বাধ্য হয়ে ওদের কাছ থেকে কিছু টাকা রেখে দিয়েছে খাবার কিনে খাবার জন্য।

তাহলে দেখেন বিপদে পড়লেই মানুষ বুঝতে পারে সে কত একা ! তাঁর নিজের বিভাগের সহকর্মী, নিজের বিভাগের ছাত্র ছাত্রীরা কেউ পাশে নেই, পাশে এসে দাড়িয়েছে স্বল্প পরিচিত অন্য বিভাগের ছাত্র এবং শিক্ষক।

এই শিক্ষকরা এটাও বলছেন যে খালেদ যদি সত্যিকারের অপরাধী হতেন তাহলে কিছু বলার ছিল না। কিন্তু নিরপরাধ একজন মানুষকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে পুলিশ শুধু মাত্র ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিল? আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কি করছেন? আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের অবস্থান এতো নীচে নামিয়ে এনেছি যে পুলিশ তাঁর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যখন তখন শিক্ষককে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর আমরা কি করছি?

আজকে দেখলাম সোশাল সাইন্স লাউঞ্জে পার্টি হচ্ছে, খানা পিনা হচ্ছে। কারো কোন বিকার নেই। সামনে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন উৎসব মুখর পরিবেশ। এ পর্যন্ত উনারা একটা বিবৃতি দিয়ে দায় সেরেছে আর নাকি কথা দিয়েছেন ৪ তারিখে নির্বাচনের পরে উনারা জোরে শোরে বিষয়টা দেখবেন। দেখলে ভাল, কিন্তু আমার খুব একটা ভরসা নাই। অনেক বছর ধরেই উনাদের দেখছি।

আমার সহকর্মীদের একটা ছোট্ট জিনিস মনে করিয়ে দিচ্ছি। যেই বিপর্যয়ে খালেদ পড়েছে এটি যে কারো জীবনে যে কোন সময়ে নেমে আসতে পারে। এই ধরনের না হলেও অন্য যে কোন ভয়ংকর হয়রানির শিকার আমি আপনি যে কোন সময়ে হতে পারি। আজকে খালেদের বিপদে আমি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের

সহকর্মী হয়ে যদি এই রকম পিন পতন নীরবতা আর নির্লিপ্ততা দেখাই, তাহলে কোন মুখে আশা করবো আমার বিপদে অন্য কেউ এগিয়ে আসবে?
#শিক্ষক খালেদের সহকর্মীর পোস্ট থেকে।

Logo-orginal