, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin admin

সেকুলারিজমের প্রকৃত তাৎপর্য

প্রকাশ: ২০১৮-১২-০৬ ২৩:১০:২২ || আপডেট: ২০১৮-১২-০৬ ২৩:১০:২২

Spread the love
সেকুলারিজমের প্রকৃত তাৎপর্য
ছবি, নয়া দিগন্ত ।

বাংলাদেশে সেকুলারিজমের অনুবাদ করা হয় ‘ধর্মনিরপেতাবাদ’। কিন্তু এ অনুবাদ সঠিক নয়। ধর্মনিরপেতাবাদ সেকুলারিজমের প্রকৃত তাৎপর্য প্রকাশ করে না। এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এবং জনগণ প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পারে না।

সেকুলারিজমের প্রকৃত তাৎপর্য রাষ্ট্র ও শিাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করা। সেকুলারিজমের উদ্ভব ঘটেছিল এনলাইটেনমেন্ট আন্দোলন বা ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনের মাধ্যমে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই আন্দোলন শুরু হয় ফ্রান্সসহ ইউরোপের কিছু দেশে। এটা ছিল মূলত ধর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন। তাদের মূলকথা ছিল দু’টি। প্রথমত, ন্যাচারালিজম (Naturalism)। অর্থাৎ জগতের সৃষ্টি প্রাকৃতিকভাবে হয়েছে; এখানে ‘স্রষ্টা’ বলে কোনো সত্তার ভূমিকা নেই। অর্থাৎ এটি স্রষ্টাকে অস্বীকার করারই শামিল। দ্বিতীয়ত, র‌্যাশনালিজম (Rationalism) বা যুক্তিবাদ। অর্থাৎ মানুষ জীবনে চলার ক্ষেত্রে যুক্তির ভিত্তিতে চলবে; স্রষ্টা বা ওহি বা ধর্মগ্রন্থের নির্দেশের ভিত্তিতে নয়। এটিও নাস্তিকতারই নামান্তর। এ দু’টি ছিল এনলাইটেনমেন্ট মুভমেন্টের মূল কথা। এ চিন্তারই প্রায়োগিক বিস্তার ঘটেছে ‘সেকুলারিজম’-এর নামে। কোথাওবা এর প্রয়োগ নাস্তিকতার রূপ নিয়েছে। যেমন রাশিয়া, চীন ও কমিউনিস্ট দেশগুলোতে। অন্যান্য দেশে এটা রাষ্ট্র ও শিাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়েছে; যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি দেশে সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কোনো শিাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মশিা দেয়া হয় না। তবে প্রত্যেক ধর্মীয় গোষ্ঠী নিজের অর্থে নিজস্ব শিাপ্রতিষ্ঠান চালাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তা করাও হচ্ছে। ভারতেও শিাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সরকারি কোনো স্কুলে ধর্মীয় শিার কোনো সুযোগ নেই। তবে বেসরকারি স্কুলে ধর্মশিা দিতে পারে। তবে তারা সরকারি সাহায্য নিতে পারবে না।

বলার অপো রাখে না যে, এ ধরনের ব্যবস্থার সাথে ইসলাম বা কোনো ধর্মেরই কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো ধর্মই এ ধরনের ব্যবস্থা সমর্থন করে না। ইসলামের কথা বলতে গেলে বলতে হয় যে, রাসূল সা: নিজেই মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার আইন ছিল ইসলামি শরিয়াহ। খেলাফতে রাশেদার সময়েও রাষ্ট্রের ভিত্তি ছিল ইসলাম ও ইসলামি আইন। একই কথা সত্য উমাইয়া, আব্বাসী ও উসমানী খিলাফতের ব্যাপারে এবং মোগল শাসিত রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে। আল্লাহ হচ্ছেন মালিকিন্ নাস (মানুষের শাসক, সূরা নাস) এবং মালিকাল মুলক (রাষ্ট্রের মালিক, সূরা আলে ইমরান)। কোনো মুসলিমই আল্লাহর চূড়ান্ত মতা অস্বীকার করতে পারে না।

সেকুলার ব্যবস্থা বিশ্বে কমবেশি ২০০ বছর প্রতিষ্ঠিত আছে। এতে তেমন কোনো কল্যাণ হয়নি। সেকুলারিজমের গর্ভ থেকে কমিউনিজম ও ফ্যাসিবাদের উদ্ভব হয়েছে। এ সব মতবাদ মানুষের কোনো কাজেই লাগেনি। সেকুলারিজমের কারণেই উগ্র পুঁজিবাদের জন্ম হয়েছে, যারা সারা বিশ্বের সম্পদ লুট করে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় নিয়ে গেছে। সেকুলার শাসকরাই বিশ্বে কলোনি বা উপনিবেশ বানিয়েছে। সারা বিশ্বকে বানিয়েছে দাস। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসব কলোনি মুক্ত হয়েছে। সেকুলার শাসকদের কারণেই বিশ্বে প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ হয়েছে। ভিয়েতনাম ও আলজিরিয়াসহ বহু দেশে রক্তপাত হয়েছে। বিশ্বের দরকার গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নৈতিকতা। সেকুলারিজম নয়।
সেকুলারিজমের প্রকৃত অর্থ না জানার কারণেই অনেক লোক নামাজ পড়েন, আবার সেকুলার।

সেকুলারিজমের অর্থ বুঝলে এ বিভ্রান্তি দূর হবে। এখন ইসলামি মন বা ধার্মিক মন এবং সেকুলার মনের পার্থক্য বলব। ‘ইসলামি মন’ হলো সেই মন, যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধান খোঁজে কুরআন ও সুন্নাহতে, পরে অন্য দিকে। অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে- তাদের ধর্মের মধ্যে সমাধান খোঁজে, পরে অন্য দিকে। কিন্তু ‘সেকুলার মন’ সমাধান খোঁজে বিভিন্ন পণ্ডিতের মতামতে, যুক্তরাষ্ট্র কী করে, রাশিয়া কী করে, চীন কী করে- এসব দিকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামমনাদের দায়িত্ব, সেকুলারমনাদের ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনা। এ জন্য সেকুলারদের ইসলামের মৌলিক কিছু বই পড়াতে হবে। আশা করি, এতে ভালো ফল হবে।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার (নয়া দিগন্তের সৌজন্য)

Logo-orginal