, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Avatar rtm

কওমি ভোট ব্যাংক: নানা জল্পনা-কল্পনা ও হিসাব-নিকাশ

প্রকাশ: ২০১৮-১২-১৫ ০৭:২৮:৩০ || আপডেট: ২০১৮-১২-১৫ ০৭:২৮:৩০

Spread the love

কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি, প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া সংবর্ধনা, রাজনৈতিক দল-বদলসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিভক্ত কওমি অঙ্গনের ভোট নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। কওমি আলেমদের এই বিভক্তি তাদের ভোট ব্যাংকেও বিভক্ত করবে কি না এ নিয়েই কানাঘুষা হচ্ছে।

বিশেষ করে মহাজোট সরকারের শেষ সময়ে ঠিক নির্বাচনের তফসিলে ঘোষণার আগেই কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি প্রদান এবং এ জন্য সরকার প্রধানকে কওমি আলেমদের ঐক্যের প্রতীক কওমি মাদরাসা বোর্ডের আয়োজনে শুকরিয়া মাহফিলের মাধ্যমে সংবর্ধনা প্রদানের ঘটনার প্রভাব নিয়েই নানা হিসাব-নিকাশ করছেন। এ নিয়ে কওমি অঙ্গনের বিভিন্নপর্যায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।

কওমি আলেমদের বেশির ভাগ শীর্ষস্থানীয় আলেমের মতে, কওমি আলেমদের দৃশ্যমান বিভক্তি প্রকৃত বিভক্তি নয়, এগুলো ইস্যুভিত্তিক ছোটখাটো বিভক্তি। কওমি সনদের স্বীকৃতি কওমি আলেমদের একটি ন্যায্য পাওনার বিষয়। এই ঘটনা ভোটের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

তবে অপর একটি ছোট অংশ মনে করছেন, কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রদানসহ কিছু রাজনৈতিক বিভক্তির কারণে কওমি অঙ্গনের ভোট ব্যাংকে এবার কিছুটা হলেও ব্যত্যয় ঘটবে।

জানতে চাইলে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড-বেফাকের মহাপরিচালক মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, আপনি যেটাকে কওমি আলেমদের বিভক্তি বলছেন তার প্রভাব ভোটে পড়বে কি না আমি বলতে পারছি না। তবে এটা বলতে পারি, কওমি সনদ পাওয়া নিয়ে আলেমদের মধ্যে কোনো বিভক্তি ছিল না। তবে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া নিয়ে যে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল সেটা ছিল চিন্তাগত। কারো কারো মতে ছিল এই সংবর্ধনা দেয়াটা কওমি চিন্তা-চেতনার পরিপন্থী। সেই সংবর্ধনার পর এখন আবার আমরা সবাই এক হয়ে গেছি। ফলে এক চিন্তার মধ্যেই আছি। ভোটের ক্ষেত্রেও আগের মতোই কওমি আলেমদের অবস্থান অভিন্ন থাকবে বলে মনে করি।

মাওলানা যোবায়ের আহমেদ আরো বলেন, কওমি সনদের স্বীকৃতি ও শোকরানা মাহফিলের কারণে আমরা কওমি আলেমরা সব আওয়ামী লীগ হয়ে গেছি এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আপনি দেখবেন, তাবলিগ ইস্যুতে আমরা কিন্তু প্রায় সব কওমি আলেম একই চিন্তায় আছি।

তিনি বলেন, কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রদান সরকারের কোনো কাজ না, এটা ন্যায্য পাওনা দেয়া। এতটুকু বলতে পারি, অন্য সরকার সেটির যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারেনি, এই সরকার সেটির মূল্যায়ন করেছে। মূল্যায়নের অর্থ এই নয় যে, এজন্য তাকে ভোট দিতে হবে।

তবে বেফাকের মজলিসে আমেলার সদস্য ও ইসলামী ঐক্যজোট’র (নেজামী-ফয়জুল্লাহ) যুগ্মমহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান কিছুটা ভিন্ন মত প্রকাশ করে বলেন, কওমি ভোট ব্যাংকের হিসাব-নিকাশে এবার কিছুটা ব্যত্যয় ঘটতে পারে। কারণ, কওমি সনদ প্রদানের কারণে মহাজোট সরকারের ব্যাপারে কওমি আলেমদের মনোভাবের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। এর প্রভাব ভোটের ক্ষেত্রেও পড়তে পারে।
অতীতে স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কওমি আলেম উলামা, ছাত্রশিক্ষক কওমি শুভাকাঙ্খীদের ভোট ব্যাংক বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করা হয়।

জানতে চাইলে বেফাকের মজলিসে শূরা ও আমেলার সদস্য, বারিধারার যাকারিয়া রিসার্স ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুফতি মিজানু রহমান সাঈদ বলেন, কওমি সনদ ইস্যুটি রাজনৈতিক ইস্যু ছিল না। সাধারণ আলেমরাও এটিকে রাজনৈতিক বিষয় মনে করেনি। ফলে ভোটের ক্ষেত্রে এই ইস্যু মৌলিক কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি না। এই স্বীকৃতি নিয়ে আলেমরা তাদের নীতি আদর্শ বিমুখ হয়ে গেছে এটা মনে করার কারণ নেই। অবশ্যই দু’য়েকজন বা ছোট একটি অংশ ব্যতিক্রম করতে পারে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ইস্যু ও ধর্মীয় স্বার্থকে সামনে রেখেই সব কওমি আলেম প্রার্থী নির্বাচন ও ভোট দেবে বলে আমি মনে করি।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর সভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর কাছে কওমি আলেমদের বিভক্তির বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কওমি আলেমদের চিন্তাগত এসব ছোটখাটো বিভক্তি ভোটের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না। মহাজোট সরকারের সাথে দু’চারজন আলেমের আঁতাত কিংবা সমঝোতার সাথে সাধারণ কওমি আলেম ওলামা ও শুকাকাঙ্খীদের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, কওমি সনদের স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি আমাদের প্রতি সরকারের কোনো এহসান বা অনুকম্পা নয়, এটি আমাদের প্রাপ্য জিনিস। এজন্য সনদ ইস্যু ভোটের রাজনীতিতে কোন হেরফের ঘটাবে না। আগের মতোই কওমি আলেমরা ঈমান-আকিদা রক্ষার স্বার্থেই তুলনামূলক ভাল প্রার্থীকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। কারণ সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস, আল্লাহর রাসূলের অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান নিশ্চিত করার দাবিসহ হেফাজতের ১৩ দফা ঈমানি দাবির বিষয়টি তামাদি হয়ে যায়নি। ভোট প্রয়োগের ক্ষেত্রে অতীতের মতোই এই বিষয়গুলো অবশ্যই কওমি আলেম ওলামা, ছাত্র-শিক্ষক শুভাকাঙ্খীরা বিবেচনায় আনবেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের আনুমানিক ২০ হাজার কওমি মাদরাসা রয়েছে। এতে আনুমানিক ২০ লাখ কওমি ঘরানার আলেম-ওলামা সারা দেশে ছড়িয়ে আছেন বলে ধারণা করা হয়।

সূত্র: উম্মাহ২৪

Logo-orginal