, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin admin

শিক্ষকের প্রতি পাইলট ছাত্রের সম্মান আর শ্রদ্ধা দেখে বিমানের সব যাত্রীর হৃদয় ছুঁয়ে গেল”

প্রকাশ: ২০১৮-১২-০৩ ০৯:৩৫:১৭ || আপডেট: ২০১৮-১২-০৩ ০৯:৩৫:১৭

Spread the love

শিক্ষকের প্রতি পাইলট ছাত্রের সম্মান আর শ্রদ্ধা দেখে বিমানের সব যাত্রীর হৃদয় ছুঁয়ে গেল"
ছবি, সংগৃহীত।

সোশ্যাল ডেস্কঃ কিছু দৃশ্য দেখলে মন এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। সেইরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে তার্কিশ এয়ারলাইন্সে। বিমানটি পাইলট জানতে পারলেন, এই ফ্লাইটেই একজন যাত্রী আছে যাকে তিনি চেনেন। খুব ভাল ভাবেই চেনেন। সেই যাত্রী আর কেউ নন, পাইলটের শিক্ষক।

আজ এত বছর পর শৈশবের সেই শিক্ষাগুরু বিমানে যাচ্ছেন। পাইলটের কাছে মনে হলো, শিক্ষকের প্রতি সম্মান জানানো উচিত। তিনি এনাউন্সমেন্ট মাইকে শিক্ষকের প্রতি স্পেশাল একটা মেসেজ পড়লেন। পুরো বিমানের সব যাত্রী শুনলো, একজন পাইলট তার শিক্ষককে এতটাই ভালবাসেন যে ব্যাতিক্রমধর্মী স্টাইলে শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা নিবেদন করলেন।

সাধারণত বিমানে নিরাপত্তাজনিত কারণে এমনিতেই যাত্রা শুরুর পূর্ব মুহুর্তে অনেক বোরিং কথাবার্তা শুনতে হয় যাত্রীদের। সিট বেল্ট বাঁধো, ফোন অফ করো, বিমান যাত্রা শুরু করলে এই করো না, সেই করো না। নিয়মের বালাইয়ের অন্ত নেই। রোজকার বোরিং মেসেজের বদলে এদিন তারা শুনলেন অদ্ভুত সুন্দর কিছু কথা। পাইলট গুছিয়ে শিক্ষকের উদ্দেশ্যে মেসেজ পড়লেন। আর এই বক্তব্যে শুনে বয়স্ক শিক্ষকই শুধু আবেগ আপ্লুত হলেন না, পুরো বিমানের সব যাত্রীর হৃদয়ও ছুঁয়ে গেল যেন সেই বার্তা। হয়ত অলক্ষ্যে, অবচেতনে সবাই নিজেদের শৈশবের শিক্ষকদের কথা স্মরণ করলেন এই সুযোগে। আবেগে অনেকের চোখই ছল ছল করে উঠল।

পাইলট তার শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “প্রিয় যাত্রীরা, আমি আপনাদের ক্যাপটেন বলছি। আজকের দিনটি খুবই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিবস। কারণ, আমাদের সাথে আছেন একজন বিশেষ যাত্রী। 

তিনি আমার শিক্ষক, যিনি আমাকে পাইলট হতে শিখিয়েছেন। তিনি বিশ বছর ক্যাপটেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তারপর দশবছর শিক্ষকতা করেছেন। তিনি আমাকে এবং আমার মতো আরো অনেক পাইলটকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন।

শিক্ষকের সামনে পাইলট সেই ছাত্র।
ছবি, সংগৃহীত।

আমার ক্যাপটেন, আমার শিক্ষক সাদিক ওনিউর। আমি খুবই সম্মানিতবোধ করছি, আপনি আমাদের সাথে থাকায়। আমি কতটা আনন্দিত বোঝাতে পারব না, আপনি আমার শিক্ষক ছিলেন এজন্যে। আমি আনন্দিত আপনি আমার পিতার মতো একজন শিক্ষক ছিলেন।”

পাইলট তার আসনে বসেই যখন এই কথাগুলো বলছিলেন, তখন একদল বিমান ক্রিউ ফুলের ঝুড়ি নিয়ে আসছিল।

পাইলট তখন বললেন, “তার্কিশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে আমি সকল শিক্ষক এবং আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। প্লিজ স্যার, আপনি ফুলগুলো গ্রহণ করুন।”

আকস্মিক এই সারপ্রাইজে শিক্ষক একই সাথে অভিভূত হলেন, আবেগ আক্রান্ত হলেন এবং তার চোখে জলের বাঁধ ভাঙলো। বিমানের স্টাফরা এইসময়ে এসে ফুলের ঝুড়ি উপহার দিল শিক্ষককে। শিক্ষক তার সিট বেল্ট খুলে দাঁড়িয়ে গ্রহণ করলেন ফুল। তার মুহুর্তখানিক পরে পাইলট নিজেও তার আসন ছেড়ে বিমানেএ যাত্রী বোর্ডিংয়ে প্রবেশ করলেন, জড়িয়ে ধরলেন শিক্ষককে!

অভূতপূর্ব এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হয়। সকলেই ভীষণ খুশি হন দেখে যে, চাইলে আমরা একটু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেই কিভাবে আমাদের প্রিয় মানুষগুলোকে খুশি করে দিতে পারি। অপ্রত্যাশিত এই ভালবাসায় শিক্ষক নিশ্চয়ই মনে মনে ভেবেছেন, এই মানবজনম ধন্য, একজন শিক্ষকের এর চেয়ে বেশি কি আর চাওয়া থাকে। ছাত্রের এই ভালবাসা তিনি আজীবন মনে রাখবেন।

আজকালকার দিনে আমাদের মধ্যে সম্পর্কগুলো একটু কঠিন, জটিলতর হয়ে গেছে। আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশে একটু যেন কৃপণ হয়ে গেছি৷ অথচ সামান্য কৃতজ্ঞতাবোধ কি অসাধারণ মুহুর্তের অবতারণা ঘটাতে পারে। নিশ্চিন্তেই বলা যায়, বিমানের প্রত্যেকটা যাত্রীও নিজের শিক্ষকের কথা স্মরণ করেছেন। হয়ত কেউ কেউ এই ঘটনার পর নিজের শিক্ষককেও ছোট করে একটা ধন্যবাদ দিয়ে আসবেন। যাত্রীদের অনেকের চোখে যে জলের ছটা দেখা গেছে সেটা তো মিথ্যে নয়। 

শিক্ষকরা আমাদের জীবনকে সারাজীবনই বিভিন্নভাবে শেপ করেন তাদের কথা দিয়ে, কর্ম দিয়ে, শিক্ষা দিয়ে। বাবা মায়ের পরে আমরা আজ যে যেই অবস্থানেই আছি, তাতে করে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে শিক্ষকের অবদানকে অস্বীকার কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু জীবনের নাটকীয় চক্রে আমরা কতজনই সুযোগ পাই, উপলব্ধি করি যে, আমাদের জীবনের বাঁক বদলে অবদান রাখা এই শিক্ষকদেরও একটু ধন্যবাদ দেয়া উচিত? 

কিছুদিন আগে আমার হাইস্কুলের এক শিক্ষক মারা যান। সেখানে গিয়ে দেখলাম, আমার শৈশবের কারিগরেরা আজ সকলেই প্রবীন হয়ে গেছেন। চুল দাঁড়ির শুভ্রতায় তাদের বার্ধক্য স্পষ্ট। এক প্রবীন শিক্ষক তো বলেই ফেললেন, “তোরা তো আর আসিস না। আসিস সময় করে পারলে। দেখিস আবার বেশি দেরি যেন না হয়। পরে এসে হয়ত আর জীবিত পাবি না।”

শুনে এত খারাপ লেগেছে সেদিন! নিজের জন্যও কিছুটা ধিক্কার জমা হয়েছে। কিন্তু, তার্কিশ এয়ারলাইন্সের পাইলট শিখালেন, একটা ধন্যবাদ, একটু কৃতজ্ঞতাবোধের জন্যই আমাদের শিক্ষকরা কতটা আনন্দঅশ্রু জমিয়ে রাখেন। আজকের দিনে সকল শিক্ষকদের প্রতি ভালবাসা। আপনারাই সত্যিকারের হিরো, আমাদের সুপারম্যান।

#শিক্ষণীয় পোস্ট সংগৃহীত সোশাল মিডিয়া থেকে।

Logo-orginal