, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

এই নারী আমাদের পারিবারিক বন্ধন ভেঙে দিয়েছে, তাই মৃত্যুদন্ড

প্রকাশ: ২০১৯-০১-২৯ ১৪:৩৫:৪৯ || আপডেট: ২০১৯-০১-২৯ ১৪:৩৫:৪৯

Spread the love

রংপুরে চাঞ্চল্যকর অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা হত্যা মামলায় বেঁচে থাকা একমাত্র আসামি স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

ঘটনার মাত্র ১০ মাসের মাথায় আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টায় রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এবিএম নিজামুল হক এ রায় ঘোষণা করেন।

মামলার অপর দুই আসামি দীপার পরকীয়া প্রেমিক কামরুল ইসলাম রংপুর কারগারে ১০ নভেম্বর রহস্যজনকভাবে মারা যান, এবং রথিশের সহকারী মিলন মোহন্ত গত বছর ১৪ এপ্রিল মারা যান হাসপাতালে।

নিহত বাবু সোনা জাপানি নাগরিক হোসিও কোনি ও মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলার সরকার পক্ষের প্রধান কৌসুলী,।

তিনি রংপুর বিশেষ জজ আদালতের বিশেষ পিপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

রায় ঘোষণার পর আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ‘এ নারী আমাদের পারিবারিক বন্ধনে আঘাত করেছেন। পারিবারিক বিশ্বাস, আস্থা ও নির্ভরতা ভেঙে দিয়ে অমানবিক নৃশংসভাবে স্বামীকে হত্যা করেছেন। তাই তিনি নারী হলেও তাকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।’

এদিকে, আজ সকাল ৯টা ৩৪ মিনিটে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে কঠোর নিরাপত্তায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় নিয়ে আসা হয় দীপা সরকারকে।

আদালতে আনার সময় এবং পরে রায় ঘোষণার সময়ও দীপা স্বাভাবিক অবস্থায়ই দেখা যায়।

আদালত সূত্র জানিয়েছেন, গত বছরে ২৯ মার্চ রাত ১০টার দিকে রংপুর মহানগরীর তাজহাট বাবু পাড়ায় অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিক এবং তার প্রেমিক কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগী মিলন মোহন্ত।

এরপর রথীশের বিছানায় দীপা ও কামরুল রাত কাটায়। তারা পরের দিন ৩০ মার্চ সকাল ১১টার মধ্যে দিনের আলোতে বাড়ির আলমারিতে লাশ ভর্তি করে বাইরে বের করে গুমের উদ্দেশ্যে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখে। এ ঘটনায় রথীশের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক একটি হত্যা মামলা করেন।

এদিকে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে জঙ্গি, দেবোত্তর সম্পত্তিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাবু সোনা নিখোঁজের নাটক সাজিয়ে বিভিন্ন প্রপাগাণ্ডা চালায় দীপা ভৌমিক ও প্রেমিক কামরুল ইসলাম। পাঁচ দিন পর ৩ এপ্রিল দীপা ভৌমিককে র‌্যাব তুলে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বাবু সোনাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

এক পর্যায়ে তার দেখিয়ে দেয়া নগরীর তাজহাট মোল্লাপাড়ার পরিত্যক্ত বাড়ির দরজা জানালাবিহীন রুমের মাটির নিচে বস্তাবন্দি অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে।

২৬ মার্চ কামরুল ও দীপা নিজ স্কুলের দুই শিক্ষার্থী রোকন ও সবুজকে দিয়ে কামরুলের বড় ভাই খাদেমুল ইসলামের পরিত্যক্ত বাড়ির দরজা জানালাবিহীন ঘরের মেঝে খুঁড়ে গর্ত করে রেখেছিল।

এ ঘটনায় বাবু সোনার ছোটভাই সাংবাদিক সুশান্ত ভৌমিক থানায় হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় স্ত্রী দীপা ভৌমিক ও কামরুল ইসলাম। মামলার আসামী রথিশের সহকারী মিলন মোহন্ত গত বছর ১৪ এপ্রিল হাসপাতালে এবং প্রধান আসামি স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক কামরুল ইসলাম রংপুর কারগারে ১০ নভেম্বর রহস্যজনকভাবে মারা যায়।

এই মামলায় ২১ অক্টোবর চার্জ গঠন করে আদালত। পরবর্তীতে ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক আজকে রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন।

রায় উপলক্ষে আদালতে উপস্থিত এ মামলার বাদি ও নিহতের ভাই সাংবাদিক সুশান্ত ভৌমিক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, রায়ে তিনি খুশি হয়েছেন তবে তিনি চান যেন দ্রুত তা কার্যকর করা হয়।

রংপুরে অতি পরিচিত মুখ খুন হওয়া অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনার একমাত্র পুত্র ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করছেন। একমাত্র মেয়ে রংপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। উৎসঃ নয়া দিগন্ত।

Logo-orginal