, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

কুরআনের হাফেজ ডাঃ ফাহাদকে হারিয়ে এখনো কাঁদছে পরিবার ও সহপাঠিরা

প্রকাশ: ২০১৯-০১-২৭ ১৮:০০:২৮ || আপডেট: ২০১৯-০১-২৭ ১৮:০১:২৯

Spread the love

চট্টগ্রামঃ মানুষ মাত্রই মৃত্যুস্বাদ গ্রহণ করিবে” বাণী চিরন্তন। তবে কারো মৃত্যু শোকে পাথর হয়ে যায় হাজারো মানুষ।

তেমন এক মৃত্যু নিয়ে পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে চলছে হ্রদয় বিদারক দৃশ্য।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিদিন শোক জানিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছে প্রিয়জনরা।

হাফেজে কুরআন ডাঃ জেবাইদুল হক, নগরীর বায়তুশ আদর্শ মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্র। তার অমায়িক আচরণে মুগ্ধ ছিল শিক্ষক ও সহপাঠীরা।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী ডাঃ ফাহাদের জন্য কাঁদছে চমেকের সিনিয়ার জুনিয়ার সবাই।

রোহিঙ্গাদের সেবা দিয়ে ফেরার পথে চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ডা. জোবাইদুল হক ফাহাদ (২৮)। মোটরসাইকেলে চট্টগ্রামে আসার পথে সাতকানিয়া উপজেলার হাসমতের দোকান এলাকায় হানিফ পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়।

হাফেজ ডা. ফাহাদের এমন অকাল মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বইছে শোকের ছায়া। ডা. ফাহাদ ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী হলেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল।

৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী অসিম বড়ুয়া বলেন, সে অন্য ধর্মের হলেও তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো ছিল। একদিন বন্ধুদের কাছে জানতে পারি ফাহাদ কোরআন মুখস্ত করেছে। সেই থেকে তার সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহটা বেড়ে যায়। আজ হঠাৎ শুনলাম ফাহাদ নেই। খুব কষ্ট লাগছে। তার মৃত্যুতে ভার্চুয়াল জগতে এখন চলছে শোকের ছায়া। তার শিক্ষক, সহপাঠী ও বন্ধুরা সবাই শোকাহত। তার এমন অকালমৃত্যু আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না।

এ ছাড়া চমেক হাসপাতালের ডা. রেজাউল করিম শিকদার নামে আরেক চিকিৎসক তার ফেসবুক টাইমলাইনে লেখেন, ‘মেডিকেলে ছয় বছর এমবিবিএস লাইফের আমার প্রথম এবং সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল ফাহাদ। এত্ত এত্ত স্মৃতি তার সঙ্গে কীভাবে ভুলব? আমার রক্তের ভাই না হলেও ভাইয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না সে। সবাই দোয়া করবেন আমার ভাইকে আল্লাহ যেন বেহেশত নসিব করেন।’

বন্ধু বা পরিচিতমহল ছাড়াও তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে পরিবারের বড় সন্তান হাফেজ ডা. ফাহাদকে হারিয়ে শোকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছেন বাবা প্রকৌশলী মঞ্জুরুল হক আর মা নাড়িছেঁড়া ধন হারানো বেদনায় বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

বারবার শুধু বলছেন, ‘আমার বাবারে এনে দাও। আমার বাবারে ছাড়া কেমনে দিন কাটাব? বাবা আমার কেমনে আমাকে ছেড়ে চলে গেল।’

কোনোভাবেই শান্ত করা যাচ্ছে না মায়ের মন। মায়ের আর্তচিৎকারে এলাকায় এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

নিহত ডা. ফাহাদের বাবা প্রকৌশলী মঞ্জুরুল হক অশ্রসিক্ত কণ্ঠে বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘কোরআনের হাফেজ ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। সে বিসিএস ক্যাডার হয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু বিধির একি লীলা খেলা, সবকিছুই শেষ হয়ে গেল। আশা পূরণ না করেই এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে গেলি। কোথায় আমার জানাজার ইমামতি করবি তুই, আর আজ তোর জানাজা পড়তে হলো আমাকে। এমন কথা তো ছিল নারে বাপ। তোকে নিয়ে ছিল অনেক স্বপ্ন। এ স্বপ্ন এভাবে এক মুহূতে নিঃশেষ হয়ে যাবে কোনোভাবেই তা মানতে পারছি না।’

বাবা-মা ছাড়াও তার আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা তার আকস্মিক মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। শেষবারের মতো তাকে একনজর দেখতে তার বাসায় এসে তারা চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। তাদের আহাজারিতে এলাকার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় বাদ জোহর নগরীর সিএনবি ফায়ার সার্ভিস মাঠে ডা. ফাহাদের জানাজার নামাজ শেষে বেসিক শিল্পনগরী আফজল নগরে তাকে দাফন করা হয়।

Logo-orginal