, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

চট্টগ্রামে উচ্চবিত্ত পরিবারের মেধাবী ছাত্রদের দলে টানছে হিযবুত তাহরীর

প্রকাশ: ২০১৯-০১-১০ ০৯:৫৯:২৬ || আপডেট: ২০১৯-০১-১০ ০৯:৫৯:২৬

Spread the love

চট্টগ্রামঃ উচ্চবিত্ত পরিবারের মেধাবী স্কুল ছাত্রদের দলে টানছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রির। ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়ে কিশোর বয়সেই কোমলমতি ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পরে দাওয়াতি কাজ, লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার লাগানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব কিশোর-তরুণদের। এতে সম্ভবনায়ময় মেধাবী ছাত্ররা বিপদগামী হচ্ছে। খবর দৈনিক পুর্বকোণের ।

গত রবিবার রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানার পাশ্ববর্তী কবি নজরুল ইসলাম সড়ক থেকে সাবকাত আহম্মেদ (২১) নামের হিযবুত তাহরীরের এক সংগঠককে গ্রেপ্তার করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম শাখার সদস্যরা। গ্রেপ্তার সাবকাত হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম সম্পর্কে পুলিশকে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। সাবকাত নগরীর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি’র (ইউসিটিসি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে বিএসসি (সম্মান) শ্রেণীর তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। সে সঙ্গে তিনি হিজবুত তাহরীর চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

চট্টগ্রাম শহর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো জানিয়ে তিনি পুলিশকে বলেন, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অনেক কর্মী সংগঠক আছেন। নগরীর বিভিন্ন জনাকীর্ণ মোড়ে এক হয়ে তারা নিয়মিত শলা-পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত নেন। কখনও সকালে খেলার ছলেও নিজেদের সাংগঠনিক কাজ সেরে নেন। নিজেদের যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করেন ইমো ম্যাসেঞ্জার। ফলে বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ এড়িয়ে যায়।

সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের প্রধান উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, সাবকাত আহম্মেদ নগরীর পাথরঘাটার আরসি চার্চ রোডের ‘ডাউন টাউন সিপিডিএল কাজরি রমিজ’ ভবনের মালিক কাওসার আহমেদ চৌধুরীর ছেলে। তার বাড়ি পটিয়া উপজেলার খরনা ইউনিয়নের মুজাফফরাবাদে। উচ্চবিত্ত বাবা কাওসার আহমেদ চৌধুরীর তৈরি পোশাক এক্সেসরিজের ব্যবসা রয়েছে। সাবকাতের একমাত্র বড় ভাই মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাবকাত বলেন, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে লেখাপড়া করার সময়ই মূলত হিযবুত তাহরীরের সংগঠকদের সঙ্গে তার দেখা হয়। তখনই তিনি এ কাজে সম্পৃক্ত হন। দশম শ্রেণীতে পড়াকালেই সক্রিয় সংগঠকে পরিণত হন। ফলে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও সংগঠনে অতি সক্রিয় হওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষায় তিনি জিপিএ ৩ দশমিক ৯ পান।
সাংগঠনিক কাজের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ফজরের নামাজের আগে পরে নগরীর আদালত ভবন, কোতোয়ালী মোড়, নিউমার্কেট, কাজীর দেউড়ি ও লালখান বাজার এলাকায় পোস্টার লাগান তিনি। এসব জায়গায় দিনের বেলা হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। ফলে পোস্টার লাগানোর জন্য ওই জায়গাগুলোই বেছে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, সাধারণত ফজরের আজান দেওয়ার সময় নৈশপ্রহরীরা আর সক্রিয় থাকেন না। তাছাড়া পোস্টার লাগানোর ব্যাপারে নৈশ প্রহরীদের কাছ থেকে কখনও বাধা আসেনি।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে নগরীর বিভিন্নস্থানে সরকারবিরোধী বক্তব্য-সম্বলিত পোস্টার লাগানো হয়। হিযবুত তাহরীরের ব্যানারে লাগানো এসব পোস্টার বেশিরভাগই সাবকাতের নেতৃত্বে হয়েছে বলে পুলিশকে জানান তিনি। পুলিশকে তিনি বলেন, নিজেদের আলোচনা ও প্রচারণায় ক্ষমতাসীন সরকারকে হটিয়ে ‘খিলাফায় রাশিদাহ’ প্রতিষ্ঠার বিষয় গুরুত্ব পায়। তাদের লক্ষ্য হলো গণতন্ত্রবিরোধী বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে দলে টানা। তবে মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রদের বিষয়টি বোঝানো অনেক সহজ হয়। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রদেরই এক্ষেত্রে বেশি সক্রিয় দেখা যায়।

কীভাবে হিজবুত তাহরীরে আসলেন – পুলিশের এমন জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বলেন, তাজোয়ার নামের নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার এক যুবকের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পরিচয় সাবকাতের। নগরীর পাথরঘাটা সেন্টপ্লাসিডস স্কুলের মাঠে খেলতে গিয়ে তার সাথে পরিচয়। তাজোয়ার এখন চাকুরি করেন। মূলত তার মাধ্যমেই হিজবুত তাহরীরের অন্য সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে সাবকাতের।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে হিজবুত তাহরীর। সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক এই সংগঠনের নেতৃত্বে দেন। উচ্চশিক্ষিত, মেধাবী ও উচ্চবিত্ত তরুণদের টার্গেট করে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসা হিজবুত তাহরীরকে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। প্রথমদিকে নাশকতামূলক কর্মকা-ে সম্পৃক্ততা না থাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হিজবুত তাহরীরকে গুরুত্ব দেয়নি। পরে প্রকাশ্যে মিছিল-মিটিং ও সরকারবিরোধী কর্মকা- শুরু করলে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে হিজবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয়।

Logo-orginal