, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Avatar rtm

বিগত সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচনে এত প্রার্থী কোথায় ছিল?

প্রকাশ: ২০১৯-০১-৩১ ২০:৫৩:৪১ || আপডেট: ২০১৯-০১-৩১ ২১:২৩:২০

Spread the love

মো: মোস্তফা কামাল নিজামী: বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উপমহাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিশ্বরাজনীতিতে আলোচিত ও আলোকিত রাষ্ট্রনায়কের জায়গা করে নিয়েছেন।

নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা যে সরকার গঠন করেছেন, সেখানে দলের অভিজ্ঞ প্রবীণ মন্ত্রীদের যেমন রাখেননি তেমনি আত্মীয়স্বজন কাউকেই ঠাঁই দেননি। যার কারনে এই নতুন মন্ত্রীসভা সবার কাছে প্রশংসীয় ও গ্রহলযোগ্য হয়েছে। এবং মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা সংসদে পালন করার ঘোষণা দিয়ে তাদের জায়গা পরিষ্কার করেছে। ১৪ দলের শরিকদেরও মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে বিরোধী দলে যেতে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে। এবারের সংসদে সরকারেও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী শক্তি, বিরোধী দলেও মুক্তিযুদ্ধের শক্তি।

আগামী মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষাণা হওয়ার সাথে সাথে চলছে প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণার হিড়িক। কর্মী সমর্থকরা তাদের নিজ নিজ নেতাদের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেক জলপ্না-কল্পনা চললেও কিন্তু মনোনয়ন নিয়ে সামনে সবার দৃষ্টি এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকে, সবার বিশ্বাস এই নির্বাচনেও প্রার্থীতা বাছায়ে তিনি চমক রাখবেন।

বিএনপি আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। আর বিএনপির এমন ঘোষাণাকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাচনে একাদিক প্রার্থীর সমাগমও দেখা যাচ্ছে বেশি। চট্টগ্রামেও সবকটি উপজেলায় ১০ থেকে ১২ জন প্রার্থী মনোনয়নের জন্য আবেদন ফরম জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও এর ব্যতিক্রম নয়। গত ২৭ জানুয়ারি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নিয়ে এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সাতকানিয়া উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য দলীয় সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে আবেদন ফরম জমা দেন চট্টগাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ নুরুল আবছার চৌধুরী, আব্দুল মোনাফ, মোস্তাক আহমদ আঙ্গুর, ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান, গোলাম ফারুক ডলার, কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, বশির আহমদ চৌধুরী, ফয়েজ আহমদ লিটন, জসিম উদ্দিন, আবু ছালেহ ও সারওয়ার উদ্দিন চৌধুরী, এরফানুল করিম চৌধুরী।

বিগত ২০১৪ ইং সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সেই সময় জামাত বিএনপির সৃষ্ট বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশের কারনে কেউ নির্বাচন করতে এগিয়ে আসেন নি, দলীয় প্রার্থী হওয়ার জন্য কাউকে খুজে পাওয়া যায় নি, তখন নুরুল আবছার চৌধুরী দলের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে এগিয়ে আসেন নির্বাচন করতে। এখন যে প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে কিন্তু আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে এসব নেতাদের কোন উৎপাতই ছিলো না, অথচ আর এখন দলের ভাল অবস্থান দেখে সাতকানিয়ায় সবাই এখন প্রার্থী হয়ে বসে আছে।

সরকারী দল আওয়ামী লীগের উচিত হবে সৎ, ত্যাগী, নির্লোভ ও সাদামাটা জীবনের রাজনীতির পূর্বসূরিদের আদর্শকে লালন করে এমন ত্যাগী ও সৎ নেতাকর্মীকে আগামী উপজেলা নির্বাচনের জন্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা। আজ সমাজের চতুর্দিকে দেশজুড়ে যত দূর চোখ যায়, কেবল আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ দেখা যায়। দলের দুঃসময়ে যাদের কোন উৎপাতই ছিল না তারাও আজ আওয়ামী লীগ। অনেক সুবিধাবাদীরা ক্ষমতার ভাগবাঁটোয়ারা নিতে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বা ছত্রচ্ছায়ায় ব্যক্তিগত মুনাফা লুটতে এসে ভিড় করেছে।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত হবে আদর্শিক, ত্যাগী দুঃসময়ের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা। আওয়ামী লীগকে দাম্ভিক হওয়া যাবে না, ক্ষমতার দম্ভে হুঁশ হারানো যাবে না, অতীতের দুঃসময়কে ভুলে যাওয়া যাবে না, দুঃসময়ের কঠিন যুদ্ধের পথের সাথীকে ভুলে যাওয়া যাবে না। বরং সেই বেদনার জায়গা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে দলের সবকটি সিদ্ধান্তে ইতিবাচক ও ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে হবে।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর খুনিদের কাছে বিভিন্ন বাহিনীকে নত হতে দেখা গেছে যেমন, তেমনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকেও প্রতিরোধের ডাক দিতে দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করাই হয়নি, খুনি মোশতাক থেকে সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। নির্বাসিত জীবন দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম প্রতিরোধযুদ্ধের ডাক দিয়ে হাজার হাজার তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ইজ্জত বাঁচালেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কোনো বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। পিতৃহত্যার বিচারের দাবিতেও না।
সেনাশাসকদের অত্যাচার-নির্যাতন উগ্রপন্থি ও অতি বামদের প্রতিহিংসার রাজনীতিও সেদিন বঙ্গবন্ধুবিদ্বেষী ও আওয়ামী লীগবিরোধিতায় অবস্থান নিয়েছিল। সেদিন অনেকেই মনে করেছিলেন আওয়ামী লীগ শেষ। বঙ্গবন্ধু যেমন শেষ হননি, তাঁর নাম যেমন ২১টি বছর সেনাশাসকরা উচ্চারণ না করতে দিয়ে মুছে ফেলতে পারেনি দেশের মাটি ও মানুষ থেকে, তেমনি আওয়ামী লীগকেও নিশ্চিহ্ন করা যায়নি।
আজকে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ যদি মনে করেন বিএনপি একেবারেই শেষ। সেটি হবে তোষামোদকারীদের, সুযোগ-সন্ধানীদের চাটুকারিতার অংশবিশেষ। আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপিই থাকবে। যদিও নেতৃত্বহীন বিএনপি এখন নানামুখী চাপের কাছে নত, বিভ্রান্ত এবং দুর্বল হয়ে পড়েছে। তারা যদি দল গোছানো ও দীর্ঘমেয়াদি রণকৌশল নিয়ে রাজনীতির পথ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধের মীমাংসিত সত্যকে অস্বীকার না করে, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তাহলে একদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের স্মরণ করতে হবে আজকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার যেসব লোক দলটির ছায়ায় এসে দাঁড়িয়েছে, পঁচাত্তরের পর ২১ বছর তারা কোথায় দাঁড়িয়েছিল? আওয়ামী লীগের মহাদুঃসময়ে ওরা কোথায় ছিল? এমনিক ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রতিহিংসার বিষের ছোবলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যখন ঘরবাড়িছাড়া হয়েছে, একের পর এক হত্যার শিকার হয়েছে, কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, গ্রেনেড বোমায় রক্তাক্ত হয়েছে- তখন এসব সুবিধাভোগী কোথায় ছিল?

আওয়ামী লীগকে অতীত ভুললে চলবে না। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য রেখে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও দলের দুঃসময়ে যেসব কর্মীরা নিরন্তর পথ হেঁটেছেন; আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাদেরকেই মূল্যায়ন করা উচিত ।

রোদে পুড়ে যাওয়া ত্যাগী কর্মীদের চেহারা সুবিধাভোগীদের রূপের আগুনে হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। অবস্থাটা এমন হয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রাজকীয় সমাদর থেকে সব সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে মৌসুমি পাখি, বসন্তের কোকিল, মৌমাছিরা। আর দল ক্ষমতার বাইরে থাকলে রাজপথে বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে আন্দোলনের মিছিল থেকে পুলিশের লাঠিপেটা খেয়ে জেলে যাবে ত্যাগী কর্মীরা। সেই ত্যাগীদের কে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয় কি?

একটা কথা মনে রাখবেন দলের দুঃসময়ে সেই ত্যাগীরা দলকে ধরে রাখবে, হাজার কষ্ট পেলেও তাঁরা দল ছেড়ে পালাবে না। দলের আদর্শবাদী যারা আছে তাঁরা সুযোগ-সুবিধা না পেলেও, মূল্যায়ন না পেলেও সুসময়-দুঃসময় সব সময় দলের জন্য নিবেদিত আছে ও থাকবে সবসময়। বর্তমান মনোনয়ন ব্যাপারে আমরা দেখি, কেউ মনোনয়ন পান অর্থবিত্তশালী হওয়ার কারণে, কেউ পান নেতার হাত ধরে, কেউ পান তেলবাজি বা তোষামোদি করে। তাহলে দীর্ঘদিন যারা দল করলেন তাদের প্রাপ্তিই বা কই? তাঁরা কি শুধু দলের জন্য দিয়ে যাবেন ? দল থেকে কি তাদের কিছুই পাওয়ার নেই?

গণমুখী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের শক্তির উৎসই হচ্ছে তার দুঃসময়ের সৎ, ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা। আর সুসময়ের বন্ধুরা বিপদে পড়লে নিরাপদে কেটে পড়ে। বাতি জ্বালিয়েও তখন তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। এসব বিবেচনায় রেখেই প্রাণের প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সৎ, ত্যাগী ও দুঃসময়ের কর্মীদের মনোনয়ন দিয়ে দলকে সংগঠিত ও শক্তিশালী রাখা উচিত বলে মনে করি। আর সেই বিবেচনায় সৎ, ত্যাগী, পরিচ্ছন্ন রাজনীতির আইডল ও দুঃসময়ের নির্যাতিত নেতা হিসেবে নুরুল আবছার চৌধুরী আসন্ন সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য গ্রহনযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তায় সবার শীর্ষে।

Logo-orginal