admin
প্রকাশ: ২০১৯-০২-০১ ১১:১৮:১০ || আপডেট: ২০১৯-০২-০১ ১১:১৮:১০
জুমাবার না শুক্রবার? অনেকদিন থেকে এই বিষয়ে লেখার জন্য চেষ্টা করে আসছিলাম, তবে দুনিয়াবী ব্যস্ততা এমন উত্তম কাজে হাত দেওয়া থেকে বার বার পিছিয়ে রেখেছে, আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আজ জুমাবার বাদ ফজর লেখাটি সম্পন্ন করার তৌফিক দিলেন ( আলহামদুলিল্লাহ)।
জুমাবার না শুক্রবার” তাহা নিয়ে তথ্য পেতে গুগুলেও সার্চ দিয়ে দেখেছি, না কোন লেখা চোখে পড়েনি। যদি কোন ভাইয়ের নজরে আসে দয়া করে নীচের ইমেইলে জানানোর অনুরোধ রহিল ।
তবে আমি (লেখক) শুক্রবার নয় আল্লাহ ভাষায় জুমাবার বলার সর্বান্তক চেষ্টা করি । তেমনি মুসলিম মিল্লাতের উচিৎ আল্লাহর ভাষায় জুমাবার বলা ।
কুরআনে জুমাবার”
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থঃ হে মুমিনগণ, যখন
আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।(সুরা জুমাহ- ৬২.৯)
জুমাবার সম্পর্কে প্রিয় রাসুল (সাঃ)বলেছেনঃ
বিশ্বনেতা মানবতার মুক্তির দিশারী মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ أُدْخِلَ الْجَنَّةَ، وَفِيهِ أُخْرِجَ مِنْهَا
জুমাবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনই তাকে জান্নাতে দাখিল করা হয়েছে। এই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। (আবু হুরায়রা (রা.), মুসলিম)
জুমাবার সপ্তাহের সেরা দিন। কুরআন কারীমেও এই দিনের নাম আছে। (يوم الجمعة) জুমু’আর দিন। বলা হয়ে থাকে জুমাবার হলো, গরীবের ঈদের দিন। আল্লাহর কাছে বান্দার ফিরে আসার দিন। প্রিয় রবের সাথে নতুন করে সম্পর্ক গড়ার দিন। দুনিয়ার বিশেষ বিশেষ দিনে, সরকারের পক্ষ থেকে, বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষ থেকে অনেক অফার থাকে। বৈশাখী অফার, ঈদের অফার ইত্যাদি। তেমনি আল্লাহ তা’আলাও বিশেষ দিনগুলোতে বান্দাকে বাড়তি কিছু সুযোগ দিয়ে থাকেন।্ন
আল্লাহ তায়ালা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও গোটা জগৎকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয় দিনের শেষ দিন ছিল জুমার দিন।
এই দিনেই হজরত আদম (আ.) সৃজিত হন। এ দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এ দিনেই জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়।কেয়ামত এ দিনেই সংঘটিত হবে। আল্লাহ তায়ালা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্য এ দিন নির্ধারণ করেছিলেন।
কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইসলামের জুমার গুরুত্ব অপরিসীম। সেইজন স্বয়ং আল্লাহপাক কুরাআন পাকে ইরশাদ করেন ‘হে মুমিনগণ জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের উদ্দেশেও দ্রুত ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর’। সূরা জুমা, আয়াত নং-৯।
তাই জুমার আজানের আগেই সব কর্মব্যস্ততা ত্যাগ করে জুমার নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে মসজিদে গমন করা সব মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। এ দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, তখন মানুষ যে দোয়াই করে তা-ই কবুল হয়। এই দিনের বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
তাই, আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ইসলামের ঐতিহ্য, ইতিহাস সমুন্নত ও সুমহান রাখতে কুরআনের ভাষা তথা রাসুল কারীম (সাঃ) এর ব্যবহারিত সব ভাষাকে নিজেদের পারিবারিক জীবন ও সামাজিক জীবনে বলার অভ্যাস করি।
আল্লাহতায়ালা তৌফিক দিন, আমিন।
জুমার দিনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ
জুমার দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল পাক (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন আসর নামাজের পর না উঠে ওই স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার নিম্নে উল্লেখিত দরুদ শরিফ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হবে এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব তার আমল নামায় লেখা হবে। (সুবনহান আল্লাহ)
দোয়াটি হলো: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহী ওয়াসাল্লিম তাসলীমা“
জুমার দিনের আরও কিছু আমলের মধ্যে রয়েছে—
• সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা: জুমার দিনে সূরা কাহ্ফ তিলাওয়াত করলে কিয়ামতের দিন আকাশতুল্য একটি নূর প্রকাশ পাবে।
• বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করা এবং বেশি বেশি জিকির করা মুস্তাহাব।
• জুমার রাত (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত) ও জুমার দিনে নবী করিম (সা.) এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠের কথা বলা হয়েছে। এমনিতেই যে কোনো সময়ে একবার দরুদ শরিফ পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা পাঠকারীকে দশটা রহমত দান করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য দশবার রহমতের দোয়া করেন।
• জুমার নামাজের পূর্বে দুই খুতবার মাঝখানে হাত না উঠিয়ে মনে মনে দোয়া করা।
• সূর্য ডোবার কিছুক্ষণ আগ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত গুরুত্বের সাথে জিকির, তাসবীহ ও দোয়ায় লিপ্ত থাকা।
এছাড়া আরও অনেক আমল রয়েছে। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বর্তমানে জুমার নামাজ মুসলমানদের কাছে অবহেলিত। আজানের পরও মসজিদগুলো ফাঁকা থাকে। খুতবার শেষ পর্যায়ে তড়িঘড়ি করে মুসলি্লরা মসজিদে প্রবেশ করে। এরূপ করা শরিয়তের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়।
তাই যাদের মধ্যে ঈমানের সামান্যতম চেতনা রয়েছে, তারা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান জুমাকে নিয়ে এমন অবহেলা করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।
সংকলক ও লেখকঃ প্রবাসী কলামিস্ট, Email:kashem5416@gmail.com