, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin admin

ধর্ষক তুই সাবধানঃ মেহদী হাসান তালহা

প্রকাশ: ২০১৯-০২-০৩ ২৩:৪৫:২৯ || আপডেট: ২০১৯-০২-০৪ ০৯:০৭:০৬

Spread the love

মুক্তমতঃ ইদানীং আমাদের দেশে খুবই সাধারণ একটি নিউজ হলো ধর্ষণ। ধর্ষণের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেছে যে, প্রতিটি গ্রামে-গ্রামে, পাড়ায় পাড়ায় এর মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলেছে। ব্যাপারটি অনেকটা এরকম যেন আমাদের রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে কার চেয়ে কে বেশী এই অপকর্মে এগিয়ে থাকতে পারে। রাজনীতি থেকে শুরু করে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সবকিছুরই প্রতিশোধ নেওয়ার যেন একটি সহজ বিষয় হলো ধর্ষণ। আমরা একটি নতুন থিওরি আবিষ্কার করে ফেলেছি, আর সেই থিওরি হলো কেউ আমার দিকে আড়চোখে তাকালো, তার জবাবে ধর্ষণ। কেউ ঝগড়া করলো তার প্রতিউত্তরেও ধর্ষণ।
লেখক"(ছবি,লেখক)
রাজনৈতিক ইস্যু থেকে শুরু করে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে যতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তার চেয়ে বেশী ঘটেছে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে, আর ঘটনার বিপরীতে ছিলো সমাজের কথিত ভদ্রতার মুখোশ ধারী প্রভাবশালী হুবহু মনুষ্য চেহারাধারী কতগুলো নরপশু। আর এই নরপশুগুলো সমাজে এতটাই গভীর ও দীর্ঘ শিকড় গেড়েছে যে, প্রশাসন পর্যন্ত এদের বেলায় চুপ। যেন তাদের কিছুই করার নেই। আর এই বিকৃত মস্তিষ্কের নরপিশাচগুলোর কাছ থেকে রেহাই পায়না দুই বছরের শিশু থেকে শুরু করে সত্তর বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত। তাদের এই বিকৃত লালসা আস্তে আস্তে এতটাই বেড়ে যায় যে, অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন এদের থামানো কিংবা প্রতিরোধ করা সম্ভব না। ফলস্বরূপ তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠলো। শুধুমাত্র এবছর জানুয়ারি মাসেই ধর্ষণের শিকার হয় ৩৫ জন! যাদের মধ্যে যেমন আছে দুই বছরের শিশু, তেমনি আছে ৩ সন্তানের জননী ৪ সন্তানের জননী। আছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীও। যারা এতোদিন ধর্ষণের কারণ হিসেবে নারীর পোশাক দায়ী করতেন, তারাও নিশ্চুপ।

এ বছরেই নতুন সরকার গঠন হওয়ায় অনেকেই আশা করেছিলেন এবার হয়তো বিচার হবে। কিন্তু না! এবারও হলোনা। সরকার যেন তাদের ক্ষমতার কাছে নিছক শিশু। সাধারণ মানুষদের থেকেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেলনা বা প্রয়োজন মনে করলো না। শুধু যে নির্যাতিত হলো সে আর তার পরিবার নীরবে সয়ে যেতে লাগলো। আর যে ঘটনা গুলো নিয়ে খুব প্রতিবাদের ঝড় উঠলো সে ঘটনার আসামীকে গ্রেফতার করে চলতে লাগলো রাষ্ট্রীয় খরচে জামাই আদর। তুফান কিংবা নোয়াখালী ‘র তিন সন্তানের জননী ধর্ষণের দায়ে গ্রেফতারকৃতদের দিকে তাকালে তো এমনই মনে হয়।

প্রশাসন যখন ব্যার্থ, তখন নির্যাতিতদের আলোকবর্তিকা হয়ে আগমন ঘটলো একজন হারকিউলিসের। নাহ, আগমন ঘটেনি। আমাদের থেকেই বের হলো একজন হারকিউলিসের। সাধারণ মানুষের বন্ধু হয়ে, তাদের আশার আলো হয়ে। আর অল্পদিনেই সে হয়ে উঠল অপরাধীদের ত্রাস। একের পর এক ধর্ষকদের শাস্তি দিয়েই চলেছে কিন্তু এর জন্য কেউ একটুও ব্যথিত নয়, উল্টো যেন সবাই নতুন আলোর সন্ধান পেয়ে হাফ ছেড়ে বেচেছে।

যে কাজ করার কথা ছিলো প্রশাসনের, সেই কাজ করতে লাগলো হারকিউলিস। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করে অপরাধী নির্বিঘ্নে মুক্ত বাতাসের ঘ্রাণ নেবে এটাতো মানা যায়না, তাইতো হারকিউলিস অপরাধীদের গলায় তার অপকর্মের সনদ ঝুলিয়ে মাথায় গুলি ঢুকিয়ে প্রত্যেক পরিবারকে উপহার দিয়েই যাচ্ছে।

আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অপরাধ, কিন্তু যেখানে আইনের ফাঁক দিয়ে অপরাধীরা মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়ায়, আর নির্যাতিতরা হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরায়, সেখানে আইনের দোহাই দেয়া অনেকটা হাইস্যকর। তবুও বলবো অপরাধ তো অপরাধই। তার শাস্তি হওয়া উচিৎ। কিন্তু এই অপরাধ যে জন্য সংঘটিত হচ্ছে, তার শাস্তি আগে হওয়া দরকার। তা না হলে হারকিউলিসের আগমন ঠেকানো সম্ভব নয়।

এসব হারকিউলিসের আগমন কেন ঘটে? সোজা উত্তর, ধর্ষকদের মুক্ত বাতাসে বিচরণই এদের আগমনের মূল কারণ। ধর্ষণের উপযুক্ত বিচার হলে এরা ও থেমে যাবে। ধর্ষকদের প্রতি এই আড়ালে থাকা হিরোর বিচারের জন্য শ্রদ্ধা। যারা এতোদিন এই অপরাধ করে পার পেয়েছিলে তারাও সাবধান। নাহয় হয়তো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তোমার ও গলায় অচিরেই ঝুলতে থাকবে এমন চিঠি। তাই সময় থাকতে ধর্ষক সাবধান।

লেখকঃ মেহেদী হাসান তালহা
ঢাকা কলেজ।

Logo-orginal