, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin admin

যে কারণে সৌদির বিমানবন্দর থেকেই ফেরত আসছে অনেক বাংলাদেশী

প্রকাশ: ২০১৯-০২-০১ ১২:২৬:২১ || আপডেট: ২০১৯-০২-০১ ১২:২৯:০৫

Spread the love

সৌদি আরবের রিয়াদ, জেদ্দাসহ তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যাওয়া কোনো না কোনো ফ্লাইটে বাংলাদেশী যাত্রীদের ‘ডিপোর্টি প্যাসেঞ্জার চিহ্নিত করে ফিরতি ফ্লাইটে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। তাদের রিটার্ন ডকুমেন্টের কাগজপত্র ত্রুটিপূর্ণ বলে উল্লেখ করছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। আর এসব ফেরত আসা যাত্রীর কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ ডলার জরিমানা।

সম্প্রতি ভিসায় ত্রুটি থাকার পরও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে সৌদি আরব পাড়ি জমানোর অভিযোগে এয়ারলাইন্সকে আড়াই লাখ রিয়াল (২২ টাকা হিসাবে ৫৫ লাখ টাকা) জরিমানা করা হয়েছে। সম্প্রতি বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে টেলেক্সের মাধ্যমে জরিমানার কাগজ পাঠানো হয়েছে বলে বিমানের বলাকা ভবন সূত্রে জানা গেছে। তবে এই জরিমানা কতজন যাত্রীর জন্য করা হয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি।
অভিবাসন ও এয়ারলাইন্স বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হজরত শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটের এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন বিভাগ এবং পাসপোর্ট চেকিং ইউনিটের (পিসিইউ) কঠোর নজরদারির পরও কিভাবে কোন সিন্ডিকেটের ইন্ধনে কাগজপত্রে ত্রুটিপূর্ণ থাকা যাত্রীরা উড়োজাহাজে উঠার ক্লিয়ারেন্স পেয়েছে সেটি অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। নতুবা ফেরতের কারণে শুধু দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে তা নয়, যে যুবক জমিজমা বন্ধক রেখে বিদেশে যাচ্ছেন ফিরতি ফ্লাইটে দেশে ফেরায় তিনিও নিঃস্ব হচ্ছেন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রাফিক বিভাগের পোস্ট ফ্লাইট এনালাইসিসের (পিএফএ) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেনÑ রিয়াদ, জেদ্দা ও দাম্মাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে প্রায়ই ডিপোর্টি প্যাসেঞ্জারের (বিমানবন্দর থেকে ফেরত যাত্রী) সাথে তাদের রিটার্ন ডকুমেন্টে আন্ডার চেকশিট টেলেক্স আসছে। আমরা এন্ট্রি করে বিমানের মতিঝিল ডিস্ট্রিক সেলস অফিসে পাঠাচ্ছি। পরবর্তিতে ফেরত আসা যাত্রীদের যেসব এজেন্সি পাঠিয়েছিল তাদের কাছ থেকে এই জরিমানার টাকা আদায় করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সৌদি আরবের জেদ্দা, দাম্মাম, রিয়াদ ছাড়াও মালয়েশিয়া, দুবাই আবুধাবিসহ অন্যান্য দেশ থেকে ১৫৮ জন ডিপোর্টি প্যাসেঞ্জার আসার রেকর্ড রয়েছে। তবে চলতি মাসের পুরো হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ডিপোর্টি প্যাসেঞ্জার আসার কারণে আড়াই লাখ রিয়াল জরিমানা করা হয়েছে কি-না সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র আমার এখানে আসেনি। এটি পরিচালকের দফতরে যেতে পারে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজের সাথে এ প্রসঙ্গে জানতে গতকাল যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বলাকা ভবনের একজন কর্মকর্তা গত রাতে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সৌদিগামী শ্রমিকদের পাসপোর্ট ও ভিসায় যদি কোনো সমস্যা থেকেই থাকে তাহলে তারা কিভাবে বোর্ডিং কার্ড পাচ্ছে, ইমিগ্রেশন ও তল্লাশির শেষ ধাপ পাসপোর্ট চেকিং ইউনিট অতিক্রম করছে এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। এসব বিভাগের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর গাফিলতির কারণেই কি যাত্রীরা উড়োজাহাজে উঠতে পারছেন, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার বলে তিনি মনে করেন। কারণ এসব ঘটনায় আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমানের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে।

গত রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসির নাম্বারে ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। এর আগে দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এয়ারপোর্ট সার্ভিস) জেনারেল ম্যানেজার নুরুল ইসলাম হাওলাদার জেদ্দা, দাম্মাম ও রিয়াদ থেকে ডিপোর্টি প্যাসেঞ্জার দেশে ফেরত আসার কথা স্বীকার করে বলেন, বিভিন্ন কারণে তারা ফেরত পাঠাচ্ছেন। এর মধ্যে অনেকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলে না, পুরনো শ্রমিক ছুটিতে এসে আবার যাওয়ার সময় তাদের ভিসায় সমস্যা থাকার কথা উল্লেখ থাকছে। আরো অনেক কারণ রয়েছে।

তবে ফেইক ভিসা নিয়ে কোনো যাত্রী এয়ারপোর্ট পার হয়েছে এমনটি তার জানা নেই। হাওলাদার বলেন, আমি এসবের বিরুদ্ধে খুবই কঠোর। তারপরও তো প্রতিদিনই ডিপোর্টি প্যাসেঞ্জার কেন ফেরত আসছেÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নিয়োগ বোর্ডে ইন্টারভিউ নেয়ার দায়িত্বে আছি বলে কথা শেষ করেন। উৎসঃ নয়া দিগন্ত ।

Logo-orginal