, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

সম্মেলনে এসে ক্ষোভ ঝরল প্রবাসী প্রকৌশলীদের

প্রকাশ: ২০১৯-০২-২৭ ০৯:১০:২৩ || আপডেট: ২০১৯-০২-২৭ ০৯:১০:২৩

Spread the love

ঢাকাঃ খান মোহাম্মদ মাহফুজুস সালাম আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক (সম্মান) শেষ করে ২০০৬ সালে চলে যান জাপানে। এক যুগের ব্যবধানে সালাম এখন ওই দেশের ‘কোডনেক্সট ইনকরপোরেট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ চালকবিহীন গাড়ি উদ্ভাবন করেছেন তিনি। ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে প্রবাসী প্রকৌশলীদের নিয়ে দুই দিনের সম্মেলনে যোগ দিতে তিনিও এসেছেন জন্মভূমিতে।

সম্মেলনে এসে ক্ষোভ ঝরল মাহফুজুস সালামের কণ্ঠে। বললেন, ‘ঢাকায় একটি কম্পানি খুলতে দুই সপ্তাহ ধরে হন্যে হয়ে ঘুরছি। যৌথ মূলধন কম্পানি, বিডাসহ বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থায় গেছি। কিন্তু একটি কম্পানি খুলতে কী কী প্রয়োজন হয়, তা এখনো জানতে পারিনি। কোথায় গেলে সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে, তার জবাব এখন পর্যন্ত কারো কাছ থেকে পাইনি।’ তাঁর মতে, বাংলাদেশে ব্যবসা করার পথে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তথ্য প্রাপ্তি। কেউ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে না।

এ সম্মেলনে বিশ্বের ৩০টি দেশের অন্তত তিন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি প্রকৌশলী যোগ দিয়েছেন। গতকাল এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় অন্তত ১০ জনের। তাঁদের কণ্ঠে ছিল একই সুর। দেশের জন্য কিছু করতে চান তাঁরা। তবে তার আগে বিনিয়োগের পরিবেশ চান তাঁরা। সরকারি সংস্থাগুলোয় কর্মরত কর্মকর্তাদের মানসিকতা পরিবর্তনের তাগিদ দেন এই প্রবাসীরা। একই সঙ্গে একই ছাদের নিচে সব সেবা নিশ্চিত করার তাগিদও এসেছে তাঁদের কাছ থেকে।

গাজী আসিফ নেওয়াজ দেড় যুগ ধরে বসবাস করছেন সিঙ্গাপুরে। সেখানে কাজ করেন কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার, বিদ্যুৎকেন্দ্র, রিফাইনারিসহ জটিল সব প্রযুক্তি নিয়ে। নিজের জন্মভূমিতে কিছু একটা করতে প্রবল ইচ্ছা থাকলেও সরকারি সংস্থাগুলোর অসহযোগিতা ও কর্মকর্তাদের আচরণ খুব কষ্ট দেয় তাঁকে।

আসিফ নেওয়াজ বলেন, ‘এই সম্মেলনে যোগ দিতে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বের হওয়ার সময় আমার সঙ্গে যে আচরণ করল আমার ভাইয়েরা, তাতে মনে হলো আমি একজন অপরাধী। ব্যাগ তল্লাশি করছে যাচ্ছেতাইভাবে। আমার কাছে সোনার বার আছে কি না বারবার জানতে চাওয়া হচ্ছে। আমাকে যদি তাদের সন্দেহ হয়, বিনয়ের সঙ্গে আচরণ করতে পারে। কিন্তু এখানে আসার পর আমার মনে হলো, এসে ভুল করে ফেলেছি।’ তিনি বললেন, ‘আমার মোবাইলে থ্রি-জির পরিবর্তে ফোর জি সংযোগ করতে গেলাম আঞ্চলিক অফিসে। আমি প্রবাসী বাংলাদেশি শুনে তারা বলল, আপনাকে আমরা ফোর-জি সেবা দিতে পারব না। আপনি আমাদের সদর দপ্তর মতিঝিলে যান। তারা আমার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখতে চায়। আমার তো জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। পাসপোর্টের কপি দিলাম। কিন্তু তারা বলল, এটাতে হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া সেবা দেওয়া যাবে না।’

ইতালির রোম থেকে প্রবাসীদের এই সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন সীমা কাউসার আঁখি নামের এক নারী উদ্যোক্তা। ইতালিতে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। সম্মেলনে যোগ দিতে এসে তিনি জানালেন, ঢাকার যানজট নিয়ে তাঁর পরিবার বেশ বিরক্ত। গতকালের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ইস্কাটন থেকে মিরপুর যেতে সময় লেগেছে তিন ঘণ্টা। এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জানালেন, প্রতিবার আসার সময় ইতালি থেকে ৫০ লিটার খাবার পানি নিয়ে আসেন। কারণ ঢাকার পানির মান ভালো না। যখনই ঢাকায় আসেন, সঙ্গে করে চিনি ও লবণ নিয়ে আসেন সীমা কাউসার। তিনি শুনেছেন যে লবণে সার দেওয়া হয়।

সীমা আঁখি বললেন, ‘ইতালিতে তিনটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর দিতে গিয়ে চাঁদা দিতে হয়নি। সরকারের সেবাও পেয়েছি সঠিক সময়ে। কিন্তু বাংলাদেশে তা অকল্পনীয়। বিমানবন্দরে নামলেই চুরির ভয় থাকে। প্রতিনিয়তই এখানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি।’

এনামুল হক দীর্ঘ চার দশক ধরে কাজ করেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে নদী ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে কাজ করেন তিনি। বুড়িগঙ্গা নদীর হাল ব্যথিত করে তাঁকে। বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ প্রতিরোধে কাজ করার প্রবল ইচ্ছা এনামুল হকের। সেজন্য এসেছেন সম্মেলনে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে এসেছেন সোহেল হাসিন। পড়াশোনা করেছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাংলাদেশে সোলার সিস্টেম নিয়ে কাজ করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে বলে মত দেন তিনি।

ইংল্যান্ড থেকে সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন প্রকৌশলী খান বাশার। জানালেন, হাইটেক পার্কে বিনিয়োগে আগ্রহ আছে তাঁর। কিন্তু কিভাবে বিনিয়োগ করব, তা আজ পর্যন্ত জানতে পারেননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদেশে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতদের কাছে গেলে তাঁদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায় না। অনিবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি) শুনলেই তাঁদের মাথায় অন্য চিন্তা আসে। উৎসঃ কালের কন্ঠ।

Logo-orginal