, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

চট্টগ্রামে আলোচিত ইয়াবা ভবন যেভাবে দখলে নেয় প্রশাসন

প্রকাশ: ২০১৯-০২-১৪ ১০:৫২:২৭ || আপডেট: ২০১৯-০২-১৪ ১০:৫২:২৭

Spread the love

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রামঃ মামা-ভাগিনা দু’জনেই ইয়াবা ব্যবসায়ী। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে পাশাপাশি দুটি দৃষ্টিনন্দন ভবন তৈরি করেছেন তারা। কর্ণফুলী তীরে রাতারাতি গড়ে তোলা দুটি ভবনই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে প্রশাসন। দুটি ভবনের ২১ জন ভাড়াটিয়াকে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাসা ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ। ভবন দুটি তৈরি করেছেন টেকনাফের দক্ষিণ হ্নীলা গ্রামের মরহুম হাজী জালাল আহাম্মদের ছেলে হেলাল উদ্দিন ও তার ভাগিনা মোহাম্মদ হোসাইন।

গতকাল মঙ্গলবার ভবনে লাগানো ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা জব্দ করা হয়েছে। ভাড়াটিয়াদের চলে যাওয়া সংক্রান্ত নোটিশ লাগানো হয়েছে গতকাল বুধবার।

মূলত গত ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে নামকরা নিউজ দৈনিক পূর্বকোণে ভবন দুটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নড়েছড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন । স্থানীয়রা পূর্বকোণকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইয়াবা ভবন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় টনক নড়েছে কর্তাবাবুদের, অথচ সবার নজরে ছিল সবকিছু, এমন অভিযোগ করেন ইছামতির এক প্রবীণ ব্যবসায়ী ।

আরটিএম প্রতিনিধিকে ঐ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এলাকার পরিবেশকে মাদকমুক্ত করতে হলে প্রশাসনকে আরো তৎপর হতে হবে ।

কর্ণফুলী উপজেলার ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, হেলাল ও তার ভাগিনা হোসাইন যৌথভাবে ইয়াবা ব্যবসা করে। হ্নীলায় তাদের বাড়ি হলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে কর্ণফুলীর তীরের ইছানগর গ্রামে পাশপাশি দুটি ভবন তৈরি করেছেন তারা। কিন্তু সেখানে তারা থাকেন না। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের লাভজনক কোনও ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠান থাকতে দেওয়া হবে না। আমরা আপাতত ভাড়াটিয়াদের আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাসা ছেড়ে দিতে সময় বেঁধে দিয়েছি। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বাসা না ছাড়লে ওই দুই বাড়ির সব মালামাল জব্দ করা হবে। তিনি বলেন, ঘর খালি করার পর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী বাড়িগুলো সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে, নয়তো ধ্বংস করা হবে।

কর্ণফুলীর ইছানগর গ্রামের সাকির আহমদ ও এরশাদ আহমদের কাছ থেকে ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রায় দশ কাঠা জমি কিনেন হেলাল। পাঁচমাস পর মামার পাশেই একই ব্যক্তির কাছ থেকে জমি কিনেন ভাগিনা মোহাম্মদ হোসাইন। জমি কেনার পর পরই সেখানে মামা- ভাগিনা মিলে দৃষ্টিনন্দন দুটি ভবন তৈরি করলেও সেখানে কখনো থাকেনি। অতি অল্প সময়ে চোখ ধাঁধানো বাড়ি দুইটি নির্মাণ করে এলাকার মানুষের কাছেও আলোচিত হন হেলাল ও হোসেন। ২০১৫ সালে ঢাকার মতিঝিল থানায় এলাকায় ইয়াবা নিয়ে তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল হেলাল।

এ সময় আত্নগোপন করেন হোসাইন। কয়মাস পর জামিনে বের হয়ে হেলালও আত্মগোপন করেন।

২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর টেকনাফ থেকে মাছের ট্রলারে করে এক বস্তা ইয়াবা আনেন হেলাল উদ্দিন। ট্রলারটি কর্ণফুলী নদীর সোনা মিয়া হাজীর ডকে ভিড়িয়ে বস্তাটি নামানো হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর স্থানীয় শিকলবাহা ইউনিয়নের বাইট্টাগোষ্ঠির কবরস্থান থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবাসহ কর্ণফুলী থানা পুলিশ ফারুক নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। গত ১৬ জানুয়ারি কক্সবাজার থেকে মহসিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন তিনি ট্রলারে করে ইয়াবার চালান আনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ডকে খালাস করার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেন পুলিশের কাছে।

এ ব্যাপারে কর্ণফুলী থানায় দায়ের করা মামলায় হেলালসহ সাত ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার মহসিন পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বলেন, মূলত হেলাল উদ্দিনই ওই ইয়াবার মূল বিনিয়োগকারী ও আমদানিকারক। গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ইয়াবা পাচার করে আনলেও গত বছরের সেপ্টেম্বরের আগে বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরেই আসেনি।
ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারী হেলাল ও হোসেনকে সাগর পথে বড় ইয়াবা কারবারি বলে পুলিশও আদালতে বলেছেন। হেলাল ও হোসেনের গ্রামের বাড়ি থেকে শুরু করে কোনও ব্যাপারেই বিস্তারিত তথ্য পুলিশের কাছে নেই।

গত দুইমাস ধরে পুলিশ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার পৌর এলাকা ও ইউনিয়নে নির্মিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সুরম্য প্রাসাদগুলো ভেঙে ফেলছে। তবে কক্সবাজার জেলার অন্য উপজেলা কিংবা দেশের অন্য এলাকায় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা যে সম্পদ অর্জন করেছেন, সে ব্যাপারে কোনও ধরনের সিদ্ধান্ত প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে নেয়নি। এরইমধ্যে গতকাল কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন এ উদ্যোগ নিল।

কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (ওসি) মুহাম্মদ আলমগীর জানান, ইতিপূর্বে উপজেলা প্রশাসনের আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় একাধিকবার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তৎপরতা ও তাদের বাড়িঘর নিয়ে আমি কথা বলেছি। এখন নির্বাহী প্রশাসন ও পুলিশ মিলে এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আপাতত ঘর দুইটি খালি করতে চাই। তিনি বলেন, কেবল হেলাল ও হোসেনের বাড়ি দুইটিই নয়, অন্য যেসব বাড়ি এখানে আছে, আমরা সেগুলোর ব্যাপারেও পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব। হেলাল ও হোসেন পলাতক থাকায় হেলালের বাড়িটি দেখভাল করেন ওবায়েদ বাদল।

Logo-orginal