, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় এক মুসলিম পরিবারের করুণ অধ্যায়

প্রকাশ: ২০১৯-০২-০৫ ১৯:৪১:০০ || আপডেট: ২০১৯-০২-০৫ ১৯:৪১:০০

Spread the love

আরটিএমনিউজ২৪ডটকম, অনলাইন ডেস্কঃ মোহাম্মদ আলাহিরি এ নিয়ে গর্ববোধ করেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এক দীর্ঘ ইতিহাস অতিক্রম করে। তার পরিবার প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে আসে ১৯২৮ সালে ইয়েমেন থেকে। তার বড় দাদা, দাদা এবং নিজ পিতার মতই ৩৩ বছর বয়সী আলাহিরি যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের বাড়ি হিসেবে দাবী করেন।

তার পরিবারের অন্য সদস্যদের মত, তিনিও আশা করেন তার স্ত্রীকে ইয়েমেন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসবেন, যাতে করে তিনি তার চার কন্যার দেখাশোনা করতে পারেন। এখন অবধি তার স্ত্রী এবং ১২ বছর বয়সী একজন কন্যা ইয়েমেনে রয়েছেন।

মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে সফরের জন্য দেয়া দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশ এখন পর্যন্ত কার্যকরী রয়েছে, আর এ জন্যই মোহাম্মদ আলাহিরি এখনো নিশ্চিত হতে পারছেন না যে, তিনি তার পরিবারকে আবার এক করতে পারবেন কিনা।

আজ থেকে দুবছর পূর্বে ট্রাম্প ১৩৭৬৯নং নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যা ইয়েমেনসহ সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে বাধা তৈরি করে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে, অনেককে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার জন্য ভিসা দিতে অস্বীকার করা হয়। কিছু আমেরিকান এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ক্ষেত্র তৈরি করেছে এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থীদের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশসমূহে চলে যেতে বাধ্য করছে।

Yemeni American Merchants নামের একটি সংগঠনের পরিচালক আইয়াদ আলগাবেয়ালি নামের একজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণসহ বিশেষত কংগ্রেসের সদস্যদের এটা বুঝতে পারা উচিত যে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা সংবিধান পরিপন্থী।’

২০০৫ সালে আলাহিরির সাথে তার স্ত্রীর দেখা হয় ইয়েমেনের রাজধানী সানায় এবং তারা সেখানে বিয়ে করেন। আর গত এক দশক ধরে আলহিরি নিউইয়র্ক থেকে সানায় যাতায়াত করেই চলেছেন কিন্তু কোনো সুরাহা করতে পারেন নি।

২০১৪ সালে যখন ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় তখন আলাহিরি তার চার সন্তানকে ইয়েমেন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

২০১৫ সালে ইয়েমেনের সানায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বন্ধ করে দেয়া হয় এবং তা ডিজিবউতি শহরে স্থানান্তর করা হয়। সানার বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডিজিবউত শহরে যেতে হলে অন্তত ১৮ ঘণ্টার বিপদজনক নৌকা ভ্রমণ করতে হয়।

শেষ পর্যন্ত তারা ডিজবউতি শহরে পৌঁছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন করেন। এর পরে তারা মিশরে চলে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর জন্য। কারণ আলাহিরি মিশরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে তার স্ত্রীর আবেদন স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছিলেন।

আর এর পরপরেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নিষেধাজ্ঞা জারি করেন এবং আলাহিরির স্ত্রী মিশরে আটকা পড়েন এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা প্রাপ্ত হন।

২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে আলাহিরি তার ৮ বছর বয়সী কন্যাসহ মিশরের কায়রো শহরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হন। তাদেরকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়। প্রায় সাতটি অস্ত্রোপচারের পরেও আলাহিরি হাঁটতে সক্ষম হন নি।

তিনি বার্তা সংস্থা হাফিংটন পোষ্টকে বলেন, ‘আমার কন্যারা সবসময় ফোনে একে অন্যের সাথে কথা বলতে গিয়ে কান্না করে, আমার সাথের জন অন্যদের সাথে গিয়ে থাকতে চায় আর অন্যরা এখানে এসে থাকতে চায়। আমার হাতে কিছুই করার নেই। এমন দিনে আমি এমনকি নিজের খেয়াল রাখতে পারছি না।’

একসময় ‘Yemeni American Merchants Association’ মিশরের কায়রোয় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে আলাহিরির স্ত্রীর ভিসার জন্য আবেদন জানায়, কিন্তু দূতাবাস তা প্রত্যাখ্যান করে।

এদিকে International Refugee Assistance Project এর পরিচালক বেসটি ফিসার এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দূত সামান্থা পাওয়ার বার্তা সংস্থা The New York Times এ যুক্তরাষ্ট্রের এমন নীতির তীব্র নিন্দা করে একটি যৌথ কলাম প্রকাশ করেন।

আশার কথা হচ্ছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখ মিশরের কায়রোতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে আলাহিরির ভিসা আবেদনের সাক্ষাতকার অনুষ্ঠিত হবে। আর এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আলাহিরি এবং তার তিন কন্যার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

সূত্র: হাফিংটনপোস্ট ডট কম/আরটিএনএন।

Logo-orginal