, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin admin

প্রাথমিক শিক্ষকদের ফেসবুক ব্যবহারে সতর্ক করেছে শিক্ষা অধিদপ্তর

প্রকাশ: ২০১৯-০২-০৫ ১৮:৪৫:২০ || আপডেট: ২০১৯-০২-০৫ ১৮:৪৫:২০

Spread the love

বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক করে দিয়ে একটি নির্দেশনা জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সংবাদ বিবিসি বাংলার।

মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা করা হয়। কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষকদের অনেক মন্তব্য বা সমালোচনা দেখা গেছে, যা সরকারি নীতির খাপ খায়না।

তাই তাদের সতর্ক করে দিতে ওই নির্দেশনাটি জারি করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ”ইদানীং ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে নেতিবাচক স্ট্যাটাস/মন্তব্য ও বিভিন্ন অপপ্রচারমূলক তথ্য প্রদান করা হচ্ছে, যা সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকা, ২০১৬ এর পরিপন্থী।”

”কিন্তু ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য ও অপপ্রচারমূলক স্ট্যাটাস/মন্তব্য প্রচার করা হচ্ছে এবং শেয়ার করা হচ্ছে, যা প্রাথমিক শিক্ষা তথা সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। এ ধরণের কার্যক্রম কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

সরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকার অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষা তথা সরকারের বিরুদ্ধে কোন ধরণের অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক স্ট্যাটাস/ মন্তব্য প্রদান বা শেয়ার করার ব্যাপারে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা

কী বলছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর?
অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, অনেক সময় দেখা যায়, সরকারের নীতির বিপক্ষে কেউ কেউ স্ট্যাটাস দিচ্ছেন বলে দেখা যায়।

“এ ব্যাপারে ক্যাবিনেটের একটি সার্কুলারও আছে। তারপরেও দেখা যায়, শিক্ষকরা বুঝে না বুঝে অনেক রকম মন্তব্য করছেন। তাই তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হলো।”

কেউ এই নির্দেশনা ভঙ্গ করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

তবে কী ধরণের মন্তব্য তারা দেখতে পেয়েছেন – সেটি নিয়ে কোন কথা বলতে চাননি।

‘সরকারি চাকরি করি বলে কি, নিজের ক্ষোভও প্রকাশ করতে পারবো না?’
এই নির্দেশনা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে দুই ধরণের প্রতিক্রিয়ার তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ যেমন এতে আপত্তি তুলছেন, আবার সমর্থনও করছেন কোন কোন শিক্ষক।

একটি জেলা শহরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”আমাদের কেউ কে কখনো স্কুলের নানা ক্ষোভের বিষয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, এটা ঠিক।”

“সেটা সরকারের বিরুদ্ধে হয়তো নয়, বরং সেটা আমাদের জন্য ভালো না বলে মনে হয়েছে, সেটাই প্রকাশ করা হচ্ছে। এটা আসলে আমাদের মত প্রকাশের অধিকার।”

“আমি সরকারি চাকরি করি বলে কি, আমার নিজের ক্ষোভের বিষয়টিও প্রকাশ করতে পারবো না?”
তবে আরেকজন শিক্ষক বলছেন (তিনিও নাম জানাতে রাজি হননি), ”সরকারি চাকরি করতে হলে তো কিছু নিয়মকানুন মানতেই হবে।”
অনেক বিষয়ে আপত্তি থাকতে পারে, সেটা নিয়ম মেনে আমি প্রতিবাদ করার পক্ষে, কিন্তু ফেসবুকে না দেয়াই হয়তো ভালো।”
তিনি বলেন, “এই যে নির্দেশ দিয়েছে, চাকরি করতে হলে তো আমাকে সেটা মানতেই হবে।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিধিমালায় কী রয়েছে?

সরকারি চাকুরীজীবীদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের একটি নীতিমালা জারি করা হয় ২০১৬ সালে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা ওই নির্দেশিকায় ব্লগ, মাইক্রোব্লগস, নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও নেটওয়ার্ক এবং ভিডিও শেয়ারিং সাইট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সেখানে ব্যক্তিগত একাউন্ট পরিচালনার বিষয়ে বলা হয়েছে:

ব্যক্তিগত একাউন্ট পরিচালনার বিষয়ে সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্বশীল নাগরিক সুলভ আচরণ ও অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
বাস্তব বা স্বাভাবিক অবস্থায় একজন সরকারি কর্মচারীর আচরণের মতোই প্রকাশ হবে সামাজিক মাধ্যমে।
বক্তব্য ও বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন, প্রয়োজনীয় ট্যাগিং ও রেফারেন্সিং পরিহার করতে হবে।
নিজস্ব পোস্টে দেয়া তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা এবং নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার এবং নিজ একাউন্টের ক্ষতিকর কন্টেন্ট এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মচারী দায়ী হবেন এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া সব তথ্য অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। যেমন তথ্য, ছবি, বা ভিডিও গুরুত্বের সঙ্গে বাছাই করতে হবে।
ওই নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেসব বিষয় পরিহার করতে হবে:

জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোন মন্তব্য
কোন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে বা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি পরিপন্থী কোন বক্তব্য
রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট কোন বক্তব্য
বাংলাদেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বক্তব্য
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয় করে, এমন মন্তব্য বা কন্টেন্ট
লিঙ্গ বৈষম্যমূলক বক্তব্য বা কন্টেন্ট
জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন বিষয়
সরকার প্রতিষ্ঠানে ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক ভিত্তিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিষয়টি পর্যালোচনারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Logo-orginal