, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

বহুদিন হয়ে গেলো, ইনু ভাই বিএনপির বিরুদ্ধে কিছু বলেন না!

প্রকাশ: ২০১৯-০২-০৭ ১৩:১০:০৪ || আপডেট: ২০১৯-০২-০৭ ১৩:১০:০৪

Spread the love

প্রভাষ আমিনঃ দু’দিন ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস চোখে পড়লো। আসিফ নজরুল লিখেছেন, ‘বহুদিন হয়ে গেলো, ইনু ভাই বিএনপির বিরুদ্ধে কিছু বলেন না!’ স্ট্যাটাসটা দেখে মনে হলো, তাই তো, বহুদিন হলো, ইনু ভাই শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে নয়, আসলে তেমন কিছুই বলছেন না। মাসখানেক আগেও যিনি প্রায় প্রতিদিন কথা বলতেন, খালেদা জিয়াকে নানা উপাধিতে ভূষিত করতেন, তিনি এখন একেবারে চুপ মেরে গেছেন।

তার কি ঠোঁট চুলকায়? জানি না। হয়তো তিনি এখনও বলেন। কিন্তু তথ্যমন্ত্রী নেই বলে, সেগুলো মিডিয়ার নজর কাড়তে পারে না। মিডিয়ার সার্বক্ষণিক নজরে থাকা একজন মানুষ হঠাৎ এমন আড়ালে চলে গেলে কেমন লাগে? জানি না। মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না পাওয়ার পর হাসানুল হক ইনু বিভিন্ন টিভির টকশো’তে অংশ নিয়ে সরব থাকার চেষ্টা করেছেন। ইদানীং তাও দেখা যাচ্ছে না।

তবে দুদিন আগে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘কে বিরোধী দলের আসনে বসবে আর কে বিরোধী দলের আসনে বসবে না, এটা নির্ধারণ করার এখতিয়ার বা মালিক আওয়ামী লীগ এবং অন্য কেউ নয়। এই সিদ্ধান্ত স্ব-স্ব দল গ্রহণ করবে। এছাড়া কেউ যদি সরকারের নির্দেশে বিরোধী দল হয়, তাকে আমি এককথায় বলবো ফরমায়েশি বিরোধী দল।

১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে ছিলাম, এখনও আছি। আমি রাজনৈতিক কারণে ১৪ দলীয় জোট থাকার প্রয়োজনীয়তা মনে করছি। সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদ ও রাজাকাররা এখনও আত্মসমর্পণ করেনি, তওবা করেনি। তারা রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হলেও চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করেনি। সুতরাং জোটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা জোটগতভাবে ভোট করেছি এবং সংসদে জোটবদ্ধ থাকবো। এর বাইরে আওয়ামী লীগ যদি অন্য কোনও সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরা জোটের শরিকরা বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।’

হায় হায় একি কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে। খালেদা জিয়াকে অগ্নিসন্ত্রাসী আর বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল বলতে বলতে যার মুখে ফেনা উঠে যেতো, এখন তার মুখেই কিনা আওয়ামী লীগের সমালোচনা। এটা ঠিক, ১৪ দল এখন বেশ বেকায়দায় আছে। মন্ত্রিসভায় তাদের কারও ঠাঁই হয়নি। সংসদে তাদের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৪ দলের শরিকদের বিরোধী দলের আসনে বসার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু নৌকা মার্কায় ভোট করে, উন্নয়নের কথা বলে ভোট চেয়ে এখন সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসাটা তাদের জন্য বিব্রতকর।

তারচেয়ে বড় কথা, একাদশ সংসদে বিরোধী দলের আসন ইতোমধ্যেই পূর্ণ। জাতীয় পার্টি বিরোধী দল, এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা। এরশাদের পেছনে বিরোধী দলের আসনে বসা ইনু-মেননদের জন্য সত্যিই বিব্রতকর। এতদিন আওয়ামী লীগকে সার্ভিস দিয়ে এখন এভাবে ‘নোবডি’ হয়ে যাওয়াটা ১৪ দলের শরিকদের জন্য অবমাননারও। এবার কিছু না পাওয়ায় তাদের একটু অভিমান হতেই পারে। আমি নিশ্চিত, মন্ত্রিত্ব পেয়ে গেলে হাসানুল হক ইনু আবার খালেদা জিয়া আর বিএনপির বিষোদগারে মনোযোগী হবেন; আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না।

তবে মূল জাসদের চেয়েও বড় বিপ্লবী বাংলাদেশ জাসদ। আদর্শের প্রশ্নে নয়, নেতৃত্বের প্রশ্নে সম্প্রতি আবারও ভেঙেছে জাসদ। ৭২ সালে জন্মের পর ৪৭ বছরে জাসদ কতবার ভেঙেছে সেটা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। সর্বশেষ ভাঙনে শরিফ নুরুল আম্বিয়া, নাজমুল হক প্রধানরা হাসানুল হক ইনু আর শিরিন আক্তারদের ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন। তারা বাংলাদেশ জাসদ নামে আলাদা দল করে নিবন্ধনও চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি।

তবে নির্বাচনে ভাগবাটোয়ারায় বাংলাদেশ জাসদ একটি আসনও পেয়েছে। নিবন্ধন না পাওয়ায় বাংলাদেশ জাসদের প্রার্থীকে নৌকা মার্কায় নির্বাচন তো করতে হয়েছেই, কাগজে-কলমে তিনি আওয়ামী লীগের সাংসদ হিসেবে পরিচিত হবেন। এখন আওয়ামী লীগের সাংসদ মাইনউদ্দিন খান বাদল কীভাবে বিরোধী দল হবেন। না পাওয়ার বেদনায় নীল বাংলাদেশ জাসদও। সংবাদ উৎস – বাংলা ট্রিবিউন।

Logo-orginal