, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের হালচাল ও করণীয়

প্রকাশ: ২০১৯-০২-০৫ ১৬:০২:৪০ || আপডেট: ২০১৯-০২-০৫ ১৬:০২:৪০

Spread the love

আবুল কাশেম (মধ্যপ্রাচ্য): এক সময় স্বপ্নের বিদেশ ছিল আরবদেশ গুলি।
মরুভূমিতে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত দ্বারা পরিপূর্ণ তৈল সমৃদ্ধ আরব দেশের নাম শুনলেই খুশিতে মনটা ভরে যেত ।

সময়ের পরিক্রমায় সেই স্বপ্নের দেশগুলিতে অসহনীয় যন্ত্রণা আর হতাশা যেন পিছু ছাড়তে চায় না প্রবাসীদের।

স্বপ্নের প্রবাস এসেই হোটচ খাচ্ছে বুকভরা আশা নিয়ে আসা বাংলাদেশী যুবকরা।

ফিরে দেখা সে সোনালী প্রবাসঃ

১৯৭০ সালের আগে পরে যেসব বাংলাদেশি আরব দেশে এসেছেন, তাদের সবাই আজ প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য। ১৯৯০ সালেও আরবদেশগুলি ছিল রিজিকের জন্য বেশ প্রসস্ত।
চাকুরী বা ব্যবসায়ীক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত বিদেশীরা।

কিন্তু আশির দশকে ইরান ইরাক যুদ্ধ, ১৯৯০ সালে ইরাকী প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম কতৃক কুয়েত দখল, মার্কিন সৈন্য ও বহুজাতিক বাহিনী ( বাংলাদেশি সেনাসহ) কুয়েত ও অন্যন্যা আরবদেশে অবস্থান দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে।
১৯৯১ সালে জাতিসংঘের নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী কুয়েত মুক্ত করে সাদ্দামের রাহু থেকে, মুক্ত পাখির মত হাসতে থাকে আরবদেশের আম জনতা।

১৯৯১ সালে সংঘটিত মধ্যপ্রাচ্যের আলোচিত যুদ্ধে সবচেয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় আমেরিকান সেনা সদর পেন্টাগন।

তবে বহুজাতিক বাহিনীর পিছনে ব্যয় হতে থাকা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার জোগান দিতে গিয়ে নড়েচড়ে উঠে দেশগুলির রাষ্ট্র প্রধানরা। কমতে থাকে দেশগুলির রিজার্ভ ফান্ড। ব্যবসায়ীক চিন্তায় বিভিন্ন পরিকল্পনা নিতে থাকে অর্থনীতিবিদরা।
সংকোচিত হতে থাকে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার, ভিসার ব্যয় বেড়ে দিগুন থেকে ত্রিশ গুন এসে দাঁড়ায়, হু হু করে বাড়তে থাকে জিনিস-পত্রের দাম, সরকারী ভূর্তকি বন্ধ হয়ে গেল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি থেকে, ফলে খরচ বেড়ে গেল প্রবাস জীবনের।

৯০ সালের ৩০,০০০ টাকার ভিসা ৯৫ সালে তিন লাখ, ২০০০ সালে ৫ লাখ, ২০০৫ সাল থেকে লাগামহীন ভাবে বেড়ে যায় ভিসার দাম।

অবশ্য ভিসার দাম বাড়াতে মুল কারিগরের ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশি মুনাফালোভী ঘৃণিত দালারা।

মুলতঃ ২০০০ সালের পর থেকে অন্তহীন সমস্যা দেখা দিতে শুরু মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের জীবনে।
প্রবাসীদের সমস্যা ও দূতাবাসের ভূমিকা, এই বিষয়ে লেখালেখি কম হয়নি, কিন্তু যেই লাউ সেই কদু।

অবশ্য বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দুর্দশা ও সমস্যা চিহ্নিত করণে দেশের সরকারের আন্তরিকতার অভাব ও দক্ষ কূটনৈতিক কমিটি না থাকাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক ভিসার ধরণঃ

কাজের ভিসার দুই প্রকার, সরকারী ও বেসরকারী। সরকারী প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কোম্পানির প্রাপ্ত কন্ট্রাকের ভিসাকে বলা হয় আকদ হুকুম বা ১৮ নং। আকদ হুকুম ভিসা ৫ বছর শেষ করে অন্য কোম্পানিতে পরিবর্তন করা যায়, মুলত এইসব ভিসায় কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকরা সমস্যাই পড়ে বেশী।

কম বেতন, তাও না পাওয়া, একামা সমস্যা, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস তাদের মুল সমস্যা।

১৮ নং ভিসার মধ্যে পাবলিক কোম্পানি, দোকানের ভিসা উত্তম, এইসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা মোটামুটি ভাল আছে।
১ বছর পর ভাল চাকুরী বা সুযোগ পেলে ভিসাও বদল করতে পারে।

দ্বিতীয় প্রকার গৃহকর্মীর ভিসা নং ২০, এরাবিয়ান ধনবানদের ঘরের বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত শ্রমিকদের গৃহকর্মী বলা হয়।
তাদেরও সমস্যার শেষ নেই, তবে ক্লিনিং কোম্পানির চেয়ে উত্তম।

ক্যারিয়ার গঠনে প্রবাসে করণীয়ঃ অল্প শিক্ষিত, চাহিদা অনুসারে কাজ জানা না থাকা বা টেকনিশিয়ান না হয়ে বিদেশে এসে সবচেয়ে বেশী হতাশায় ডুবে থাকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা।

মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র কুয়েত কাতার বাহরাইন ও ওমানে পার্টটাইম করা যায়। ( যদিও তাহা সরকারীভাবে বেআইনি) বিশেষ করে কাতার এবং কুয়েতে দেদারে পার্টটাইম করছে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী।

কিন্তু নিজেকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পার্টটাইম বা অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে সহজে উন্নতি সাধন করতে পারে প্রবাসী যুবকরা।

আমার (লেখকের) অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই সময় ও সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেকে ভাল চাকুরী ও ব্যবসা করছে, তাই আপনি কেন নয়?

জেনে নিন কাজের চাহিদাঃ অভিজ্ঞতা অর্জন না করে বা জানেন না” এমন কাজ সবসময় এড়িয়ে চলা উত্তম।

যে কাজে আপনি দক্ষ, সে কাজকে নিয়ে আপনার পরিকল্পনা সাজান, তাতে সফলতা আসার সম্ভবনা ৮০%। সবর আর সাহস বুকে ধারণ করে কয়েকমাসে কাজ শিখুন, কেননা কাজ জানা থাকলে টাকা আপনার পিছনে ঘুড়তে বাধ্য।

যে কোন ব্যবসা, ইলেক্ট্রাশিয়ান, গাড়ি মেকানিক, অটোমোবাইল (গাড়ি), পেইন্টার, প্লাম্বার ইত্যাদি।

তবে গ্লোবাইজ বিশ্বে কম্পিউটার সফটওয়্যার, গ্রাফিক ডিজাইনার, সি সি এন নেটওয়ার্ক, জিপিএস নেটওয়ার্ক ইত্যাদির চাহিদা বেশ প্রকট।

মুলত,যে কোন কাজ জানা থাকলে বেকারত্বের গ্রাস আর হতাশায় পড়তে হয়না।
তাই যারা য়ুবক বয়সে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন, তাদের জন্য পরামর্শ মূলক লেখাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Logo-orginal