, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin admin

হঠাৎ ফাঁকা ফুটপাত” খুশি সাধারন মানুষ

প্রকাশ: ২০১৯-০৩-০২ ১২:২৮:২৪ || আপডেট: ২০১৯-০৩-০২ ১২:২৮:২৪

Spread the love

ঢাকাঃ ঢাক-ঢোল পিটিয়েও যেখানে অবৈধ দখলে থাকা ফুটপাত ব্যবসায়ীদের তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি, সেখানে অনেকটা নিরবেই সরিয়ে দেওয়া হলো রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ীদের।

কেউ জানেনও না হঠাৎ করে ফুটপাতে থাকা হাজার হাজার দোকান কোথায় উধাও হয়ে গেল। এ নিয়ে হকারদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও তাদের পক্ষ থেকে টুঁ শব্দটিও করা হয়নি। তবে ফুটপাত হকারমুক্ত করায় সাধুবাদ জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।

শুধু গুলিস্তান নয়, রাজধানীর সদরঘাট, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, ওয়ারী, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, শ্যামলী, কলেজ গেটসহ সব জায়গা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

এর রহস্য খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। সেখানে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত হয়।

ওই বৈঠক সূত্রে জানা যায়, মেয়র সাঈদ খোকন কমিশনারকে বলেন, ‘অনেক বাধা সত্ত্বেও আমরা গত বছর ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করেছিলাম। কিন্তু কয়েক মাস পরে সেটি আবার দখল হয়ে যায়। মানুষ চলাচল করতে পারে না। রাস্তা আটকে থাকে। ঈদের সময় আমরা মানবিক বিবেচনায় কিছু বলতে পারিনি। কিন্তু দেখা গেল, ঈদের পরও হকাররা ফুটপাত ছেড়ে দিচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে চেয়ে দেখতে হচ্ছে।’ এজন্য তিনি ডিএমপি কমিশনারের সহযোগিতা কামনা করেন।

জবাবে কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন, ‘আপনি উদ্যোগ নেন। আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। ঢাকা শহরে ফুটপাতে কোনো হকার থাকবে না। জনগণের রাস্তায় জনগণই চলাচল করবে।’ এরপরই মূলত হকার উচ্ছেদ শুরু হয়।

জানা যায়, ২৪ ফেব্রুয়ারি গুলিস্তান থেকে হকারদের তাদের মালামাল নিয়ে সরে যেতে বলা হয়। একে একে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে শুরু করে গোলাপ শাহ মাজার, ফুলবাড়িয়া, সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স এলাকা, ন্যাশনাল হকি স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, বায়তুল মোকাররম চারদিকের এলাকা, মুক্তাঙ্গন ও জাসদ অফিসের সামনের ফুটপাত হকার মুক্ত করা হয়। হকারদের বলা হয়, এরপর থেকে এসব জায়গায় কোনো হকার বসতে পারবে না।

ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের বিষয়ে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এক কোটি ২৫ লাখ লোক বসবাস করে। দক্ষিণ সিটির মানুষের চলাচলের মূল জায়গাই হচ্ছে গুলিস্তান। সেই গুলিস্তানে মাত্র সাড়ে তিন হাজার হকার সড়ক আটকে বসে থাকে। একটি গাড়ি আটকা পড়লে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যায়, তবু গাড়িটি বের হতে পারে না। মাত্র সাড়ে তিন হাজার লোকের জন্য এক কোটি ২৫ লাখের লোকের সমস্যা হতে পারে না। আমরা এভাবে চলতে দিতে পারি না। গুটি কয়েক লোকের কাছে আমরা ব্যর্থ হতে পারি না।’

বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের সামনে কথা হয় হকার ফারুক হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ‘এর আগে উঠায় দিছে, আবার দোকান বসাইছি। এবার মনে হচ্ছে আর বইতে দিবো না।’ ফুলবাড়িয়ায় জুতার দোকান বসাতেন নয়ন। তিনি বলেন, নেতারাও কিছু বলছে না এবার। সবাই দেখি দেখি বলে দিন পার করছে। টাকা যা আছিল সব তো শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বয়স্ক পথচারী ফোরকান মিয়া বলেন, ‘পল্টনে গেছিলাম, এখন যামু বংশালে। রাস্তা ফাঁকা, কোনো যানজট নাই। ফুটপাত দিয়ে সবাই হেঁটে চলাচল করতেছে, তাই আমিও হেঁটেই যাচ্ছি। এরকমটাই যেন সবসময় থাকে। হকার যেন ফুটপাতে বসতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা হোক।’ ফোরকান মিয়ার মতো শত শত মানুষকে সাচ্ছন্দ্যে হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেল ওই এলাকায়।

এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র সাঈদ খোকন আরও বলেন, ‘গুলিস্তান দিয়ে ব্যাংক পাড়া যেতে হয়, সদরঘাট যেতে হয়। এখানে সচিবালয় ও বঙ্গভবন রয়েছে। অর্থনীতির চাকা এখান থেকে ঘোরে। তাই এই এলাকার সড়ক ফাঁকা রাখা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে গুলিস্তান নয় মতিঝিল, ওয়ারী, সদরঘাট, চকবাজার, পল্টন, মালিবাগ, শান্তিনগর, শাহবাগ, নিউ মার্কেট যেখানেই হোক না কেন, ফুটপাতে কোনো হকার থাকবে না। ফুটপাত জনগণের, তাই জনগণই চলাচল করবে।’

মেয়র জানান, ফুটপাতে যেন হকার না বসতে পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। হকার নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সিটি করপোরেশন। তাদের আলাদা স্থানে বসার জায়গা ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সরকারের এত উন্নয়ন, ফ্লাইওভার, ইউলুপ, রাস্তা প্রশস্ত, ফুটপাত বাড়ানোর কাজ করছে, তবু যানজট পিছু ছাড়ছে না। জনগণ চলতে পারছে না। গাড়ি আটকে থাকছে। মেয়র মহোদয় বলেছেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে ফুটপাতকে হকারমুক্ত করেছে। ফলে যানজটও কমছে। মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। কোথাও গাড়িও আটকে থাকছে না।

ডিএমপি কমিশনার জানান, সেগুনবাগিচা এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার রতন তাকে বলেছেন, ১৬ ফেব্রুয়ারির মিটিংয়ে সেগুনবাগিচা থেকে গাড়িতে নগর ভবনে যেতে তার সময় লেগেছিল ৪৫ মিনিট। আর ২৭ ফেব্রুয়ারি তার নগর ভবনে যেতে সময় লেগেছে মাত্র ৭ মিনিট।

কমিশনার আরও বলেন, শুধু ঢাকা দক্ষিণ সিটি নয়, বরং পুরো রাজধানীর কোথাও ফুটপাতে হকার বসতে দেওয়া হবে না। তারা কোথায় মিছিল করবে নাকি সমাবেশ করবে করুক। এদের কেউ পৃষ্ঠপোষকতা করবেন না। নিরাপদ ও যানজটমুক্ত নগরী গড়তে হকারমুক্ত ফুটপাতের বিকল্প নেই।

উৎসঃ সারাবাংলা।

Logo-orginal