, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Avatar rtm

তাফসীর মাহফিল ও আমার উপলব্ধি : এম. হাসিবুর রহমান

প্রকাশ: ২০১৯-০৩-১৭ ১৪:১১:১৫ || আপডেট: ২০১৯-০৩-১৭ ১৪:১৭:৪৬

Spread the love

ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় এবং মানুষের মাঝে দ্বীনি জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার অন্যতম একটি প্লাটফর্ম হলো তাফসীরুল কুরআন মাহফিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য জ্ঞান বিতরণ,অর্জন ও দাওয়াতী এই প্লাটফর্মটি আজ তার মূল উদ্দেশ্য হারাতে বসেছে।

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক এম. হাসিবুর রহমান তাঁর জ্ঞান ও গবেষণায় এর কিছু কারণ উল্লেখ করে নিজ ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

নিম্নে পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-

★আয়োজকদের ত্রুটি ও দুর্বলতা:

০১) অনেকেই মাহফিলকে শো অফে পরিণত করেছেন।কোন বক্তাকে কে আগে আনতে পারে অথবা কার চেয়ে কে বেশী জাকজমকপূর্ণ আয়োজন করতে পারেন তা নিয়ে চলে তুমুল প্রতিযোগীতা।
০২) হেদায়াত উদ্দেশ্য না হয়ে অনেক আয়োজকদের উদ্দেশ্য হয় বেশী বেশী লোক জমায়েত করা।
০৩) ইলম,আমল,তাক্বওয়া ও ইখলাসওয়ালা আলোচকদের পরিবর্তে গায়ক,চিল্লাফাল্ লাকারী,সুরেলা কণ্ঠের বক্তাকে দাওয়াত দেয়া।
০৪) বক্তা/আলোচকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা।অনেকেই শিডিউল নিয়ে প্রোগ্রামের দিন/আগের দিন নিজেরা ক্যান্সেল করেন কিন্তু আলোচক/বক্তাকে তা জানান না।একজন বক্তা যখন কাউকে একটি শিডিউল দিয়ে দেন তখন তা অন্য কাউকে আর দিতে পারেন না।সুতরাং আপনার প্রোগ্রাম না হলে তা যদি আপনি না জানান তাহলে আপনি অনেককেই মাহরুম করলেন।
০৫) বক্তা/আলোচকদের যাতায়াত খরচ মেইনটেইন না করা।অনেক জায়গায় এমন হয়,আয়োজক কমিটি এতো বেইনসাফী করে যে ঠিকমতো যাতায়াত খরচ ও মেইনটেইন করেন না।
০৬) বক্তা/আলোচকদের বিষয় নির্ধারণ করে না দেয়া।
০৭) বেশী রাত পর্যন্ত প্রোগ্রাম চালিয়ে যাওয়া,যার কারণে বেশীরভাগ শ্রোতা এমনকি আয়োজকদের অনেকেই ফজরের জামায়াত মিস করে।

★আয়োজকদের প্রতি পরামর্শ:

০১) আল্লাহর সন্তুষ্টি ও হেদায়াত ই যেন মাহফিল আয়োজনের উদ্দেশ্য হয়।
০২)ইলম,আমল,তাক্বওয়া ও ইখলাসওয়ালা আলোচক ইনভাইট করা।
০৩) আলোচকদের সাথে সৌজন্যমূলক ও ভদ্র আচরণ করা।
০৪) যাতায়াত খরচের দিক বিবেচনায় রাখা।
০৫) বিষয়ভিত্তিক আলোচনার ব্যবস্থা করা।
০৬) বেশী রাত পর্যন্ত প্রোগ্রাম না চালিয়ে রাত ১২ টার মধ্যেই শেষ করে দেয়া।

★সম্মানিত আলোচকদের প্রতি পরামর্শ:

০১) আলোচনায় বেশী বেশী কুরআন ও হাদীসের রেফারেন্স উল্লেখ করা।তার পাশাপাশি সাহাবা,তাবেয়ী,তাবে তাবেয়ী, যুগশ্রেষ্ঠ মুফাসসীর,মুহাদ্দিস,ফকীহগণের মন্তব্য ও বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো উল্লেখ করা।
০২) প্রতিটি আলোচনার জন্য স্টাডি ও নোট করা।
০৩) যুগোপযোগী বিষয় নির্ধারণ করা।
০৪) সমসাময়িক বিষয়গুলোকে প্রতিটি প্রোগ্রামে সুন্দর ভাবে তুলে ধরা।
০৫) সুরকে প্রাধান্য না দিয়ে ইনফরমেটিভ আলোচনা করা।
০৬) অপ্রয়োজনীয় কিচ্ছা কাহিনী বর্জন করে সরাসরি কুরআন-হাদীসের কাহিনীগুলো উপস্থাপন করা।
০৭) দল-মতের উর্ধ্বে উঠে মুসলিম উম্মাহ কে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য চেষ্টা করা।
০৮) বিতর্কিত বিষয় পরিহার করা।
০৯) কুরআন-হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক এমন ইসরাঈলী রেওয়ায়েত বর্জন করা।
১০) বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা।
১১) অতিমাত্রায় চুক্তি না করা।তবে যাতায়াত খরচ এডভান্স নিলে দোষের কিছু নেই।
১২) আলেমদের মাঝে পারস্পরিক সম্মান,আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বজায় রাখা।বক্তব্য দ্বারা অন্য কোনো আলেমকে কটাক্ষ না করা।
১৩) সুন্দর ও মার্জিত শব্দ চয়ন করা।
১৪) বক্ত্যব্য অনুযায়ী আমল করা।
১৫) প্রতিটি বক্তব্য নিজেকেসহ উদ্দেশ্যে করে দেয়া।তবেই বক্তব্যের আছর থাকবে।
১৬) কুরআনের সূরা ও আয়াত নাম্বারের পাশাপাশি হাদীসের রাবী ও গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা।
১৭) হেদায়াতের উদ্দেশ্যে প্রত্যেকটি কথা উচ্চারণ করা।

সবশেষে তিনি লেখেন, আত্মসমালোচনা ও সকলের কল্যাণে কথাগুলো লিখেছি। ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কথাগুলো আমিসহ সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেছি। আল্লাহ তায়ালা আমিসহ সকলকে দ্বীনের জন্য কবুল রুন,,, আমীন।

Logo-orginal