, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

বাঘাইছড়ি সাত খুন পরিকল্পিত” আগে থেকে ওৎ পেতে প্রস্তুত ছিল হামলাকারীরা

প্রকাশ: ২০১৯-০৩-২২ ১১:২৪:৫৯ || আপডেট: ২০১৯-০৩-২২ ১১:২৪:৫৯

Spread the love

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় ৭ খুনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি জেলা সদর হতে খাগড়াছড়ি সদর হয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে পৌঁছান বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। পরিদর্শনকালে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলা শেষে তদন্ত কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার বিভাগের চট্টগ্রাম’র পরিচালক দীপক চক্রবর্তী বলেছেন, ঘটনাটি একেবারে পরিকল্পিত। যতদূর ধারণা, আগে থেকেই ভারী অস্ত্র নিয়ে ওৎ পেতে প্রস্তুত ছিল হামলাকারীরা।খবর দৈনিক পুর্বকোণের ।

১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যার দিকে সদরে ফেরার পথে দীঘিনালা-মারিশ্যা (বাঘাইছড়ি) সড়কের ৯ কিলোমিটার এলাকায় নির্বাচনী কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মীদের গাড়িবহরে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা। এতে প্রাণ হারান ৭ জন। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ১৭ জন। তারা সবাই ওই উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী দায়িত্বে ছিলেন । এ ঘটনার রাত পেরুতে না পেরুতেই পরদিন (১৯ মার্চ) সকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন, বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা। দুটি ঘটনা-ই নির্বাচন যোগসূত্র থাকতে পারে বলে স্থানীয় অনেকের ধারণা।

সূত্র জানায়, ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনায় সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের চট্টগ্রাম’র পরিচালক দীপক চক্রবর্তীর নেতৃত্বে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে, রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নজরুল ইসলামকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি ফয়েজ আহমেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (যুগ্ম সচিব) আশীষ কুমার বড়–য়া, চট্টগ্রাম ৩০ আনসার ব্যাটালিয়নের পরিচালক ও অধিনায়ক মো. নুরুল আমিন, বিজিবি রাঙামাটি সেক্টরের বাঘাইহাট জোনের মেজর আশরাফ ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্যনির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছাদেক আহমদ। কমিটিকে গঠনের পরবর্তী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

কমিটির সদস্য সচিব রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নজরুল ইসলাম জানান, প্রথম কার্যদিবসে বুধবার সন্ধ্যায় রাঙামাটি সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত কমিটির প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্বিতীয় কার্যদিবসে (বৃহস্পতিবার) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তারা। এ সময় ঘটনাস্থল ও তার আশপাশে এলাকা পরিদর্শন ছাড়াও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, আলামত ও তথ্য-উপাত্ত খোঁজেন। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়াও ঘটনার দিন নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার, আনসার ভিডিপি সদস্য, নিহতদের পরিবারের সদস্যসহ আহতদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ঘটনাটি ছিল পূর্ব-পরিকল্পিত। যাতে কাজে লাগানো হয়েছে সন্ধ্যার আঁধারকে। হামলাকারীরা ভারী ও অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিল।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার উদ্ধৃতি দিয়ে সূত্র জানায়, নির্বাচনী ফলাফল ও সরঞ্জামাদিসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ ও আনসার-ভিডিপি সদস্যদের বহনকারী জিপ গাড়ির ওপর লক্ষ্য করে অতর্কিত এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেছে বন্দুকধারীরা। রাস্তার উপরের পাহাড় এবং দুই পাশ থেকে ছোড়া গুলি বৃষ্টির মতো পড়ে ওই গাড়িগুলোতে। গাড়িগুলোর সামনে ও পেছনে পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর টহল থাকলেও অতর্কিত হামলার কারণে হামলাকারীদের মোকাবেলা করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। সামনে থাকা নিরাপত্তাবাহিনীর বিজিবির দুটি গাড়ি ততক্ষণেই ঘটনাস্থল অতিক্রম করে অনেক দূর চলে যায়। আর নির্বাচনী ফলাফল ও সরঞ্জামাদিসহ পেছনে থাকা পুলিশের গাড়িটিও গুলিবর্ষণ হামলায় আক্রান্ত হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন পুলিশের সদস্যরাও। তাছাড়া ওই ৩টি জিপ গাড়িতে থাকা আনসার-ভিডিপি সদস্যদের হাতে অস্ত্র থাকলেও অতর্কিত হামলায় আক্রান্তরা প্রায় সবাই গুলিবিদ্ধ হন। ফলে পাল্টা জবাবের কোনো সুযোগ ছিল না। এদিকে ঘটনার প্রায় তিন দিনের মাথায় বুধবার রাতে ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দিয়ে পুলিশ বাদি হয়ে বাঘাইছড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদি হলেন এসআই মো. আক্তার। এ পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা যায়নি।

বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ মঞ্জুর বলেন, মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। আসামি ধরতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সন্দেহজনক বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। দ্রুত অগ্রগতি আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাঘাইছড়ির ঘটনার ব্যাপারে রাঙামাটি পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবির বলেন, হামলা হয় অতর্কিত। যে কারণে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়িতে থাকা প্রায় সবাই আক্রান্ত হয়ে গুলিবিদ্ধ হন। ফলে পুলিশসহ নিরাপত্তাবাহিনীর টহল থাকলেও সম্ভবত তাৎক্ষণিক মোকাবেলার পরিস্থিতি ছিল না। তবে ঘটনার পর এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ বাদি হয়ে মামলাও হয়েছে। আসামিদের খুঁজতে এলাকায় এলাকায় তল্লাশি অভিযান চলছে। বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ও স্বাভাবিক রয়েছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে বিলাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পারভেজ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পূর্বকোণকে জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার হত্যাকা-ে বিষয়ে এখনো মামলা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা অপেক্ষা করছি নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে আসার কথা। আমরা অপেক্ষায় রয়েছি। এলে মামলা নেয়া হবে। অন্যথায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। এঘটনার প্রেক্ষিতে এখনো কাউকে আটক করা যায়নি। আমরা চেষ্টা করছি।

Logo-orginal