, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

শিক্ষার্থীদের বিরোধীদলের আন্দোলনের উৎস না হতে বললেন সিএমপি

প্রকাশ: ২০১৯-০৩-২১ ১৭:৫২:০০ || আপডেট: ২০১৯-০৩-২১ ১৭:৫২:০০

Spread the love

চট্টগ্রা; বিরোধীদলের আন্দোলনের উৎস না হতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এসময় শিক্ষার্থীদের এই অনুরোধ করেন নগর পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

সিএমপি কমিশনার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের মতো বয়সে আবেগ বেশি থাকে। এটা স্বাভাবিক। এজন্য তোমাদের মাঠে নামানো সহজ হয়। কিন্তু তোমরা যখন মাঠে নামো, কুচক্রীমহল সক্রিয় হয়ে ওঠে। আমার অনুরোধ, তোমরা শিক্ষার্থীরা যাতে বিরোধীদলের আন্দোলনের উৎস না হও। আমরা তোমাদের সঙ্গে থাকব। আমাদের সম্পর্কটা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যায়। এখানে কোনো রাজনীতি যেন স্থান না পায়। সবাই মিলে যাতে সড়ক দুর্ঘটনাটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি।’ত

গত ১৯ মার্চ সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর প্রগতি সরণিতে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় আবরার আহমেদ চৌধুরী নামে আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালে (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়তেন। এই ঘটনার পর দুইদিন ঢাকার বিভিন্ন সড়কে নেমে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রামেও শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে পারেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়। এসময় নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির মধ্যস্থতায় বুধবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। এসময় তিনি চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল না করতে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেন।

শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কাছে চট্টগ্রামে স্কুল-কলেজের জন্য বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু, রাস্তার প্রতিটি মোড়ে সংকেত ব্যবহার করা, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিং ও স্পিডব্রেকার দেওয়ার দাবি তুলে ধরেছিলেন। একই দাবি শিক্ষার্থীরা সিএমপি কমিশনারের কাছেও তুলে ধরেছেন।

সিএমপি কমিশনার ‘সড়ক সংকেত’ করার জন্য দুই মাসের সময় নিয়েছেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘এটা তো জেলা প্রশাসনের কাজ না। এটা সিএমপি করবে। দুই মাসের মধ্যে হয়ে যাবে।’

একইসঙ্গে দুই মাসের নগরীর স্কুলগুলোতে ট্রাফিক ভলান্টিয়ার কমিটি করা হবে বলেও ঘোষণা দেন সিএমপি কমিশনার। প্রতিটি কমিটিতে ২০ জন শিক্ষার্থী থাকবে বলে জানান তিনি। এসময় সড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা আনার জন্য সমন্বিত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন বলে বৈঠকে মত দেন সিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, ‘একটা রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সমাজের উঁচুস্তরের ব্যক্তি, সবার ট্রাফিক সিস্টেম সম্পর্কে বিরাট ধারণা আছে। আলোচনা যখন হয়, তখন মনে হয় সবচেয়ে কম বোঝে ট্রাফিক বিভাগের লোকরা। আর সবাই ট্রাফিক সিস্টেম সম্পর্কে মাস্টার। এটা ভালো দিক। এটা আমাদের শক্তি। কিন্তু এতে তো সমাধান হয় না। কারণ সমাধানের জন্য সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেই। মূলত সমন্বয় না থাকার কারণেই আমাদের সড়কের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সড়কে শৃঙ্খলা থাকছে না। আর শৃঙ্খলা না থাকার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে।’

সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা হয় না, এমন কোন দেশ নেই। এত উন্নত রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও গতবছর ২৪ হাজার লোক সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন দিয়েছে। পত্রপত্রিকার পরিসংখ্যন অনুযায়ী বাংলাদেশে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২০০ লোক মারা গেছে। দিনে অন্তত ২০ জন লোক মারা গেছে। এটা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, এতে কোনো দ্বিমত নেই।’

ভোটের রাজনীতির কারণে ফুটপাত দখলমুক্ত হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন সিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ‘ফুটপাত থেকে হকার তুলে দেওয়া যায়। আমরা প্রস্তুত। কিন্তু এটা তো সামাজিক সমস্যা। ৫০ হাজার হকারের সঙ্গে তাদের পরিবার-পরিজন মিলিয়ে ১০ লাখ লোক এর সঙ্গে নানাভাবে জড়িত। আবার মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভরসা তো হচ্ছে এই ফুটপাত। সবাই তো বড় বড় শপিংমলে যেতে পারে না। ৫০ টাকায় শার্ট তো সেখানে পাওয়া যায় না।’

নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে বৈঠকে অতিরিক্ত কমিশনার কুসুম দেওয়ান ও আমেনা বেগম, নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান এবং কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনও ছিলেন।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজিব নিহত হন। এ ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রামেও জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছিল। সেসময় চট্টগ্রামের আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তারাই গত সিএমপি কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন।

উৎস” সারাবাংলা।

Logo-orginal