, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin admin

শীঘ্রই খুলে দেওয়া হবে আলোচিত পতেঙ্গা – ফৌজদারহাট রিং রোড

প্রকাশ: ২০১৯-০৩-০৫ ১২:১১:০৯ || আপডেট: ২০১৯-০৩-০৫ ১২:১১:০৯

Spread the love

চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (সিডিএ) অন্যতম বড় প্রকল্প সিটি আউটার রিং রোডের কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে ফিনিশিং এর কাজ।

পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত চার লেনের ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রিং রোডটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য আগামী মাসে খুলে দেয়া হবে।

রিং রোডের শেষপ্রান্ত কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা টেকনাফ, কক্সবাজার ও বান্দরবানের লোকজন চট্টগ্রাম শহরের ভেতরে প্রবেশ না করেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রবেশ করতে পারবে। ফলে বন্দরনগরীকে যানজটমুক্ত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে এ সড়ক।

তাছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের সীতাকুণ্ড অংশ থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর এলাকা পর্যন্ত চলাচলরত কার্গো পরিবহনের জট কমাতে এটি একটি বিকল্প যোগাযোগ সড়ক হবে। রিং রোডটি ৩০ ফুট উচ্চতা ও ১০০ ফুট চওড়া বাঁধ হওয়ায় পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার জনসাধারণকে জোয়ারের পানি থেকে রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। রিং রোডে ১১টি স্লুইচগেট রয়েছে এবং শক্তিশালী ঢেউ মোকাবেলা করার জন্য থাকছে সুরক্ষিত প্রাচীর। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত মূল সড়কটির সাথে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে পতেঙ্গা র‌্যাব-৭ রোড, পোর্ট টোল রোড এবং সাগরিকা রোডের সাথে ফিডার রোডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সিইপিজেডের সাথে রিংরোডের সরাসরি সংযোগ থাকায় সিইপিজেডের সামনের যানজটের অবসান হবে।

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, দুই হাজার ৪২৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় পর্যটন শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে হালিশহরের দিকে পাঁচ কিলোমিটার হচ্ছে স্পেশাল পর্যটন জোন। এখানে একসাথে প্রায় দশ হাজার পর্যটকের সমাগম হতে পারবে। পানিতে নামার জন্য থাকবে ছয়টি জেটি, যা দিয়ে পর্যটকরা বোটিং করতে পারবে। এছাড়া সাগর পাড়ে ৫০ ফুট জায়গা থাকবে ওয়াকওয়ে, বসার জন্য থাকবে বেঞ্চ, নির্দিষ্ট কিছু দোকানসহ থাকবে শিশুদের জন্য কিডস জোন এবং গ্রিন জোন ও পার্কিং সুবিধা। প্রকল্পের আওতায় ১০টি ফুট ওভার ব্রিজ থাকবে। যাতে রোডের পাশের মানুষ রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারে। এছাড়া পুরো রোডের সাগরের অংশে থাকবে লাগানো গাছ এবং ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রোডে সাগরের ভেতরের অংশে সিমেন্টের ব্লক বসানো থাকবে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া প্রকল্পটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। আউটার রিং রোডের পতেঙ্গা নেভাল অংশে চলছে কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কাজ। আর তা নির্মিত হলে কক্সবাজারমুখী তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামের গাড়িগুলো সহজেই আউটার রিং রোড ব্যবহার করে টানেল হয়ে সহজেই বান্দরবান, কক্সবাজার ও টেকনাফের দিকে যাতায়াত করতে পারবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম বলেন, চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ প্রকল্পের মধ্যে একটি হচ্ছে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সিটি আউটার রিং রোড। জাইকার ছয়শত কোটি টাকাসহ দুই হাজার পাঁচশ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। সড়ক নির্মাণ কাজ শেষে কার্পেটিং ও ফিনিশিং এর কাজ চলছে। এপ্রিল মাসে যান চলাচলের উন্মুক্ত করে হবে এ সড়ক। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরবাসী একদিকে যেমন যানজট থেকে মুক্তি পাবে, তেমনি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিনোদনের সুযোগ পাবেন। প্রকল্পের অধীনে নির্মিত হচ্ছে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে রয়েছে সৈকতে ওঠা-নামার জন্য জেটি সুবিধা, ওয়াকওয়ে, বসার স্থান, নির্ধারিত দোকান, বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য পৃথক জোন, গ্রিন জোন ও পার্কিং সুবিধা।
তিনি বলেন, আউটার রিং রোড ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নিমির্তব্য টানেলের এপাড়ের সংযোগ সড়ক। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে নগরীর যানজট প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। সড়কটিতে ইপিজেটের সঙ্গে সংযোগ সড়কও রয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরগামী সব ধরনের যানবাহন অনায়াসে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। সড়ক ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি প্রকল্পে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। বহির্বিশ্বের বিচগুলোতে দর্শনার্থীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পান, সেই আলোকে সাজানো হচ্ছে পতেঙ্গা সি-বিচকে। এটি বাস্তবায়িত হলে এক সঙ্গে প্রায় ১০ হাজার দর্শনার্থী পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে এসে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৗশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, হালিশহর থেকে ইপিজেড পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এক লেয়ার কার্পেটিং করা হয়েছে, আরো এক লেয়ার কার্পেটিং হবে। ১১টি স্লুইচ গেটের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। ব্লকের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং সাগরিকা ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। তিনি বলেন, এখন এয়ারপোর্ট থেকে জিইসিতে আসতে প্রচুর সময় জ্যামে বসে থাকতে হয়, রিং রোডের ফলে সেই জ্যাম থেকে জনসাধারণ মুক্তি পাবে।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের উপর আউটার রিংরোড নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে। দুই বছর সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থের যোগান দিতে সম্মত হয়।

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ২০০৭ সালে জাইকার চুক্তি হয়। সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সিডিএকে দায়িত্ব দেয়। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৮৬৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও পরে দুইবার সংশোধন করে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ হয়। সরকার ও জাইকার যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১৯ সালের জুন মাস। উৎসঃ আজাদী।

Logo-orginal