, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের কূটনৈতিক

প্রকাশ: ২০১৯-০৪-১৪ ১৯:২৩:৪০ || আপডেট: ২০১৯-০৪-১৪ ১৯:২৩:৪০

Spread the love

পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের যে উদযাপন বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটি মূল্যবান অধ্যায়, তাকে কূটনৈতিক স্তরেও নিজেদের গর্বের সম্পদ হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস শুরু করেছে বাংলাদেশ। সংবাদ বিবিসি বাংলার ।

ভারতের রাজধানী দিল্লির বুকে গত দু-তিন বছর ধরেই মহাধূমধামে বাংলা বর্ষবরণের আয়োজন করছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

নাচ-গান, সাংস্কৃতিক উৎসব বা খানাপিনার পাশাপাশি গত বছর তো ছিল ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রারও আয়োজন, যা ভারতের মাটিতে সম্ভবত সেই প্রথমবার।

দিল্লির কূটনৈতিক পাড়া চাণক্যপুরীতে নববর্ষ উদযাপনের এই আয়োজনে অবারিত দ্বার শুধু বাংলা ভাষাভাষীদের জন্যই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অতিথিরাও আসছেন দলে দলে।

“আমার মনে হয় নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে ঘিরে বাংলাদেশ যে একটা কালচারাল ডিপ্লোম্যাসি বা সাংস্কৃতিক কূটনীতির সেতু বাঁধার সচেতন প্রয়াস শুরু করেছে এই চেষ্টাটাও তারই একটা অংশ”, বিবিসিকে বলছিলেন দিল্লির শীর্ষস্থানীয় থিঙ্কট্যাঙ্ক বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো শ্রীরাধা দত্ত।

ড: দত্ত আরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “মাতৃভাষার জন্য আন্দোলনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের একটা আলাদা পরিচিতি আছেই – এখন বাংলা নববর্ষ পালনের মাধ্যমে নিজস্ব সংস্কৃতির গৌরবটাও তারা তুলে ধরছে।”

“এটাকেই তো আমরা বলি ‘সফট পাওয়ার’, যা বিশ্ব কূটনীতিতে এখন একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ।”

“ভারতও যেমন নানা দেশে তাদের সফট পাওয়ার কাজে লাগাতে চাইছে, বাংলাদেশও ভারতে ঠিক সেই একই জিনিস করছে।”

এবারের বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দিল্লির দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি, যাতে তিনি পহেলা বৈশাখকে বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশের ‘বৃহত্তম ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব’ হিসেবে।

হাই কমিশনার আলি সেখানে আরও লিখেছেন পাকিস্তান আমলে কীভাবে এই নববর্ষ উদযাপন স্তিমিত ছিল, আর সে দিন সরকারি ছুটি পর্যন্ত থাকত না।

১৯৬১-তে ছায়ানটের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে বাঙালিয়ানার উদযাপনের শুরু হয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশে ক্রমে ক্রমে নববর্ষ পালনের অনাবিল উৎসবের মধ্যে দিয়েই সেই চেষ্টা পূর্ণতা পেয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

তিনি বিবিসিকে আরও বলছিলেন, “পাকিস্তানি জমানায় বাঙালি তার এই এই প্রাণের উৎসব বহু বছর ধরে পুরোপুরি উপভোগ করতে পারেনি।”

“আর আজ সব ধর্মের বাঙালিরাই যেন পহেলা বৈশাখে সেই আফশোস সুদে-আসলে পুষিয়ে নিচ্ছেন!”

বাংলাদেশে প্রতি বছর যে ১৪ ফেব্রুয়ারি পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়, ঘটনাচক্রে ঠিক সেই সময়ই বা তার খুব কাছাকাছি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তেও চলতে থাকে নানা উৎসবের আয়োজন।

যেমন ঠিক এই সময়ই পাঞ্জাবে ‘বৈশাখী’, কেরালায় ‘ভিশু’, আসামে ‘বোহাগ বিহু’, তামিলনাডুতে ‘পুথান্ডু’ কিংবা কোঙ্কন-কর্নাটকে ‘গুডি পাডোয়া’র মতো উৎসবে মেতে ওঠে মানুষজন।

কিন্তু দিল্লির উৎসবের ক্যালেন্ডারে এই জায়গাটায় একটা ফাঁক ছিলই।”

“বাংলাদেশ যদি তাদের উদ্যোগে সেখানে পহেলা বৈশাখ-টাকে ঢুকিয়ে দিতে পারে, তাহলে ক্ষতি কী?” বলছিলেন দিল্লির সুপরিচিত নাট্যকর্মী দেবব্রত সান্যাল।

বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ‘স্পিরিট’ যে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে অনেকটাই আলাদা, সে কথাও স্বীকার করতে দ্বিধা নেই তার।

“আমি ঢাকায় একাধিকবার পহেলা বৈশাখ উদযাপন দেখেছি, নি:সঙ্কোচে বলতে পারি ওরকম ইনক্লুসিভ বা ওরকম সেকুলার উৎসব খুব কমই আছে। আর সেটা এক দারুণ বর্ণময় বা কালারফুল অভিজ্ঞতাও বটে”, বলছিলেন তিনি।

সেই ‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশে’র নববর্ষ উদযাপনকেই এখন দিল্লির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইছে বাংলাদেশ।

Logo-orginal