, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

মাহে রমজানের প্রস্তুতি করণীয় বরণীয়

প্রকাশ: ২০১৯-০৪-১৬ ১৪:২৭:৪২ || আপডেট: ২০১৯-০৪-১৬ ১৪:২৭:৪২

Spread the love

ইসলাম ডেস্কঃ বছর পরিক্রমায় আবার আমাদের মাঝে আগমন করতে যাচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। রমজান এমন এক আকাংখিত মাস যার আগমনে সমগ্র মুসলিম মিল্লাত নব উদ্যমে জেগে উঠে। মহিমান্বিত এ মাসকে বরণ করার জন্য উপযুক্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা আমাদের সকলের ইমানি দায়িত্ব।

রমজান এমনই এক বরকতময় মাস, যার আগমনে পুলকিত হয়ে স্বয়ং রাসূল সা. সাহাবায়ে কিরামকে মুবারকবাদ দিয়ে সুসংবাদ প্রদান করে বলেছেন- “তোমাদের সামনে রমজানের পবিত্র মাস আগমন করেছে, যে মাসে আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর রোজা ফরজ করেছেন।” (সহীহ মুসলিম)

হাদিস শরীফে এসেছে হুজুর পাক (স.) প্রতি সোমবার এবং বৃহস্পতিবারে রোজা রাখতেন, হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন হযরত মুহাম্মদ (স.) প্রতি সোমবার এবং বৃহস্পতিবারে রোজা রাখতেন। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ঐ দুই দিনেই মানুষের আমলনামা আল্লাহর নিকট পেশ করা হয়, আল্লাহ প্রত্যেক মুসলীমকে ঐ লোক ব্যতীত যারা নিষ্ঠুরভাবে একে অপরকে পরিত্যাগ করে এবং সে বলে- তাদের ত্যাগ করে পরবর্তী সময়ের জন্য। (আহমদ হাসান)

এছাড়া হুজুরে পাক (সাঃ) সাবান মাসে অসংখ্য রোজা রাখতেন। এজন্য সাবান মাসে প্রতি সপ্তাহে আমরা দুইটি অথবা প্রতিমাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি।

কোরআন তিলাওয়াত : কোরআন নাজিলের মাস এ মাসে আমাদের প্রচুর কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত যা মানুষের জন্য পুরোটাই হেদায়েত, যা এমন স্পষ্ট উপদেশ পূর্ণ যে, যা সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে। (আলবাকারা পৃঃ ১৮৫)

কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে আমাদের জন্য উত্তম পন্থা হবে, অর্থ বুঝে বুঝে বাংলা অনুবাদ সহকারে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং টার্গেট নিতে পারি পুরো মাসে অনুবাদ খতম দেয়া কারণ অনুবাদ সহকারে পড়তে পারলে প্রতি অক্ষরে ১০+৭০=৭০০ বেশি সওয়াবের ভাগি হওয়া যাবে।

নফল ইবাদত বাড়ানো : যেহেতু রমজান মাসের নফল ইবাদতকে অন্যান্য মাসের ফরজ ইবাদতের সাথে তুলনা করা হয়েছে সুতরাং এ মাসে নফল ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম।

যিকির এবং ফিকিরে থাকা : মহিমান্বিত মাস, ইবাদতের মাস, অবশ্যই আমাদেরকে ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে গাম্ভীর্যের সাথে কাটাতে হবে। “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য এবং সম্মানের বিষয় হচ্ছে দোয়া অন্য কিছু নয়”। (শাহী আলজামী-১১৩৩) যারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না আল্লাহ তাদের প্রতি নারাজ থাকেন।

চরিত্র গঠনের সময় :
পবিত্র রমজানকে পাথেয় করে উত্তম চরিত্র গঠন করতে হবে।

নিয়মতান্ত্রিকভাবে আল্লাহর কাছে অনুশোচনা করতে হবে :
কারণ রমজান মাস, রহমতের মাগফেরাত এবং নাজাতের মাস সুতরাং এই মাসে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে- “আল্লাহ তাদের অধিক পছন্দ করেন যারা পাপ থেকে ফিরে থাকে ও পবিত্রতার পথে চলে” (আল-বারাকা : ২২২)

সদয়তা, দরিদ্র-সেবা, উদারতা বাড়ানো হবে : হুজুর পাক (সাঃ) যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে তাকে ও সমানভাবে পুরস্কৃত করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন হাদিস শরিফে এসেছে রমজান মাস হচ্ছে দান দক্ষিনার মাস। এ মাসেই আমাদেরকে গরীব দুঃখী মেহনতী মানুষকে সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

অপরপক্ষে বলা হয়েছে-পাপাচার ত্যাগ না করলে রোযা নিষ্ফল উপবাসে পরিণত হয়, সুতরাং এই মাসকে উপলক্ষ করে আমাদের অনেক কিছুকে বারণ করতে হবে। রসুল (স.) বলেছেন-“এমন বহু (হতভাগা) রোযাদার রয়েছে যার রোযা থেকে ক্ষুধা ও পিপাসায় কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কোন লাভ হয় না। আর রমজানের রাতের নামাজ (তারাবীহ) পড়–য়াদের মধ্যেও অনেক এমন রয়েছে যাদের তারাবীহ থেকে বিনিদ্র রাত কাটানো ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হয় না।

অতএব, রমজান মাসে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা আমাদেরকে অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

নামাজ বিহীন রোজা :
রোজা যে ফরজ নামাজ ও সে রকম ফরজ বিষয় সুতরাং রোজা পালনের সাথে সাথে অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে।

অনৈতিক আচার-আচরণ : রোজা রাখল অথচ নৈতিক আচারণ থেকে দূরে সরে থাকল আল্লাহর দরবারে সেই রকম রোজাদারদের রোজা কবুল হবে না। (বুখারী)

অতিরিক্ত খাবার :
অনেক সময় দেখা গেছে রোজা রাখার কারণে খাবারে ভিন্ন ধরণের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। যেটা আদৌ ঠিক বলে মনে হয় না স্বাস্থ্যবিদদের কাছে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত খাবার পাকস্থলিকে ব্যস্ত করে রাখে, যার ফলে রোজাদারের অতি কষ্ট হয়।

প্রদর্শিত নিয়মানুযায়ী সিয়াম সাধন ইমানের দাবী। অন্যথায় আমাদের রোজা পালন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হিসেবে বিবেচিত হবে। হাদিস শরীফে এসেছে কিছু কিছু লোকের সিয়াম সাধন উপবাস ছাড়া আর কিছুই না, কারণ রোজার হক সমূহ যথাযথভাবে পালন না হলে সেটাকে ইসলামী আইনানুযায়ী রোজা বলা হবে না। অতএব আমাদের জানা দরকার রসুল (স.) এর রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি কি ছিল তিনি (স.) কোন কাজ বেশি বেশি করতেন, কোন কাজকে বারণ করতেন এসব বিষয়ে আমাদের ওয়াকিবহাল হওয়া উচিত।

হাদিস শরীফে দেখা গেছে হুজুর পাক (সাঃ) এই দুই মাসে প্রচুর রোযা পালন করতেন। অনেক সময় মনে হয় তিনি (সাঃ) রমজান মাসের মত রোজা রাখা শুরু করেছেন। আবার এ কথাও সত্য যে, তিনি সারা বছর বিভিন্ন সময়ে রোজা রেখে আসছেন। আমরা এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারি-কমপক্ষে সপ্তাহে সোমবার এবং বৃহস্পতিবার রোজা পালন করতে পারি।

হযরত সালমান ফারসী(র.) থেকে বর্ণিত শাবান মাসের শেষ দিন রসুল (স.) আমাদের সামনে এরূপ ভাষণ দনে, “হে জনগন, অত্যন্ত মর্যাদাবান ও কল্যাণময় একটা মাস তোমাদের কাছে সমাগত। এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, আল্লাহ তায়ালা এই মাসে রোযা রাখাকে ফরজ করেছেন এবং এ মাসের রাতে তারাবীহ পড়াকে নফল করেছেন।

যে ব্যক্তি এ মাসে কোন একটা নফল কাজ স্বেচ্ছায় করলো সে যেন রমজান মাস ছাড়া অন্যান্য মাসে একটা ফরজ কাজে ছিল।

হযরত সালমান ফারসী (র.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : শাবান মাসের শেষ দিন রাসুল (সাঃ) আমাদের সামনে এরূপ ভাষণ দেন, হে জনগন, অত্যন্ত মর্যাদাবান ও কল্যাণময় একটা মাস তোমাদের কাছে সমাগত।

এ মাসে একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ তায়ালা এই মাসে রোজা রাখাকে ফরজ করেছেন এবং এ মাসের রাতে তারাবীহ পড়াকে নফল করেছেন। অর্থাৎ ফরজ নয় এবং সুন্নাত যা আল্লাহর কাছে প্রিয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোন একটা নফল কাজ স্বেচ্ছায় করলো সে যেন রমজান মাস ছাড়া অন্যান্য মাসে কোন একটা ফরজ কাজ করলো, সে যেন অন্য মাসে সত্তরটা ফরজ আদায় করলো। এ মাস দৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার মাস, আর ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার প্রতিদান হচ্ছে বেহেশত, এ মাস সমাজের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। (মেশকাত)

“সহানুভূতির মাস” এর মর্মার্থ হলো, যে সব রোযাদারদেরকে আল্লাহ’তায়ালা স্বচ্ছল বানিয়েছেন, তাদের উচিত স্থানীয় দরিদ্র ও অভাবী লোকদের আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের অংশীদার করা এবং তাদের জন্য সাহরী ও ইফতারের ব্যবস্থা করা। শুরুতে নবী (স.) মুসলমানদেরকে মাত্র প্রতি মাসে তিনদিন রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ রোজা ফরজ ছিল না। তারপর দ্বিতীয় হিজরতে কুরআন রমজান মাসে রোজার বিধান নাযিল হয়। তবে একটু সুযোগ দেয়া হয়, রোজার কষ্ট বরদাশত করার সামর্থ থাকা সত্বেও যারা রোযা রাখেন না তারা প্রতিটি রোজার বদলে একজন মিসকীনকে আহার করাবে। পরে দ্বিতীয় বিধানটি নাযিল হয়।

এতে পূর্বে প্রদত্ত সাধারণ সুযোগ বাতিল করে দেয়া হয়। কিন্তু রোগী, মুসাফির, গর্ভবতী মহিলা বা দুগ্ধপোষ্য শিশুর মাতা এবং রোজা রাখার সামর্থ নেই এমন সব বৃদ্ধের জন্য এ সুযোগটি আগের মতই বহাল রাখা হয়। (তাফহীযুল কোরআন, খন্ড ১ পৃষ্টা ১২২)

পরিশেষে বলতে পারি যে, রমজান মাস ফজিলতের মাস, ইবাদতের মাস, বরকতময় মাস, দান-খয়রাত করার মাস, মাগফিরাতের মাস, রহমতের মাস, নাজাতের মাস- এত লাভবান হওয়া সত্বেও আমারা রমজানের ব্যাপারে সজাগ হতে পারলাম না।

পরিতাপের বিষয় : বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা, ক্রিকেট খেলা আগমনের এক বছর পূর্বে থেকে সারা বিশ্বব্যাপী অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে, ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রিন্টিং মিডিয়ায়- হৈ-চৈ পড়ে যায়। কোথায় ব্রাজিল, কোথায় আর্জেন্টিনা অনেকেই জানেনা, অথচ গ্রাম বাংলায় শহরে, নগরে গ্রামে-গঞ্জে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার পতাকা খচিত ব্যানার, পোষ্টার, পেষ্টুন, দেয়াললিখা ছেঁয়ে যায়।

এ বারে লক্ষ্য করা গেছে সরকারী আইন উপেক্ষা করে, দেশের পতাকার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শিত হয়েছে, প্রাণহানি ঘটেছে ডজন খানেক, মারামারি হানাহানি বাজিমাত তো আছেই, কি লাভ এতে ? দেশের কোটি কোটি টাকা অপচয় করে- যে টাকা ইহকালীন কল্যাণ পরকালীন মুক্তির কোন কাজেই আসবেনা।

আসুন আমরা এসব বর্জন করি রমজানের জন্য শারিরীক, মানসিক এবং পারিপার্শ্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে মাহে রমজানকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিই। “আহলান সাহলান মাহে রমজান” খচিত পোষ্টার তৈরি করে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করি।

অপকর্ম, কুসংস্কার, বেহায়াপনা, লুটতরাজ, অশ্লীলতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। শোষিত, বঞ্জিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত মুসলিম জাহানের জন্য ঐক্যমত গড়ে তুলি এবং সাহায্য সহযোগীতার হাত প্রসারিত করে দিই। দেশের স্বাধীনতা সার্বভোমত্ব রক্ষার জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, বসনিয়া, চেচনিয়া, ইরাক, মিয়ানমারের মুসলমানদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করি। অনেক নিরপরাধ মুসলিম বিনা দোষে কারাবরণ করতেছে ঈদের আগেই তাদের মুক্তি দাবি করছি।

জালেমদের একথা মনে রাখা দরকার যে, যুগে যুগে- যারা ইসলামের বিরোধিতা করছে তাদের কেউ রেহাই পাইনি, নমরুদ ফেরাউন, আবু জেহেল, আবু লাহাব সবাইকে শেষ পরিণাম ভোগ করতে হয়েছে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সুস্থ সবল থেকে রমজানের পবিত্রতা বজায় রেখে সিয়াম সাধনায় তৌফিক দান করুন। (আমিন)। #সংগৃহীত ইন্টারনেট থেকে।

Logo-orginal