, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

Avatar rtm

শরীয়তের মানদণ্ডে ‘শবে বরাত’

প্রকাশ: ২০১৯-০৪-২১ ১৩:৪৯:২১ || আপডেট: ২০১৯-০৪-২১ ১৩:৫৪:২৪

Spread the love

‘শবে বরাত’ নাকি ‘লাইলাতুন নিসফি মিন সাবান’? আমাদের দেশে এ রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। ফারসী ভাষায়, শব অর্থ রজনী। আর বরাত অর্থ ভাগ্য। সুতরাং শবে বরাতের অর্থ দাঁড়ায়, ভাগ্য রজনী। মূলত: এই পরিভাষাটি কুরআন বা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং একটি আয়াতের অসতর্ক ব্যাখ্যা থেকেই এ ধরনের নামকরণ হতে পারে। সূরা দুখানে বলা হয়েছে, ﴿ ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻨْﺬِﺭِﻳﻦَ . ﻓِﻴﻬَﺎ ﻳُﻔْﺮَﻕُ ﻛُﻞُّ ﺃَﻣْﺮٍ ﺣَﻜِﻴﻢٍ ﴾ “নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়”(সূরা দুখান:৩,৪)। ‘বরকতময় রাত’ বলতে অসাবধানতাবশত কেউ কেউ মধ্য শাবানকে বুঝেছেন। অথচ এর দ্বারা যে রমাদান মাসে অবস্থিত কদরের রাতকে বুঝানো হয়েছে, তা একটি অকাট্য বিষয়। এজন্যই ইবনুল কায়্যীম (র.) বলেন, ” ﻭﻫﺬﻩ ﻫﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻗﻄﻌﺎ ﻟﻘﻮﻟﻪ – ﺗﻌﺎﻟﻰ :- ﺇﻧﺎ ﺃﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻭﻣﻦ ﺯﻋﻢ ﺃﻧﻬﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻘﺪ ﻏﻠﻂ “ “এটি অকাট্যভাবে কদরের রাত্রি। কারণ আল্লাহ বলছেন, নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে কদরের রাত্রিতে নাযিল করেছি। আর যারা শাবানের মধ্য রাত্র ধারণা করছে, তারা আসলে ভুল করছে”। ইবনু কাসিরও বলছেন, ” ﻭﻣﻦ ﻗﺎﻝ : ﺇﻧﻬﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻘﺪ ﺃﺑﻌﺪ ﺍﻟﻨَّﺠْﻌَﺔ ﻓﺈﻥ ﻧﺺ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺃﻧﻬﺎ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ “ “যারা শাবানের মধ্য রাত্রি বলছেন, তারা বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। বরং এটি যে রমাদান মাসের একটি রাত, সে ব্যাপারে কুরআনের ভাষা সুস্পষ্ট”। আল্লামা শানকিতী বলেন, ” ﺇﻧﻬﺎ ﺩﻋﻮﻯ ﺑﺎﻃﻠﺔ ” (মধ্য শাবানের দাবী) একটি ভিত্তিহীন দাবী”। এভাবে প্রমাণিত হলো, কুরআনের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ রাতের কোন উল্লেখ নেই। বরং একাধিক হাদীসে এ রাতের উল্লেখ পাওয়া যায়। একটু পরেই যেগুলোর আলোচনা আসবে। যেথায় এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘শাবানের ১৫তম রজনী’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই শবে বরাত না বলে এ রাতকে হাদীসের দেয়া ভাষায় নামকরণ করাই বাঞ্জনীয়। তবে হা, বরাত বলতে যদি আরবী ﺑﺮﺍﺀﺓ (বারাআত) কে বুঝানো হয়, তাহলে অনেকটা মেনে নেয়া যায়। যার অর্থ, মুক্তি বা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি। তাহলে পুরো অর্থ দাঁড়াবে, গুনাহ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত। কারণ হাদীসের আলোকে বুঝা যায়, এ রাতে এমনটি ঘটে থাকে। শরীয়তের মানদন্ডে শাবানের ১৫তম রজনীর মাহাত্ম্য: শাবানের মধ্য রজনী একটি পবিত্র ও মাহাত্ম্যপূর্ণ রজনী। এর রয়েছে স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ করুণা ধন্য এ রাত। এ রাতে ইবাদাত- বন্দেগী করা উত্তম। এ মর্মে কুরআনে কিছু না থাকলেও হাদীসের মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট বক্তব্য। একাধিক হাদীস দ্বারা এই মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত। হযরত মু‘আয বিন জাবাল, আবু বকর, আবু ছা‘লাবাহ, আবু মুসা আশ‘আরী, আবু হুরায়রা, ‘আইশা, আবদুল্লাহ বিন ‘উমার ও আওফ বিন মালিক (রা.) প্রমুখ সাহাবী থেকে এ সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে। নিন্মে হাদীসগুলো সূত্র ও স্তর বিবরণসহ উল্লেখ করা হলো: ১. মু‘আয বিন জাবালের হাদীস: হযরত মু‘আয বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, ﻳَﻄْﻠُﻊُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺧَﻠْﻘِﻪِ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻓَﻴَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﺠَﻤِﻴﻊِ ﺧَﻠْﻘِﻪِ ﺇِﻻ ﻟِﻤُﺸْﺮِﻙٍ ﺃَﻭْ ﻣُﺸَﺎﺣِﻦٍ “আল্লাহ তাঁর সমস্ত সৃষ্টির দিকে শাবানের মধ্যরাতে দৃষ্টি দেন। অতঃপর তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে মাফ করে দেন, শুধুমাত্র মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত”। এ হাদীসটি ইবনি হিব্বান তাঁর ছহীহের বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাইসামী এ হাদীস প্রসঙ্গে বলেন: ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﻭﺍﻷﻭﺳﻂ ﻭﺭﺟﺎﻟﻬﻤﺎ ﺛﻘﺎﺕ . “হাদীসটি ইমাম তাবারানী তাঁর আল-মু‘যাম আল-কাবীর ও আছ-ছগীরের মধ্যে রিওয়ায়িত করেছেন। এ দুটোতেই হাদীসটির বর্ণনাকারীরা নির্ভরযোগ্য”। ২. হযরত আবু বকরের হাদীস: হযরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, ( ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻳﻨﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺒﺎﺭﻙ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﺇﻟﻰ ﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﻌﺒﺎﺩﻩ ﺇﻻ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﻣﺸﺮﻙ ﺃﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ ﻷﺧﻴﻪ যখন শাবানের মধ্য রাত আসে, আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবর্তীর্ণ হন। তারপর সব বান্দাকে মাফ করে দেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি শত্রুতাভাবাপন্ন তাদেরকে ছাড়া”। ইমাম হাইসামী ﻣﺠﻤﻊ ﺍﻟﺰﻭﺍﺋﺪ এ বলেন: ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺰﺍﺭ ﻭﻓﻴﻪ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺫﻛﺮﻩ ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺣﺎﺗﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﺮﺡ ﻭﺍﻟﺘﻌﺪﻳﻞ ﻭﻟﻢ ﻳﻀﻌﻔﻪ ﻭﺑﻘﻴﺔ ﺭﺟﺎﻟﻪ ﺛﻘﺎﺕ হাদীসটি ইমাম বাযযার বর্ণনা করেছেন। এর সনদের মধ্যে আবদুল মালিক বিন আবদিল মালিক নামে একজন রাবী আছেন। ইবনু আবি হাতিম আল-জারহ অত-তাদিল কিতাবে তার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেন নি। এছাড়া, সনদের অন্যান্য সব রাবী (বর্ণনাকারী) বিশ্বস্ত”। ৩. আবু ছা‘লাবাহর হাদীস: হযরত আবু ছা‘লাবাহ থেকে বর্ণিত। নবী (স.) ইরশাদ করেন, ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻟﻰ ﻋﺒﺎﺩﻩ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﻠﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻭﻳﻤﻬﻞ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮﻳﻦ ﻭﻳﺪﻉ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﻘﺪ ﻟﺤﻘﺪﻫﻢ ﺣﺘﻰ ﻳﺪﻋﻮﻩ “আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অর্ধ শাবানের রাতে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং সমস্ত মুমিনকে মাফ করে দেন। তবে কাফিরদেরকে অবকাশ দেন। আর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে পরিত্যাগ করেন, যতক্ষণ না তারা হিংসা-বিদ্বেষ বর্জন করে”। হাদীসটি ইমাম বাযযার তার মুসনাদে ও ইমাম বায়হাকী তার আস-সুনান আছ-ছুগরাতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাইসামী বলেন: ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻭﻓﻴﻪ ﺍﻷﺣﻮﺹ ﺑﻦ ﺣﻴﻜﻢ ﻭﻫﻮ ﺿﻌﻴﻒ তাবারানী হাদীসটি বেওয়ায়েত করেছেন। এর মধ্যে আল-আহওয়াস বিন হাকীম নামে একজন রাবী আছেন। তিনি দুর্বল”। ৪. আবু মুসা আশ‘আরীর হাদীস: আবু মুসা আশ‘আরী (রা.) রাসূল (স.) থেকে বর্ণনা করেন, ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻴَﻄَّﻠِﻊُ ﻓﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣﻦ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻓَﻴَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﺠَﻤِﻴﻊِ ﺧﻠﻘﺔ ﺇﻻ ﻟِﻤُﺸْﺮِﻙٍ ﺃﻭ ﻣُﺸَﺎﺣِﻦٍ “নিশ্চয়ই আল্লাহ অর্ধ শাবানের রাত্রিতে তাকান। তারপর মুশরিক ও মুশাহিন (অন্যের প্রতি বৈরিভাব পোষণকার) ব্যতীত তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন”। ইমাম ইবনু মাজাহ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ﻣﺠﻤﻊ ﺍﻟﺰﻭﺍﺋﺪ (মাজমাউয যাওয়াইদ) নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺿﻌﻴﻒ এর সনদটি দুর্বল। তবে ইমাম আলবানী বলছেন, ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ এটি একটি হাসান হাদীস। ৫. হযরত আবু হুরায়রার হাদীস: ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ :- ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻳﻐﻔﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻌﺒﺎﺩﻩ ﺇﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺃﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেন, “যখন অর্ধ শাবানের রাত্রি আসে, আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক ও মুশাহিন ব্যতীত”। ইমাম ইবনুল হাইসামী এ হাদীস প্রসঙ্গে বলেন, “হাদীসটি ইমাম বাযযার বর্ণনা করেছেন। এর সনদের মধ্যে হিশাম বিন আবদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি আছেন। তাকে আমি চিনি না। তবে অন্যান্য সবাই নির্ভরযোগ্য”। ৬. হযরত ‘আইশার হাদীস: ক. ইমাম তিরমিযি হযরত ‘আইশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ﻓَﻘَﺪْﺕُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ- ﻟَﻴْﻠَﺔً ﻓَﺨَﺮَﺟْﺖُ ﻓﺈﺫﺍ ﻫﻮ ﺑِﺎﻟْﺒَﻘِﻴﻊِ ﻓﻘﺎﻝ : ﺃَﻛُﻨْﺖِ ﺗَﺨَﺎﻓِﻴﻦَ ﺃَﻥْ ﻳَﺤِﻴﻒَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻠَﻴْﻚِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ، ﻗﻠﺖ : ﻳﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇﻧﻲ ﻇَﻨَﻨْﺖُ ﺃَﻧَّﻚَ ﺃَﺗَﻴْﺖَ ﺑَﻌْﺾَ ﻧِﺴَﺎﺋِﻚَ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻳَﻨْﺰِﻝُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣﻦ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻓَﻴَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﺄَﻛْﺜَﺮَ ﻣﻦ ﻋَﺪَﺩِ ﺷَﻌْﺮِ ﻏَﻨَﻢِ ﻛَﻠْﺐٍ “একদা রাত্রিতে আমি রাসূল (স.) কে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই তার সন্ধানে বের হলাম। জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে তাকে পেলাম। তিনি বললেন, তুমি কি আশঙ্কা করছিলে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.) তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভেবেছিলাম, আপনি অপনার অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ শাবানের রাত্রিতে দুনিয়ার আকাশে অবর্তীর্ণ হন এবং বনী কালবের ছাগল পালের লোমের চেয়ে অধিক পরিমাণ মানুষের গুনাহ মাফ করে দেন”। ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, ﺣَﺪِﻳﺚُ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻟَﺎ ﻧَﻌْﺮِﻓُﻪُ ﺇﻻ ﻣﻦ ﻫﺬﺍ ﺍﻟْﻮَﺟْﻪِ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻟْﺤَﺠَّﺎﺝِ ﻭﺳَﻤِﻌْﺖ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻳُﻀَﻌِّﻒُ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ‘আইশার হাদীসটি হাজ্জাজের এই সূত্র ছাড়া অন্য কোন ধারা থেকে আমাদের জানা নেই। মুহাম্মাদ এই হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন বলে শুনেছি’। হাদীসটি আরো বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ, ইবনু আবি শাইবাহ, আহমাদ বিন হাম্বল। শুআইব আরনাউত বলেন, ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺿﻌﻴﻒ এর সনদটি দুর্বল। খ. ইমাম বায়হাক্কী বর্ণনা করেন, ﺃﻥ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻗﺎﻟﺖ : ﻗﺎﻡ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻳﺼﻠﻲ ﻓﺄﻃﺎﻝ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﺣﺘﻰ ﻇﻨﻨﺖ ﺃﻧﻪ ﻗﺪ ﻗﺒﺾ ﻓﻠﻤﺎ ﺭﺃﻳﺖُ ﺫﻟﻚ ﻗﻤﺖ ﺣﺘﻰ ﺣﺮﻛﺖ ﺇﺑﻬﺎﻣﻪ ﻓﺘﺤﺮﻙ ﻓﺮﺟﻌﺖ، ﻓﻠﻤﺎ ﺭﻓﻊ ﺍﻟﻲ ﺭﺃﺳﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﻭﻓﺮﻍ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻪ ﻗﺎﻝ : ﻳﺎ ﻋﺎﺋﺸﻪ ﺃﻭ ﻳﺎ ﺣﻤﻴﺮﺍﺀ : ﺃﻇﻨﻨﺖ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻗﺪ ﺧﺎﺱ ﺑﻚ؟ ﻗﻠﺖ : ﻻ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﻟﻜﻨﻨﻲ ﻇﻨﻨﺖُ ﺃﻧﻚ ﻗﺒﻀﺖ ﻟﻄﻮﻝ ﺳﺠﻮﺩﻙ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺃﺗﺪﺭﻳﻦ ﺃﻱ ﻟﻴﻠﺔ ﻫﺬﻩ؟ ﻗﻠﺖ : ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﺃﻋﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻫﺬﻩ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ، ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻳﻄﻠﻊ ﻋﻠﻰ ﻋﺒﺎﺩﻩ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ، ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﻠﻤﺴﺘﻐﻔﺮﻳﻦ، ﻭﻳﺮﺣﻢ ﺍﻟﻤﺴﺘﺮﺣﻤﻴﻦ، ﻭﻳﺆﺧﺮ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﻘﺪ ﻛﻤﺎ ﻫﻢ ) হযরত ‘আইশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (স.) রাতে নামাযে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হলো, তাঁর হয়তো ইনতেকাল হয়ে গেছে। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে ‘আইশা, অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল (স.) তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যু বরণ করেছেন কিনা? নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি প্রদান করেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদেও ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই”। গ. ইমাম বায়হাকীর অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ﻓﻘﺎﻝ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ، ﻭﻟﻠﻪ ﻓﻴﻬﺎ ﻋﺘﻘﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺑﻌﺪﺩ ﺷﻌﻮﺭ ﻏﻨﻢ ﻛﻠﺐ،ﻻ ﻳﻨﻈﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻬﺎ ﺇﻟﻰ ﻣﺸﺮﻙ ﻭﻻ ﺇﻟﻰ ﻣﺸﺎﺣﻦ ﻭﻻ ﺇﻟﻰ ﻗﺎﻃﻊ ﺭﺣﻢ ﻭﻻ ﺇﻟﻰ ﻣﺴﺒﻞ ﻭﻻ ﺇﻟﻰ ﻋﺎﻕّ ﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻪ ﻭﻻ ﺇﻟﻰ ﻣﺪﻣﻦ ﺧﻤﺮ، ﻗﺎﻝ : ﺛﻢ ﻭﺿﻊ ﻋﻨﻪ ﺛﻮﺑﻴﻪ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻲ : ﻳﺎ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺗﺄﺫﻧﻴﻦ ﻟﻲ ﻓﻲ ﻗﻴﺎﻡ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ، ﻓﻘﻠﺖ : ﻧﻌﻢ ﺑﺄﺑﻲ ﻭﺃﻣﻲ ﻓﻘﺎﻡ ﻓﺴﺠﺪ ﻟﻴﻼ ﻃﻮﻳﻼ ﺣﺘﻰ ﻇﻨﻨﺖ ﺃﻧﻪ ﻗﺒﺾ، ﻓﻘﻤﺖ ﺍﻟﺘﻤﺴﺘﻪ ﻭﻭﺿﻌﺖ ﻳﺪﻱ ﻋﻠﻰ ﺑﺎﻃﻦ ﻗﺪﻣﻴﻪ ﻓﺘﺤﺮﻙ ﻓﻔﺮﺣﺖ ﻭﺳﻤﻌﺘﻪ ﻳﻘﻮﻝ ﻓﻲ ﺳﺠﻮﺩﻩ : ﺃﻋﻮﺫ ﺑﻌﻔﻮﻙ ﻣﻦ ﻋﻘﺎﺑﻚ، ﻭﺃﻋﻮﺫ ﺑﺮﺿﺎﻙ ﻣﻦ ﺳﺨﻄﻚ، ﻭﺃﻋﻮﺫ ﺑﻚ ﻣﻨﻚ ﺟﻞ ﻭﺟﻬﻚ ﻻ ﺃﺣﺼﻲ ﺛﻨﺎﺀً ﻋﻠﻴﻚ، ﺃﻧﺖ ﻛﻤﺎ ﺃﺛﻨﻴﺖَ ﻋﻠﻰ ﻧﻔﺴﻚ، ﻓﻠﻤﺎ ﺃﺻﺒﺢ ﺫﻛﺮﺗﻬﻦ ﻟﻪ ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﻋﺎﺋﺸﺔ : ﺗﻌﻠﻤﺘِﻬﻦَّ؟ ﻓﻘﻠﺖ : ﻧﻌﻢ . ﻓﻘﺎﻝ : ﺗﻌﻠﻤﻴﻬﻦَّ ﻭﻋﻠﻤﻴﻬﻦَّ؛ ﻓﺈﻥ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻤﻨﻴﻬﻦَّ ﻭﺃﻣﺮﻧﻲ ﺃﻥ ﺃﺭﺩﺩﻫﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ‘অতঃপর তিনি বললেন, এই রাত্রিটি হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত্রি। এই রাতে আল্লাহ কালব গোত্রের ছাগলের গায়ে যে পরিমাণ পশম আছে, সেই পরিমাণ লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন। তবে আল্লাহ এ রাতে মুশরিক, বিদ্বেষপোষণকারী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, টাখনুর নীচে পোশাক পরিধানকারী, মাতা- পিতার অবাধ্য সন্তান এবং মাদকাসক্তের প্রতি তাকান না। অতঃপর আবরণ সরিয়ে বললেন, হে ‘আইশা! তুমি কি আমাকে এই রাত্রে ইবাদাত করার অনুমিত দিবে? আমি বললাম, অবশ্যই, আমার বাবা-মা আপনার জন্য কুরবান হোক। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং এত লম্বা সিজদা করলেন যে, আমার ভয় হলো, তিনি মনে হয় ইনতেকাল করেছেন। তাই আমি উঠে তার শরীর স্পর্শ করলাম। তাঁর পায়ের তলদেশে হাত রাখলাম। তাঁর পা নড়ে ওঠলো। আমি খুশী হলাম। তাকে শুনতে পেলাম, তিনি বলছেন, (হে আল্লাহ) তোমার ক্ষমার দ্বারা তোমার শাস্তি হতে আশ্রয় চাই। তোমার সন্তুষ্টির দ্বারা তোমার ক্রোধ থেকে বাঁচতে চাই। তোমার থেকেই তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তোমার প্রশংসা করে শেষ করতে পারব না। তুমি তেমন, যেমনটি তুমি নিজেই নিজের প্রশংসা করেছ। অতঃপর যখন সকাল হলো, আমি এ দু‘আটি বললাম। রাসূল (স.) বললেন, ‘আইশা, তুমি মুখস্ত করে ফেলেছ? বললাম, হ্যাঁ। এগুলো মানুষকে জানিয়ে দাও, শিখিয়ে দাও। জিব্রাইল (আ.) আমাকে এগুলো শিখিয়েছেন এবং সিজদাতে এ দু‘আ পুনরাবৃত্তি করতে বলেছেন’। ইমাম বায়হাকী হাদীসটি বর্ণনা করে বলছেন, এটির সনদ দুর্বল। ৭. হযরত আবদুল্লাহ বিন ‘উমরের হাদীস: ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺍﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻗﺎﻝ : ﻳَﻄَّﻠِﻊُ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﺇﻟﻰ ﺧﻠﻘﺔ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣﻦ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻓَﻴَﻐْﻔِﺮُ ﻟِﻌِﺒَﺎﺩِﻩِ ﺍﻻ ﻻِﺛْﻨَﻴْﻦِ : ﻣُﺸَﺎﺣِﻦٍ ﻭَﻗَﺎﺗِﻞِ ﻧَﻔْﺲٍ হযরত আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (স.) বলেন, “আল্লাহ অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি তাকান। অতঃপর সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, দু’ শ্রেণী ব্যতীত: ক. মুশাহিন (বিদ্বেষপোষণকারী) ; খ. মানব হত্যাকারী”। ইমাম হাইসামী বলেন, ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﻓﻴﻪ ﺍﺑﻦ ﻟﻬﻴﻌﺔ ﻭﻫﻮ ﻟﻴﻦ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺑﻘﻴﺔ ﺭﺟﺎﻟﻪ ﻭﺛﻘﻮﺍ “ইমাম আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এর সনদের মধ্যে রয়েছে, ইবনু লাহীয়াহ। তিনি লাইয়্যেনুল হাদীস (হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে কিছুটা কোমলাতা/দুর্বলতা বিশিষ্ট)। তবেঅন্যান্য সব রাবী নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত”। এছাড়া, ইমাম বাযযারও এটি বর্ণনা করেছেন। ৮. আওফ বিন মালিকের হাদীস: ﻋﻦ ﻋﻮﻑ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ : – ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ‏(ﻳﻄﻠﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺒﺎﺭﻙ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻠﻰ ﺧﻠﻘﻪ ﻟﻴﻠﺔَ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ، ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻟﻬﻢ ﻛﻠِّﻬﻢ ﺇﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙٍ ﺃﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ হযরত আওফ বিন মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় সৃষ্টির উপর শাবানের মধ্যরাতে দৃষ্টি নিবন্ধন করেন। এবং তাদের সবাইকেই মাফ করে দেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও মুশাহিন ছাড়া। ইমাম হাইসামী বলেন, ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺰﺍﺭ ﻭﻓﻴﻪ ﻋﺒﺪﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺯﻳﺎﺩ ﺑﻦ ﺃﻧﻌﻢ ﻭﺛﻘﻪ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺻﺎﻟﺢ ﻭﺿﻌﻔﻪ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻷﺋﻤﺔ ﻭﺍﺑﻦ ﻟﻬﻴﻌﺔ ﻟﻴﻦ ﻭﺑﻘﻴﺔ ﺭﺟﺎﻟﻪ ﺛﻘﺎﺕ বাযযার হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এতে আবদুর রহমান বিন যিয়াদ বিন আনউম রয়েছে। ইমাম আহমাদ তাকে নির্ভরযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে অধিকাংশ আলিম তাকে দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়া , ইবনু লাহিয়াহও আছেন। যিনি একটু নরম। বাকী সব রাবী সিকাত”। ৯. কাসীর বিন মুররা আল-হাদরামীর হাদীস। ﻋﻦ ﻛﺜﻴﺮ ﺑﻦ ﻣﺮﺓ ﺍﻟﺤﻀﺮﻣﻲ، ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ :- ‏(ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪَ ﻳﻨﺰﻝ ﻟﻴﻠﺔَ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ، ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﺬﻧﻮﺏ ﺇﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙٍ ﺃﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ হযরত কাসীর বিন মুররা আল-হাদরামী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ শাবানের মধ্য রাতে অবতীর্ণ হন। তারপর এ রাতে মুশরিক ও মুশাহিনের গুনাহ ব্যতীত অন্য সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন”। হাদীসটি ইবনু আবি শাইবাহ, আবদুর রাজ্জাক তাদের মুছান্নাফে এবং বাযযার তাঁর মুসনাদের বর্ণনা করেছেন। এতক্ষণে আমাদের সামনে যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে তাহলো, উপরিউক্ত হাদীসগুলোর সনদসমূহ সমপর্যায়ের নয়। কিছু শুদ্ধ, আবার কিছু দুর্বল। তবে সবগুলো একত্রিত করলে এ কথা না বলে কোন উপায় নেই যে, এ রাতটির ফজিলত একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। এজন্য গবেষকগণ বলছেন, ﺃﻥَّ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚَ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺛﺎﺑﺘﺔ ﻭﻓﻲ ﺃﻗﻞِّ ﺃﺣﻮﻟﻬﺎ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﺣﺴﻨﺔ ﻟﻐﻴﺮﻫﺎ ﺑﻤﺠﻮﻉ ﻃﺮﻗﻬﺎ، ﻭﻣﻦ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻣﻦ ﺻﺮﺡ ﺃﻧﻬﺎ ﺻﺤﻴﺤﺔ ﻟﻐﻴﺮﻫﺎ ﺑﻤﺠﻤﻮﻉ ﻃﺮﻗﻬﺎ ﻷﻥّ ﻣﻦ ﻃﺮﻗﻬﺎ ﺣﺴﻨﺔ ﺑﺬﺍﺗﻬﺎ বর্ণনার সবগুলো ধারা একত্রিত করলে হাদীসগুলোর সর্ব নিন্মস্তর হবে ‘হাসান লিগইরিহা’।অনেকগবেষক আবার স্পষ্ট করে বলছেন যে, এদের সবগুলো ধারা সমন্বিত করলে ‘ছহীহ লিগইরিহা’র পর্যায়ভুক্ত হবে। কারণ এগুলো যে সব ধারাই বর্ণিত হয়েছে, তাতে নিজেরাই ‘হাসান’ হিসেবে গণ্য। এ প্রসঙ্গে শরীয়াহ বিশেষজ্ঞ সর্বজন স্বীকৃত আলেমদের বক্তব্য বিষয়টিকে আরো প্রতিভাত করবে। নিন্মেতা প্রদত্ত হলো, হাফিজ ইবনু রজব বলেন, ﺍﺧﺘﻠﻒ ﻓﻴﻬﺎ، ﻓﻀﻌﻔﻬﺎ ﺍﻷﻛﺜﺮﻭﻥ، ﻭﺻﺤﺢ ﺍﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ﺑﻌﻀﻬﺎ، ﻭﺧﺮﺟﻪ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ . অর্ধ শাবানের রাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। অনেকেই এগুলোকে দুর্বল বলেছেন। ইবনু হিব্বান এদের কিছুকে ছহীহ বলেছেন এবং তার ছহীহ কিতাবের মধ্যে তাখরীজ করেছেন। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেন, ﻭﺃﻣﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻔﻴﻬﺎ ﻓﻀﻞٌ، ﻭﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﻣﻦ ﻳﺼﻠﻲ ﻓﻴﻬﺎ، ﻟﻜﻦَّ ﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻉ ﻓﻴﻬﺎ ﻹﺣﻴﺎﺋﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﺑﺪﻋﺔٌ، ﻭﻛﺬﻟﻚ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻷﻟﻔﻴﺔ “অর্ধ শাবানের রাতের মাহাত্ম্য রয়েছে। সালাফদের মধ্যে কেউ কেউ এ রাতে নামায পড়তেন। তবে মসজিদের মধ্যে এ রাতে ইবাদাতের জন্য একত্রিত হওয়াটা বিদ‘আত। তদ্রƒপ আলফিয়্যাহ নামক বিশেষ নামায আদায় করা”। তিনি আরো বলেন, ﻟﻴﻠﺔُ ﻧﺼﻒ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺭﻭﻱَ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻦ ﺍﻷﺧﺒﺎﺭ ﻭﺍﻵﺛﺎﺭ ﻣﺎ ﻳﻘﺘﻀﻲ ﺃﻧﻬﺎ ﻣﻔﻀﻠﺔ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﻣﻦ ﺧﺼَّﻬﺎ ﺑﺎﻟﺼﻼﺓ ﻓﻴﻬﺎ ﻭﺻﻮﻡ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺟﺎﺀﺕ ﻓﻴﻪ ﺃﺧﺒﺎﺭ ﺻﺤﻴﺤﺔ ﺃﻣﺎ ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻳﻮﻡ ﻧﺼﻔﻪ ﻣﻔﺮﺩﺍً ﻓﻼ ﺃﺻﻞ ﻟﻪ، ﺑﻞ ﻳﻜﺮﻩ، ﻗﺎﻝ : ﻭﻛﺬﺍ ﺍﺗﺨﺎﺫﻩ ﻣﻮﺳﻤﺎً ﺗﺼﻨﻊ ﻓﻴﻪ ﺍﻷﻃﻌﻤﺔ ﻭﺍﻟﺤﻠﻮﻯ ﻭﺗﻈﻬﺮ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﺰﻳﻨﺔ ﻭﻫﻮ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻮﺍﺳﻢ ﺍﻟﻤﺤﺪﺛﺔ ﺍﻟﻤﺒﺘﺪﻋﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻻ ﺃﺻﻞ ﻟﻬﺎ، ﻭﻣﺎ ﻗﻴﻞ ﻣﻦ ﻗَﺴْﻢِ ﺍﻷﺭﺯﺍﻕ ﻓﻴﻬﺎ ﻟﻢ ﻳﺜﺒﺖ অর্ধ শাবানের রাত্রির ব্যাপারে অনেক হাদীস ও আছার বর্ণিত হয়েছে। যদ্বরা এ রাতের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। সালাফ বা পূর্বসুরীদের মধ্যে কেউ কেউ এ রাতে বিশেষ করে নামায আদায় করতেন। শাবান মাসের রোজার ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদীস এসেছে। তবে শুধুমাত্র পনেরতম দিবসে একটি রোজা পালন করার কোন মূলভিত্তি নেই। বরং তা মাকরূহ। তিনি আরো বলেন, তদ্রƒপ এটিকে রকমারী খাদ্য, হালুয়া তৈরি ও সাজ- সজ্জা প্রকাশের উপলক্ষ বানানো বিদআত। যার কোন ভিত্তি নেই। আর এ রাতে রিযিক বন্টিত হয় এ মর্মে যা কিছু বলা হয় তা প্রমাণিত হয়নি” । ইমাম ইবনু নুজাইম আল-মাসরী বলেন, ﻭﻣﻦ ﺍﻟﻤﻨﺪﻭﺑﺎﺕ ﺇﺣﻴﺎﺀُ ﻟﻴﺎﻟﻲ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻟﻴﻠﺘﻲ ﺍﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﻭﻟﻴﺎﻟﻲ ﻋﺸﺮ ﺫﻱ ﺍﻟﺤﺠﺔ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻛﻤﺎ ﻭﺭﺩﺕ ﺑﻪ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﻭﺫﻛﺮﻫﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺮﻏﻴﺐ ﻭﺍﻟﺘﺮﻫﻴﺐ ﻣﻔﺼﻠﺔ ﻭﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﺈﺣﻴﺎﺀ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻗﻴﺎﻣﻪ ﻭﻇﺎﻫﺮﻩ ﺍﻻﺳﺘﻴﻌﺎﺏ ﻭﻳﺠﻮﺯ ﺃﻥ ﻳﺮﺍﺩ ﻏﺎﻟﺒﻪ، ﻭﻳﻜﺮﻩ ﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻉ ﻋﻠﻰ ﺇﺣﻴﺎﺀ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻦ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻠﻴﺎﻟﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ، যে রাতগুলোকে জাগ্রহ রাখা মুস্তাহাব, সেগুলো হচ্ছে: রমাদানের দশরাত্র, দুই ঈদের দুই রাত্র, জিলহাজ্জ মাসের দশ রাত্র ও শাবানের মধ্যরাত্র। এ মর্মে একাধিক হাদীস রয়েছে। তারগীব ও তারহীব কিতাবে এগুলোর বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। রাতকে জাগ্রহ রাখার অর্থ হলো, ইবাদাতের মাধ্যমে বিনিদ্র রজনী কাটানো। পুরো রাত বা রাতের বেশির ভাগ সময়, দুটোই হতে পারে। এ সব রাতে ইবাদাতের জন্য মসজিদের একত্রিত হওয়া মাকরুহ”। আল্লামা মুবারাকপুরী তার তুহফাতুল আহওয়াজী নামক গ্রন্থে বলেন, ﺍﻋﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﻗﺪ ﻭﺭﺩ ﻓﻲ ﻓﻀﻴﻠﺔ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻋﺪﺓ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﻣﺠﻤﻮﻋﻬﺎ ﻳﺪﻝ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﻟﻬﺎ ﺃﺻﻼً … ﻓﻬﺬﻩ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺑﻤﺠﻤﻮﻋﻬﺎ ﺣﺠﺔ ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﺯﻋﻢ ﺃﻧﻪ ﻟﻢ ﻳﺜﺒﺖ ﻓﻲ ﻓﻀﻴﻠﺔ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺷﻲﺀ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺃﻋﻠﻢ “অর্ধ শাবানের মাহাত্ম্যের ব্যাপারে একাধিত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এগুলো সামষ্টিকভাবে প্রমাণ করে যে, এ রাতের একটি ভিত্তি আছে”। এসব হাদীস সামষ্টিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ যারা মনে করে অর্ধ শাবানের রাতের ব্যাপারে কিছুই সাব্যস্ত হয়নি। আল্লাহই ভালো জানেন”। আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী অর্ধ শাবানের রাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি কথা শুরু করেছেন এভাবে, ্র ﺣﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ ﺭﻭﻱ ﻋﻦ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻣﻦ ﻃﺮﻕ ﻣﺨﺘﻠﻔﺔ ﻳﺸﺪ ﺑﻌﻀﻬﺎ ﺑﻌﻀﺎً গ্ধ ، “হাদীসটি ছহীহ। একদল সাহাবী থেকে বিভিন্ন সূত্রে তা বর্ণিত হয়েছে। যাদের একটি আরেকটিকে মজবুত করে”। আরশেষ করেছেন এ কথা বলে, ্র ﻭﺟﻤﻠﺔ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺃﻥ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺑﻤﺠﻤﻮﻉ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻄﺮﻕ ﺻﺤﻴﺢ ﺑﻼ ﺭﻳﺐ، ﻭﺍﻟﺼﺤﺔ ﺗﺜﺒﺖ ﺑﺄﻗﻞ ﻣﻨﻬﺎ ﻋﺪﺩﺍً، ﻣﺎﺩﺍﻣﺖ ﺳﺎﻟﻤﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻀﻌﻒ ﺍﻟﺸﺪﻳﺪ ﻛﻤﺎ ﻫﻮ ﺍﻟﺸﺄﻥ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ গ্ধ ، মোটামুটি কথা হলো, এই সব ধারায় বর্ণিত হাদীসটি নিঃসন্দেহে ছহীহ বা বিশুদ্ধ। এর চেয়ে কমসংখ্যক সূত্র দিয়েও হাদীসের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। যদি না তাতে প্রবল কোন দুর্বলতা থাকে। যেমনটি এই হাদীস”। এ রাতের ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই, এ মতের প্রবক্তাদের দাবী খন্ডন করতে গিয়ে আল্লামা আলবানী বলেন, ্র ﻟﻴﺲ ﻣﻤﺎ ﻳﻨﺒﻐﻲ ﺍﻻﻋﺘﻤﺎﺩ ﻋﻠﻴﻪ، ﻭﻟﺌﻦ ﻛﺎﻥ ﺃﺣﺪ ﻣﻨﻬﻢ ﺃﻃﻠﻖ ﻣﺜﻞ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ، ﻓﺈﻧﻤﺎ ﺃﺗﻲ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺘﺴﺮﻉ، ﻭﻋﺪﻡ ﻭﺳﻊ ﺍﻟﺠﻬﺪ ﻟﺘﺘﺒﻊ ﺍﻟﻄﺮﻕ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻨﺤﻮ ﺍﻟﺬﻱ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻚ গ্ধ. এটা নির্ভরযোগ্য কথা নয়। এ ধরনের কথা যদি কেউ সাধারণভাবে বলেও থাকে, তবে তা নিতান্তই তাড়াহুরোপ্রসূত। হাদীসটির সবগুলো সূত্র বা বর্ণনার ধারা গবেষণায় যথাসম্ভব শক্তি ব্যয় না করেই এমনটি বলা হতে পারে”। এ রাতে করণীয়: উপরোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা এ রাতের মাহাত্ম্য প্রমাণিত হলেও সেগুলোতে এ রাতের করণীয় কি তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। শুধুমাত্র হযরত আইশার হাদীসে কিছু নমুনা পাওয়া যায়। তবে করণীয়র চেয়ে এগুলোতে বর্জণীয় কাজের প্রতিই অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। আর সে গুলো হচ্ছে: ১. শিরক ২. অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ পরায়ণ হওয়া, ৩. কাউকে হত্যা করা, ৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা; ৫.টাখনুর নীচে কাপড় পরা. ৬. মা-বাবার অবাধ্য হওয়া ৭. মদ সেবন করা। তাই এ রাত্রির মাহাত্ম্য অর্জন করতে হলে প্রথমেই এ সব কাজ থেকে নিজেকে পবিত্র করতে হবে। তাওবাহ ও পারস্পরিক সম্পর্ক সুসংহত করে নেয়ার মাধ্যমে। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানির মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। বেশির হাদীসে দুটো জিনিস বেশি এসেছে। শিরক ও বিদ্বেষ। কারণ এদুটো এমনই মারাত্মক অপরাধ, যা মানুষের ধার্মিকতার মূলে কুঠারাঘাত করে। শিরকের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে ধার্মিকতার কোন লেশমাত্র থাকে না। আর হিংসা- বিদ্বেষের মাধ্যমে মানুষের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি হয়। মুসিলম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়। তাদের শক্তি খর্ব হয়ে যায়। বিজাতীয় অধিপত্য বিস্তৃত হয়। ইসলামের পতাকা হয় অবনমিত। এভাবে এক পর্যায়ে ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিজাতীয় কৃষ্টিকালচার ও জীবনধারার প্রবল আঘাতে। তাছাড়া, যে ব্যক্তি অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে তার ধার্মিতাবোধ ও ধর্মানুশীলন ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে পেয়ে তা শুন্যের কোটায় চলে যায়। কারণ ইসলামের প্রতীকী পর্যায়ের ইবাদাতগুলো সামষ্টিক চেতনাদীপ্ত। নামায, রোজা, যাকাত, হাজ্জ ও আমরু বিল মারুফ, অননাহই আনিল মুনকার ইত্যাদি। মুশাহিন অন্যদের সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে যেমন পছন্দ করেনা, তেমনি অভাবীদের প্রতি যাকাতের হাত প্রসারিত করতে পারে না….এভাবেই তার ধর্মবোধ নষ্ট হয়ে যায়। এক কথায়, শিরক আল্লাহর সাথে আর বিদ্বেষ মানুষের সাথে সম্পর্ক বিনষ্ট করে দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ধর্মকেই ধ্বংস করে দেয়। এছাড়া ও যে কাজ গুলো করা যেতে পারে, তাহলো, ক. নফল নামায, জিকির-আজকার, তিলাওয়াত,ইলম চর্চা, দুআ ইত্যাদি। তবে তা একাকী করাই উত্তম। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এ রাতের কোন নির্দিষ্ট নামায বা অন্যকোন নির্দিষ্ট ইবাদাত নেই। যেমনটি অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়। এ রাত উপলক্ষ্যে, জামাতের সাথে বিশেষ ধরনের নামায আদায় করা, কিংবা অনিবার্য মনে করে মিলাদ মাহফিল করা বা মিষ্টি-হালুয়া ইত্যাদি বিরতণ, কিংবা ভাগ্য রজনী মনে করে সারা বছর ভালো খাওয়া যাবে এ নিয়্যতে এ রাতে রকমারী সুস্বাদু খাদ্য ব্যঞ্জনা খাওয়া, মসজিদ-মাজার ইত্যাদি আলোকসজ্জিত করা, ঈদ উৎসবের আমেজ নিয়ে আড়ম্বতাপূর্ণ পরিবেশে একত্রিত হওয়া, এ রাতকে লাইলাতুল কদরের সমপর্যায়ে নিয়ে প্রাপ্তির চেয়ে অধিক প্রদান করা এগুলো সবই হচ্ছে বাড়াবাড়ি। পরের দিন রোজা রাখা যাবে কিনা? প্রথম কথা হলো, রাসূল (স.) শাবান মাসের বেশির ভাগই রোজা রাখতেন। মেযনটি নিচের হাদীসদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয়। ﺭﻭﻯ ﺃﺳﺎﻣﺔ ﺑﻦ ﺯﻳﺪ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻋﻠﻰ ﺁﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﺃﻧﻪ ﺳﺄﻟﻪ ﻗﺎﺋﻼً : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻢ ﺃﺭﻙ ﺗﺼﻮﻡ ﻣﻦ ﺷﻬﺮ ﻣﻦ ﺷﻬﻮﺭ ﺍﻟﻌﺎﻡ ﻛﻤﺎ ﺗﺼﻮﻡ ﻣﻦ ﺷﻬﺮ ﺷﻌﺒﺎﻥ ! ﻓﻘﺎﻝ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ : ﺫﻟﻚ ﺷﻬﺮ ﻳﻐﻔﻞ ﻋﻨﻪ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﻴﻦ ﺭﺟﺐ ﻭﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻭﻫﻮ ﺷﻬﺮ ﺗﺮﺗﻔﻊ ﻓﻴﻪ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ، ﻓﺄﺣﺐ ﺃﻥ ﻳﺮﺗﻔﻊ ﻋﻤﻠﻲ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺃﻧﺎ ﺻﺎﺋﻢ হযরত উসামাহ বিন যাইদ থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল স. কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, শাবান মাসে আপনি যে পরিমান রোজা রাখেন, আপনাকে অন্য কোন মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনা। তখন রাসূল বললেন, রজন এবং রমাদানের মধ্যে অবস্থিত শাবান সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই উদাসীন। তাছাড়া, এ মাসে মানুষের আমলগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়, তাই আমি চাই রোজাদার অবস্থায় যেন আমার আমলগুলো আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়”। খ. হযরত আইশা থেকে বণিত। ﻭَﻟَﻢْ ﺃَﺭَﻩُ ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ ﻣِﻦْ ﺷَﻬْﺮٍ ﻗَﻂُّ ﺃَﻛْﺜَﺮَ ﻣِﻦْ ﺻِﻴَﺎﻣِﻪِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ، ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻛُﻠَّﻪُ ، ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺼُﻮﻡُ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﺇِﻻ ﻗَﻠِﻴﻼ . রাসলূকে (স.) শাবান মাসের মত এত রোজা অন্য কোন মাসে রাখতে দেখিনি । তিনি পুরো শাবান কিংবা এর অধিকাংশ অংশই রোজা রাখতেন। দ্বিতীয়ত: শুধু ১৫ই শাবান দিবসে একটি রোজা রাখা যাবে কিনা, এ ব্যাপারে একটি হাদীস রয়েছে। তবে হাদীসটি বিশুদ্ধ না হওয়ায় তা প্রমাণযেগ্য নয়। হাদীসটি হচ্ছে: ﻋﻦ ﻋَﻠِﻲِّ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻃَﺎﻟِﺐٍ ﻗﺎﻝ، ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ –ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ :- ‏(ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣﻦ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻓَﻘُﻮﻣُﻮﺍ ﻟَﻴْﻠَﻬَﺎ ﻭَﺻُﻮﻣُﻮﺍ ﻧَﻬَﺎﺭَﻫَﺎ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻨْﺰِﻝُ ﻓﻴﻬﺎ ﻟِﻐُﺮُﻭﺏِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﺇﻟﻰ ﺳَﻤَﺎﺀِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻓﻴﻘﻮﻝ : ﺃﻻ ﻣﻦ ﻣُﺴْﺘَﻐْﻔِﺮٍ ﻟﻲ ﻓَﺄَﻏْﻔِﺮَ ﻟﻪ، ﺃﻻ ﻣُﺴْﺘَﺮْﺯِﻕٌ ﻓَﺄَﺭْﺯُﻗَﻪُ، ﺃﻻ ﻣﺒﺘﻠﻰ ﻓَﺄُﻋَﺎﻓِﻴَﻪُ، ﺃﻻ ﻛَﺬَﺍ ﺃﻻ ﻛَﺬَﺍ ﺣﺘﻰ ﻳَﻄْﻠُﻊَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ “হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, অর্ধ শাবান যখন আসে, তখন তোমরা এর রাত্রিটিকে (ইবাদাতের মাধ্যমে) জাগ্রত রাখো এবং তার (পরবর্তী) দিবসে রোজা রাখ। কারণ আল্লাহ এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রথম আকাশে নাযিল হন এবং বলতে থাকেন, কেউকি আছো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো, কেউ কি আছো রিযিক অন্বেষণকারী, তাকে রিযিক দেবো, কেউ কি আছো বিপদাপন্ন/অসুস্থ, তাকে বিপদমুক্ত/সুস্থতা দেব। কেউ কি আছো…কেউকি আছো..? এভাবে সুর্যাস্ত পর্যন্ত বলতে থাকেন”। এ হাদীসটি ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন। তবে হাদীসটির সনদ অত্যন্ত দুর্বল। এ জাতীয় দর্বল সনদবিশিষ্ট হাদীস দিয়ে প্রমাণ পেশ করা সমীচিন নয়। এ ব্যাপারে সরাসরি হাদীসবিশারদদের মতামত দেখা যাক: ইমাম ইবনুল যাওযী বলছেন, ﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﻻ ﻳﺼﺢُّ হাদীসটি শুদ্ধ নয়। ইরাকী ও ইমাম আইনী বলেন, ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺿﻌﻴﻒ এর সনদ দুর্বল। ইমাম ইবনু শিহাব আল-বুসাইরী বলেন, ﻫﺬﺍ ﺇﺳﻨﺎﺩ ﻓﻴﻪ ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﺒﺮﺓ، ﻭﺍﺳﻤﻪ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﺒﺮﺓ . ﻗﺎﻝ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ، ﻭﻳﺤﻴﻰ ﺍﺑﻦ ﻣﻌﻴﻦ : ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ এর সনদের মধ্যে রয়েছেন ইবনু আবী সুবরাহ। তার পুরো নাম, আবু বকর বিন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আবি সুবরাহ। ইমাম আহমাদও ইয়াহইয়া বিন মায়ীন বলেন তার সম্পর্কে: তিনি হাদীস জাল করেন। ইমাম বুখারী বলেন: লোকটি দুর্বল। নাসাঈ বলেন, ﻣﺘﺮﻭﻙ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ তার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। ইবনু হিব্বান বলেন, ﻛﺎﻥ ﻣﻤﻦ ﻳﺮﻭﻱ ﺍﻟﻤﻮﺿﻮﻋﺎﺕ ﻋﻦ ﺍﻟﺜﻘﺎﺕ، ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﺍﻻﺣﺘﺠﺎﺝ ﺑﻪ . আবু সুবরাহ জাল হাদীস বর্ণনাকারীদের একজন। তার বর্ণনা দিয়ে প্রমাণ পেশ করা বৈধ নয়। ইমমা আলবানী বলেন: হাদীসটি খুবই দুর্বল কিংবা বানোয়াট। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ﺃﻥّ ﻣﻦ ﺻﺎﻡ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺑﻨﻴﺔ ﺻﻮﻡ ﻳﻮﻡ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ، ﺃﻭ ﺍﻷﻳﺎﻡ ﺍﻟﺒﻴﺾ ﺃﻭ ﻭﺍﻓﻖ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﺃﻭ ﺍﻟﺨﻤﻴﺲ ﻓﻼ ﺷﻲَﺀ ﻋﻠﻴﻪ، ﺑﻞ ﺃﺻﺎﺏ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻛﻤﺎ ﻫﻮ ﻣﻌﻠﻮﻡٌ ﻋﻨﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺸﺄﻥ؛ ﻓﺎﻟﻨﻴﺔ ﻫﻲ ﺍﻟﺤﺪّ ﺍﻟﻔﺎﺻﻞ ﻓﻲ ﺻﻴﺎﻡ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻴﻮﻡ، ﻭﺻﺪﻕ ﺍﻟﺼﺎﺩﻕ ﺍﻟﻤﺼﺪﻭﻕ ﺑﻘﻮﻟﻪ : ‏( ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﺄَﻋْﻤَﺎﻝُ ﺑِﺎﻟﻨِّﻴَّﺎﺕِ ﻭَﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻟِﻜُﻞِّ ﺍﻣْﺮِﺉٍ ﻣَﺎ ﻧَﻮَﻯ ..) যদি কেউ এ নিয়্যাত করে ১৫ শাবানের রোযা রাখে যে, এটি শাবান মাসের একটি দিনের রোযা কিংবা বেজোড় দিবসসমূহ অথচা তা সোম ও বৃহস্পতিবারের অভ্যাসগত রোযার সাথে মিলে যায়, তাতে কোন সমস্যা নেই। বরং এর মাধ্যমে সে সুন্নতেরই অনুসরণ করলো। নিয়্যাতই এখানে পার্থক্য নির্ণয়কারী। রাসূল (স.) বলেন, নিয়্যাতের উপরই নির্ভরশীল মানুষের আমল”। মোট কথা, এ রাতের মাহাত্ম্য আছে, তবে সীমালংঘনের সুযোগ নেই।

লেখক: ড. বি. এম. মফিজুর রহমান আল-আযহারী, অধ্যাপক- আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।

Logo-orginal