, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin admin

আজ মে দিবস” প্রতিষ্ঠিত হয়নি শ্রম অধিকার

প্রকাশ: ২০১৯-০৫-০১ ০৯:৩৯:১৪ || আপডেট: ২০১৯-০৫-০১ ০৯:৩৯:১৪

Spread the love

শ্রমের ন্যায্য অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চির প্রেরণার মহান মে দিবস আজ। ১৮৮৬ সালের এ দিন বঞ্চনা আর শোষণের বিরুদ্ধে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন শ্রমজীবীরা।

শ্রমিকেরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। সে ডাকে শিকাগো শহরের তিন লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ বন্ধ রাখেন। 

শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভসমুদ্রে। এক লাখ ৮৫ হাজার নির্মাণশ্রমিকের সাথে আরো বহু বিক্ষুব্ধ শ্রমিক লাল ঝাণ্ডা হাতে সমবেত হন সেখানে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে অন্তত ১০ শ্রমিক প্রাণ হারান। ওই ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি শ্রম অধিকার, নিয়মিত বেতন পায়না সে শ্রমিকরা, নির্যাতন নিত্য নৈমাত্তিক ব্যাপার।

আজ শ্রমিকের পক্ষে সবাই বাণী দিয়ে দায়িত্ব শেষ করবে, বকেয়া বেতনের কথা ভুলে যাবে ধনপতিরা।

১৯৭২ সালে মে দিবসকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের স্বীকৃতি দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর পর থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায় মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। 
এবারে মে দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গতি; উন্নয়নের শপথ করি।’ দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা শ্রমজীবী মানুষসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

আজ সরকারি ছুটি। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও বেতারগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ থাকবে। 

প্রতি বছরের মতো এবারো রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ৭টায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। র্যালিটি দৈনিক বাংলা মোড়ের শ্রম ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হবে।

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কদ্বীপ সজ্জিতকরণ করা হবে। আগামী ২ মে বিকেল ৩টায় মে দিবস উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান। 
এ ছাড়ার দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত শ্রম অধিদফতর এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। 
এ ছাড়াও মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মে দিবস উদযাপনের নানা কর্মসূচি তুলে ধরেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান। এ সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব উম্মুল হাছনা, শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক এ কে এম মিজানুর রহমান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরে মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

এ সময় শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানে শান্তি, উৎপাদন ও উন্নয়নে যারা প্রত্যক্ষভাবে অবদান রাখছেন, সেই শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ রক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। 

রাষ্ট্রপতির বাণী : শ্রমিক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এক বাণীতে বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থসংরক্ষণ ও সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, মালিকপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। 
আবদুল হামিদ মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব শ্রমজীবী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তিনি মনে করেন, মে দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, উন্নয়নের শপথ করি’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে। 
প্রধানমন্ত্রীর বাণী : মহান মে দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক ও মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিবেদিত হবেন। শ্রমিক ভাই-বোনসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ। 
বিশ্বের শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্মৃতিবিজড়িত গৌরবোজ্জ্বল ত্যাগের ঐতিহাসিক দিন ১ মে উল্লেখ করে তিনি মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের মেহনতি মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। 
১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে যে শ্রমিক ভাই-বোনেরা ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী তাদের স্মৃতির প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের সামাজিক মর্যাদা, স্বাস্থ্য ও সেফটি নিশ্চিতকল্পে জাতীয় শ্রমনীতি-২০১২, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা ২০১৩ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল শিল্পসম্পর্ক এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রম আইন বাস্তবায়নে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদফতর এবং শ্রম পরিদফতরের সক্ষমতা ও জনবল বৃদ্ধি করে অধিদফতরে উন্নীত করা হয়েছে। শ্রমিক ভাই-বোনদের যেকোনো সমস্যা সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য সার্বক্ষণিক টোল ফ্রি হেল্পলাইন (১৬৩৫৭) চালু করা হয়েছে। শিল্প কারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্ট শিল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। শ্রমজীবী নারীদের কল্যাণে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে ও নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ১৫৬০ শয্যাবিশিষ্ট শ্রমজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। 

এ ছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত শ্রমিক ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শ্রমিকদের এ পর্যন্ত কল্যাণ তহবিল এবং কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে ৮৩ কোটি ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৫ টাকা এবং শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় তহবিল দু’টি থেকে ৪ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মহান মে দিবস ২০১৯-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। #নয়া দিগন্ত

Logo-orginal