, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

খুলনায় যুবলীগ নেত্রীকে হত্যার হুমকি কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগ সম্পাদকের

প্রকাশ: ২০১৯-০৫-৩১ ১৬:১৮:২২ || আপডেট: ২০১৯-০৫-৩১ ১৬:১৮:২২

Spread the love

কয়রা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিনের নির্যাতন, অব্যাহত হুমকি ও অত্যাচারের বিচার দাবি করেছেন মহিলা যুবলীগের এক ওয়ার্ড সভাপতি নাজমা খাতুন।

আল আমিনের মামাদের সঙ্গে নাজমার পরিবারের জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তাকে ও তার পরিবারের লোকজনকে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি এর প্রতিকার দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে আশাশুনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ২৩৮) করেছেন ভুক্তভোগী নাজমা খাতুন।

নাজমা খাতুন জানান, তিনি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানার প্রতাপনগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড মহিলা যুবলীগের সভাপতি। নাজমার পরিবারের ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি আল আমিনের মামারা জোরপূর্বক দখলে নিয়ে ভোগ করছেন। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছে। আল আমিনের প্রভাবে তার মামারা গত ২০ মে নাজমার পরিবারের সদস্যদের কুপিয়ে জখম করলে ২৩ মে আশাশুনি থানায় মামলা (মামলা নং-২৪) হয়। ওই মামলার পর থেকেই আল আমিন বেপরোয়া আচরণ ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

নাজমা অভিযোগ করেন, গত ২৮ মে সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন ইসলাম, তার মামাত ভাই আল আমিন হোসেন ও মামা ফারুক হোসেন ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল নিয়ে হঠাৎ করে তার বাড়িতে হাজির হয়। এসময় তাদের দেখে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলে তারা বাইরে থেকে হুমকি দেয় যে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা তুলে না নিলে তাকে অপহরণ ও হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে। ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে তিনি, তার স্বামী-সন্তান ও পরিবারের সবাইকে ভিটে ছাড়া করবে।

এ সময় ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন বলেন, ‘তোকে নুসরাতের (ফেনির সোনাগাজী আগুনে পুড়িয়ে হত্যা) মতো করে পুড়িয়ে মারব। তোর কোন বাপ আছে ঠেকাতে বলিস। নুসরাতকে তো আগুন লাগানোর আগে হত্যা করেনি, তোকে আগে টুকরো টুকরো করে তার পর আগুনে পোড়াব। পরে তোর লাশের ছাইও পাওয়া যাবে না, গুম করে দেব।’

আল আমিনের বিরুদ্ধে ছাত্রশিবির থেকে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশের অভিযোগ করে নাজমা জানান, আল আমিন ২০০৮ সাল পর্যন্ত কয়রা সুন্দরবন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিলেন। তার আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে প্রায় সবাই বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জড়িত। অনুপ্রবেশ করে একমাত্র আল আমিন আওয়ামী পরিবারের একটি পদ পায়।

নাজমার মামলার ১নং আসামি মো. আবুল হোসেন চিহ্নিত জামায়াতকর্মী, ছোট মামা ৩নং আসামি ফারুক হোসেন বিএল কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও মামাতো ভাই ৬নং আসামি মো. আল আমিন শিবিরকর্মী ও সাঈদি মুক্তি পরিষদের গোকুলনগর গ্রামের সভাপতি।

নাজমা খাতুন আরও বলেন, জামায়াত অধ্যুষিত এলাকার মধ্যেও আমার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমি নিজে মহিলা যুবলীগের রাজনীতি করি, আমার আপন দেবর আছাদুল ইসলাম যুবদলের ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন (বর্তমানে ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন)। আমার ছোট দেবর পলাশ মাহমুদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। পরে ঢাকার মহানগর ল’ কলেজে আওয়ামী আইন ছাত্র পরিষদের দফতর সম্পাদক ছিলেন। আমার ননদ ফিরোজা বেগম (সালমা) সাতক্ষীরা সদরের বকচরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, ননদের স্বামী আব্দুল ওহাব আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সহসভাপতি, আমার মামাশ্বশুর অ্যাডভোকেট কেরামত আলী গাজী কয়রা থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক।

নাজমা অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ নেতা আল আমিনের মেজ ভাই আব্দুস সালাম বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিরুদ্দেশ। তিনি বিএনপি সরকারের সময়ে সুন্দরবনে ডাকাত দল আকরাম বাহিনীর সদস্য ছিলেন। বর্তমান সরকার ডাকাত নির্মূল শুরু করলে আল আমিন ভাইকে রক্ষা করতেই ছাত্রলীগে যোগ দেয়। পরে আল আমিনের প্রভাবে আব্দুস সালাম আবারও ‘সালাম বাহিনী’ নামে ডাকাত দল গঠন করে সুন্দরবনে ডাকাতি করছে।

এ ছাড়া ইতিপূর্বেও আল আমিনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে তারই এলাকার পাঁচটি সংখ্যালঘু পরিবার। সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নির্যাতন চালিয়ে এক প্রকার দেশছাড়া করা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল যে বাড়িতে সেই বাড়িওয়ালার ওপরও নির্যাতনের অভিযোগ করে কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩নং কয়রা গ্রামের প্রভাষ চন্দ্র সরদার।

২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল কয়রা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন প্রভাষ চন্দ্র সরদার, কৃষ্ণপদ মণ্ডল, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সঞ্জয় কুমার বৈদ্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিপুল বাছাড় আল আমিনের বিরুদ্ধে মাছের ঘেরের জন্য চাঁদা দাবি, ঘেরদখল, জমির ধান লুট করে নেয়া, নির্যাতন করে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেন।

এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯নং সেক্টরের নারায়ণ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প ছিল প্রভাষ চন্দ্র সরদারের বাড়িতেই। এসব অভিযোগ তুলে ধরে সোমবার সকালে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নাজমা বেগম।

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের খুলনা জেলা সভাপতি পারভেজ হাওলাদার বলেন, আমরা এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।উৎসঃ যুগান্তর।

Logo-orginal