, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

Avatar Maftun

চট্টগ্রামে “জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ” দেশ ও ধর্ম হোক আমাদের ঐক্যের পাটাতন”

প্রকাশ: ২০১৯-০৬-২৩ ১০:৫৭:০৬ || আপডেট: ২০১৯-০৬-২৩ ১১:০৩:০৯

দেশ, স্বাধীনতা ও ধর্ম নিয়ে কোন বিভেদ নয়। দেশ ও ধর্ম হোক আমাদের ঐক্যের পাটাতন: “জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ”

বাংলাদেশের রাজনীতির পূণর্গঠন করতে হলে দেশ ও ধর্ম নিয়ে দলাদলি বন্ধ করতে হবে। বৃটিশদের শোষন, বঞ্চনার বিরুদ্ধে ৪৭ সালে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল তার মূলে ছিল ধর্মীয় চেতনা। ৭১ সালে পাকিস্তানীদের জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে একাকার হয়ে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তার ঐক্যের সূত্র ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন। অতএব দেশ, স্বাধীনতা ও ধর্ম নিয়ে কোন বিভেদ নয়। দেশ ও ধর্ম কে আমাদের ঐক্যের পাটাতন বানাতে হবে।

গতকাল ২২শে জুুন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ আয়োজিত নাগরিক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রামের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের বরেণ্য সাবেক ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে ধারণাপত্র তুলে ধরেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্লাহ পাটোয়ারী। আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি তাজুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট নেতা আব্দুর রহমান চৌধুরী, জন আকাঙ্ক্ষার সমন্বয়ক মজিবুর রহমান মন্জু, নগর উন্নয়ন কমিটির কার্যকরী সদস্য ও সমাজকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস, এইবেলা সম্পাদক সুকৃতি কুমার মন্ডল, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুল ইসলাম, দৈনিক আমাদের বাংলা সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী, সংলাপ বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক গোলাম ফারুক, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা সিদ্দিকুর রহমান, প্রকৌশলী মোহাম্মদ লোকমান, সংবাদ কর্মী রিমন বড়ুয়া প্রমূখ।

সংলাপ অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক গোলাম ফারুক। তিনি অংশগ্রহণকারীদের অভিভাদন জানিয়ে বলেন, আজকে আমাদের এই সংলাপে বাংলাদেশে নতুন রাজনীতি বিনির্মাণ নিয়ে আলোচনা হবে। এখানে সকল ধরনের প্রশ্ন ও পর্যালোচনার মাধ্যমে আমরা কিছু বিষয়ে ঐকমত্য তৈরী করবো। এমন একটি বাস্তব মডেল আমাদের দরকার যা হতাশাগ্রস্ত মানুষ কে নতুন পথ দেখাবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্লাহ পাটোয়ারী “বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যত ধারা: একটি প্রস্তাবনা” শীর্ষক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন। তাতে তিনি বলেন- যে অঙ্গীকার নিয়ে লাখো মানুষের রক্ত বিধৌত বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তার বাস্তবায়ন আমরা এখনো করতে পারিনি। তিনি শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন- স্বাধীন বাংলাদেশে বৈষম্যের কতটুকু অবসান হয়েছে? জনগণ কতটুকু রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করছে? মানবিক মূল্যবোধ কতটুকু সুপ্রতিষ্ঠিত? তিনি আক্ষেপ করে বলেন- জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু গুলোতে আমরা এখনও ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারিনি। বিভাজন ও বিভক্তির রাজনীতি থেকে আমরা নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারিনি। ঐক্যবদ্ধ নতুন বাংলাদেশ বিনর্মানে তিনি তার লিখিত প্রস্তাবনায় ১৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন।

জন আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের সমন্বয়ক মজিবুর রহমান মন্জু বলেন- রাষ্ট্রের আদর্শ হল সাম্যের ভিত্তিতে জনগণের প্রয়োজন পূর্ণ করা। কিন্তু রাজনৈতিক দল যখন নিজ তত্ত্ব বা মতাদর্শের আলোকে রাষ্ট্রে গঠন বা পরিচালনা করতে চায় তখন জনগণ বঞ্চিত ও শোষিত হয়। দলগুলো তাদের মত করে মানুষের উপর প্রভূত্ব বিস্তার করে। তিনি বলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার হল- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন রাজনৈতিক দলের উত্থান দরকার যার আদর্শ হবে রাষ্ট্রের আদর্শের অনুরুপ। নাহয় স্বাধীন বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তিনি আরও বলেন- বাংলাদেশের রাজনীতির পূণর্গঠন করতে হলে দেশ ও ধর্ম নিয়ে দলাদলি বন্ধ করতে হবে। বৃটিশদের শোষন, বঞ্চনার বিরুদ্ধে ৪৭ সালে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল তার মূলে ছিল ধর্মীয় চেতনা। ৭১ সালে পাকিস্তানীদের জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে একাকার হয়ে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তার ঐক্যের সূত্র ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন। অতএব দেশ, স্বাধীনতা ও ধর্ম নিয়ে কোন বিভেদ নয়। দেশ ও ধর্ম কে আমাদের ঐক্যের পাটাতন বানাতে হবে।

চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কমিটির কার্যকরী সদস্য ও ক্যাব সাংগঠনিক সম্পাদক সমাজকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস জন আকাঙ্ক্ষার উদ্যােক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন- আমাদের কোন পদ পদবীর দরকার নাই, আমরা চাই কাজ। লোভ ও সম্পদ অর্জনের বাসনা বিসর্জন দিয়ে রাজনীতিবিদদের কাজ করতে হবে তাহলেই দেশকে জঞ্জাল মুক্ত করা সম্ভব হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আলোচিত আইনজীবি তাজুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, দেশে আজ পরিবর্তণ অপরিহার্য্য যা আনতে পারে কেবল তরুণরা। এই তারুণ্যই পেরেছে বিচারপতি, এমপি ও সচিবদের লাইসেন্স চেক করতে। রাজনীতিতে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে জন আকাঙ্ক্ষা কাজ করবে এই ঘোষনা দিয়ে তিনি বলেন- আমরা চাই আমাদের সন্তানরা কেউ যেন গুম না হয়। তারা যেন নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে। ছিনতাইকারী ও পুলিশের হাতে কিংবা বাস-ট্রাকের নীচে পিষ্ট হয়ে আমাদের সন্তানদের মৃত্যু আমরা দেখতে চাইনা। তিনি বলেন সড়ক দূর্ঘটনায় বছরে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু পৃথিবীর কোথাও হয়না। একটা যুদ্ধেও এত মানুষ মরেনা। ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হয়েছে দাবী করে এডভোকেট তাজুল বলেন- কাউকে ক্রাশ করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

ইসলামী ঐক্যের নেতা আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন- এই সরকার নিশি রাতের সরকার। সরকারের স্বার্থের সাথে মিল মিশ না হলে যে কাউকে যেকোন সময় বিপদে পড়তে হচ্ছে। তিনি খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান।
এইবেলা সম্পাদক সুকৃতি কুমার মন্ডল বলেন- আমরা সংখ্যালঘুরা এই সরকার কে সমর্থন দিয়েছিলাম কিন্তু আমরা হতাশ। তরুণদের নিয়ে দেশ গড়ার যে আহবান জন আকাঙ্ক্ষার উদ্যাক্তারা করেছেন তার প্রতি সমর্থন ও আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন এ আইডিয়া নিয়ে আপনারা এগিয়ে যান আমরা আপনাদের সাথে থাকব।

মাওলানা ভাসানী পরিষদের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুল ইসলাম তার বক্তব্যে দার্শনিক কার্ল মার্কসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন- বর্তমান রাজনীতির দিন শেষ। এটাকে বদলে দিয়ে নতুন রাজনীতির সূচনা করতে হবে।

দৈনিক আমাদের বাংলা সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন- কোন ভয় নেই। সিন্ডিকেট রাজনীতির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে।

৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের বরেণ্য সাবেক ছাত্রনেতা ও জিয়া স্মৃতি পরিষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী আক্ষেপ করে বলেন- রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, চরিত্র হনন ও বিভেদে দেশটা শেষ হতে চলেছে, এই ৪৮ বছরে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। জন আকাঙ্ক্ষার কার্যক্রম শুধু চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন প্রয়োজনে তারা মাঠে, ঘাটে ছড়িয়ে পড়বে। নদীতে, সাগরে ঝাপিয়ে পড়বে, পাহাড়ে আরোহন করবে। তখন আমাদের সবাইকে তাদের সাথে শামীল হতে হবে। তিনি বলেন একজন খাবে আরেকজন খাবেনা, সেটা চলবেনা। দেশটাকে আমরা সাম্য ও ভাতৃত্বের ভিত্তিতে নতুন করে গড়ব। ধর্মের জন্য কেউ নিগৃহীত হতে পারবেনা। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন কে ধোকার নির্বাচন অভিহিত করে তিনি বলেন, এত বিরাট ধোকা খেয়েও বিরোধীদলের কোন বিকার নেই। বাংলাদেশের রাজনীতি কান্ডারিহীন বাহন এটার দায়িত্ব তরুণদের নিতে হবে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক কবি, গীতিকার ও তৃণমূল নেতা এডভোকেট মোস্তফা নূর বলেন- আমাদের এই সূচনা পরিবর্তণের লক্ষে এগিয়ে যাবে। যেকোন বাঁধা কে আমরা সুন্দরের নীতি দিয়ে জয় করব। চট্টগ্রাম হবে আমাদের সুতিকাগার।
সংলাপে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার পক্ষ থেকে প্রশ্ন ও মতামত পর্বে অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রীতম দে, সংবাদ কর্মী মুসলিম আজাদ, মেরিনার রিয়াজুল ইসলাম, শিক্ষানবীস আইনজীবি মতিউর রহমান নিজামী, ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান, প্রবাসী কর্মজীবি জুনায়েদ রহমান, ব্লগার ও লেখক জিয়া চৌধুরী, বায়তুশ শরফ মাদ্রাসা ছাত্র আবু জাহেদ, তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি খালেদ মহিবুল্লাহ, সিনিয়র সাংবাদিক ওসমান গণি, শ্রমিক নেতা দেলেয়ার হোসেন ও মো: মহসীন, মৎস্যজীবি লাবন্য জলদাস, সংবাদসেবী রিমন বড়ুয়া প্রমূখ।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

Logo-orginal