, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin admin

ইসকনের বিরুদ্ধে মুফতি মিছবাহর মামলা খারিজ করে দিল আদালত

প্রকাশ: ২০১৯-০৭-২৪ ১৯:১৪:৫৮ || আপডেট: ২০১৯-০৭-২৪ ১৯:১৪:৫৮

Spread the love

মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনেরর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন মারকাযুত তাকওয়া ইসলামী রিসার্স সেন্টারের পরিচালক ও অনলাইন পত্রিকা পাবলিক ভয়েসের সম্পাদক মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ।

আজ বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুর ২ টায় রাজধানীর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে চীফ মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট আবু সাইদের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি।

বাদীপক্ষের অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলার ওপর শুনানি করেন বিচারক। শুনানি শেষে বিচারক জানান এধরণের মামলার জন্য রাষ্ট্রীয় অনুমোদন প্রয়োজন। তাই রাষ্ট্রীয় অনুমোদন না থাকায় মামলাটি খারিজ করে  দেয় আদালত।

বাদীর পক্ষে আদালতে দাড়ান এ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, এ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন, এ্যাডভোকেট লুতফর রহমান শেখ, এ্যাডভোকেট মহিবুল্লাহ, এ্যাডভোকেট হানিফ মিয়া, এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, এ্যডভোকেট মশিউর রহমান প্রমুখ।

মামলার সূত্র থেকে জানা যায়, ইসকন সংশ্লিষ্ট সর্বমোট ৯ জনকে বিবাদী করে ৩৪ ফৌজদারী দন্ডবিধির ২৯৫/ক ধারায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন বাদী মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ।

মামলায় যাদেরকে আসামী করা হয়েছিলো তারা হলেন, ১. আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন), ২. শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী, চেয়ারম্যান, ইসকন, বাংলাদেশ। ৩. চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী, সম্পাদক, ইসকন, ঢাকা । ৪. জগৎ গুরু গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ইসকন, ঢাকা । ৫. শ্রী পাদ লিলারাজ গৌরদাস ব্রহ্মচারী, অধ্যক্ষ, শ্রী কৃষ্ণ মন্দির, ইসকন, চট্টগ্রাম ৬. শ্রী পাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, বিভাগীয় রিজিওনাল সেক্রেটারী, ইসকন, চট্টগ্রাম।৭. শ্রী পাদ দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দাস ব্রহ্মচারী, সাধারণ সম্পাদক, শ্রী কৃষ্ণ মন্দির, ইসকন, চট্টগ্রাম। ৮. পান্ডপ গোবিন্দ দাস ব্রহ্মচারী, পরিচালক, ফুড ফর লাইফ, ইসকন, চট্টগ্রাম, ৯. রমেশ্বর পরমাত্মা দাস, পিতা- অজ্ঞাত। ১০. দারু ব্রহ্ম জগন্নাথ দাস, পিতা- অজ্ঞাত।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার বলেন, আমরা আদলতে ফাইল পিটিশন করার পর আবেদন আদালত গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দেবেন বলে আমরা আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু রাষ্ট্রীয় আইনের বিধান মোতাবেক বিজ্ঞ আদালত যা সঠিক মনে করেছেন তা করেছেন। রাষ্ট্রীয় অনুমতি না থাকায় শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞ আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে। তবে আদালত চাইলে মামলাটি আমলে নিতে পারতেন।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ বলেন, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের দেশ। এদেশে শত বছর থেকে সব ধর্মের মানুষ সহাবস্থান করে আসছে। উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলে মুসলিম কোমলমতি শিশুদের প্রসাদ খাইয়ে (যাহা মুসলমানদের জন্য হারাম) এবং জোর করে তাদের দেবদেবীর নামে মন্ত্র পাঠ করিয়ে দেশের দীর্ঘদিনের সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য রয়েছে, সেটা নষ্ট করে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে।

আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং শান্তিতে বিশ্বাসী। সব ধর্মের মানুষ সহাবস্থানে থেকে নিজ নিজ ধর্ম কর্ম করবে এটাই আমরা চাই। ইসকন সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে যে কাজটি করেছে আমি মনে করি এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্যে করেছে। তাই বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত এবং সমাধানের জন্য বিচার বিভাগের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। তবে বিজ্ঞ আদালত উপযুক্ত মনে করেনি বলে মামলাটি গ্রহণ করেনি। আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে চাই।

মামলার এজাহারে ইসকনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ৩০/০৬/২০১৭ ইং তারিখে রোজ শুক্রবার স্বামীবাগের প্রায় পাচঁশত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী স্বামীবাগ মসজিদের মুসল্লিগণের উপরে ইসকন কর্মীরা হামলা চালায়। ইসকন সদস্যরা ভোর চারটা থেকে শুরু করে রাত বারটা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করে উচ্চ শব্দে এলাকা কাঁপিয়ে ঢোল-বাদ্য বাজায়। শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ঢোল-বাদ্য বাজানো বন্ধ রাখার অনুরোধ করলে ইসকনের নেত্রিস্থানীয়গণ তাতে রাজী না হয়ে বরং চরম দুর্ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে গেলে পুলিশ ও র‌্যাব এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পুলিশ সংঘাতময় পরিস্থিতি ঠেকাতে পবিত্র রমজানের তারাবীহ এর নামায বন্ধ রাখে।

এজাহারে আরও বলা হয়, সিলেটের কাজলশাহ মসজিদের মুসল্লিগণ ইসকনের মাইকে বাদ্য-যন্ত্র ও মন্ত্র পাঠের তান্ডবে নামায আদায় অসম্ভব হয়ে পরায় শুধুমাত্র নামাযের সময়টুকু বাদ্য-যন্ত্র বাজানো বন্ধ রাখতে অনুরোধ করায় ইসকনের সদস্যরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে মসজিদে হামলা চালায়। মুসল্লিগণ আত্মরক্ষায় প্রতিরোধ গড়ে তুললে ইসকনের সদস্যরা মসজিদসহ আশেপাশের বাড়িঘরে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এবং তাদের হামলায় মুসল্লি ও পথচারীসহ ২০ জন আহত হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাছাড়াও নগরীর পুরনো জুগল টিলা মন্দিরটি ইসকনের সদস্যরা দখল করে নেয়।

এছাড়াও ইসকনের সদস্যরা গত পবিত্র রমজানের শেষ দিনে অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের আগের দিন রথযাত্রার নামে জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররম এর দক্ষিণ গেইট সংলগ্ন রাস্তায় আসামীগণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানারূপ অঙ্গভঙ্গি, চেঁচামিচি এবং হৈহুল্লর করে এবং উচ্চ আওয়াজে বাদ্য-যন্ত্র বাজিয়ে এক অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে মামলার এজাহারে। সুত্রঃ ইনসাফ ডটকম।

Logo-orginal