, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

ধর্ষণের কারণ ও সমাধানের পথ!

প্রকাশ: ২০১৯-০৭-২১ ১৬:২৯:০৭ || আপডেট: ২০১৯-০৭-২১ ১৬:২৯:০৭

Spread the love

মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীনঃ ধর্ষণ একটি ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধি। আজকাল পত্রিকার পাতায়   কিংবা সোস্যাইল মিডিয়াতে প্রচুর ধর্ষণের সংবাদ প্রায় দেখা যায়। ধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনাই ধামাচাপা দেয়া হয়। ইতোপূর্বে একাধিক ধর্ষণ তার কোনো শাস্তিই হয়নি। আমরা জানতেও পারিনি। বিচ্ছিন্নভাবে দু’একটি ঘটনা মিডিয়াতে এলে আমরা কিছু সময়ের জন্য প্রতিবাদ করি। তারপর যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে যাই। 

ধর্ষণ প্রবণতা বৃদ্ধি হওয়ার মূল কারণগুলো হলো, নগ্নতা, অতৃপ্ত যৌন আকাঙ্খা, বেহায়াপনা, অবাধ যৌনাচার, ক্ষমতাসীন ব্যক্তির সুযোগ পেয়ে কোনো দুর্বল মেয়ে, শিশু বা ছেলের ওপর ক্ষমতার প্রয়োগ, রাস্তার পাশে দেয়ালে কিংবা বিদ্যুৎের খুঁটিতে নগ্ন পোস্টার, ফুটপাতে অশ্লীল ছবি সম্বলিত, যৌন উত্তেজক অবৈধ বইয়ের রমরমা ব্যবসা, অশ্লীল পত্রপত্রিকা, পাঠ্য বইয়ে যৌন শিক্ষার সুড়সুড়ি, কখনো কখনো বন্ধুবান্ধবরা একসঙ্গে হয়ে বা শক্তিশালী হয়ে আকস্মিকভাবে কোনো অসহায় মেয়েকে একা পেয়ে আনন্দ-ফুর্তি করার জন্য, অশ্লীল ছায়াছবি প্রদর্শন, ব্লু-ফিল্ম, বাংলা চলচ্চিত্রে খলনায়ক কর্তৃক নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের দৃশ্যের মাধ্যমে সমাজে রাস্তাঘাটে বাস্তবে ধর্ষণ করার উৎসাহ যোগান, মাদকাসক্তি মানুষের স্বাভাবিক বিবেচনাবোধ লোপ , ইন্টারনেটে অশ্লীল সাইটগুলো উম্মুক্ত করে দেয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, সিনেমায় নীল ছবি প্রদর্শন এবং ভিনদেশী টিভি সিরিয়ালের প্রভাব ইত্যাদি । এমন কি ধর্ষণের আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে অভিভাকদের উদাসীনতা।

ইসলামে ধর্ষণ মহাপাপ ও ঘৃণ্য কাজ। ধর্ষণের ক্ষেত্রে একপক্ষে ব্যভিচার সংগঠিত হয়। আর অন্যপক্ষ হয় নির্যাতিত। তাই নির্যাতিতের কোনো শাস্তি নেই। কেবল অত্যাচারি ধর্ষকের শাস্তি হবে। ইসলামি আইন শাস্ত্রে ধর্ষকের শাস্তি ব্যভিচারকারীর শাস্তির অনুরূপ। 

আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ, তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ (সূরা নূর: ২) 

হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, ‘অবিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে শাস্তি একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে একশ’ বেত্রাঘাত ও রজম (পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড)।’ –সহীহ মুসলিম। 

ব্যভিচার সুস্পষ্ট হারাম এবং জগন্য অপরাধ। আল কোরআনে  ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সূরা আল ইসরা: ৩২) 

হাদীস দ্বারা ধর্ষণের শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়। যেমন- ১. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর (রা.) বর্ণনা করেন,  রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে এক মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে  রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে কোনোরূপ শাস্তি দেননি, তবে ধর্ষককে হদের (কোরআন-হাদিসে বহু অপরাধের ওপর শাস্তির কথা আছে। এগুলোর মধ্যে যেসব শাস্তির পরিমাণ ও পদ্ধতি কোরআন-হাদিসে সুনির্ধারিত তাকে- হদ বলে) শাস্তি দেন।’ -(ইবনে মাজাহ: ২৫৯৮) 

২. সরকারি মালিকানাধীন এক গোলাম গণিমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসির সঙ্গে জবরদস্তি করে ব্যভিচার (ধর্ষণ) করে। এতে তার কুমারিত্ব নষ্ট হয়ে যায়। হযরত উমর (রা.) ওই গোলামকে বেত্রাঘাত করেন এবং নির্বাসন দেন। কিন্তু দাসিটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে তাকে বেত্রাঘাত করেননি।’ (সহীহ বোখারী: ৬৯৪৯)

 ধর্ষণ বন্ধ করতে হলে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে দায়িত্বশীলতা বাড়াতে হবে। এবং একই সাথে কঠোর আইন প্রয়োগ করে ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। পারিবারিকভাবে সন্তানের উপর খেয়াল রাখতে হবে যে সে কোন অস্বাভাবিক জীবন যাপন করছে কিনা, কেমন বন্ধু বান্ধবের সাথে সে মিশছে। আর সমাজ থেকে নগ্নতা, বেহায়াপনা দূর করতে হবে। ব্লু-ফিল্ম দেখানো নিষিদ্ধ করতেহবে। অশ্লীল পত্রপত্রিকা ও বইয়ের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। মসজিদের ইমাম ও খতীব এবং ওয়াজীনগনকে   ইহকাল ও পরকালে ধর্ষণের শাস্তি সম্পর্কে ওয়াজ নসীহত করতে হবে । ছেলে-মেয়েদেরকে যথাসময়ে বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।অপরাধীকে বুক উঁচিয়ে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে দেখে ভিকটিমের কষ্ট আরো বাড়ে। অপরাধী শাস্তি পায় না বলে আরো অপরাধ করার স্পর্ধা ও সুযোগ পেয়ে যায়। তাকে দেখে অন্যরাও অপরাধ করতে উৎসাহিত বোধ করে। আরো মানুষ অপরাধ করে।এইভাবে  সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র ও দেশ কলুষিত হচ্ছে। এদেশেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ধর্ষণের সেঞ্চুরী হয়। তারপরও ধর্ষক বুক ফুলিয়ে রাস্তা ঘাটে হাঁটে। অথচ এদেশের সরকার পারেনি তার বিচার করতে। বেশীরভাগ ধর্ষক ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার করছে।  সেইটাকে রোধ করতে হবে। সর্বোপরি অপরাধ যেই করুক, এ রকম বিকৃত মানসিকতা তথা এমন সব অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। আশা করা যায় কিছুটা হলেও সমাজ থেকে ধর্ষণ প্রবনতা কমবে। তা না হলে ভবিষ্যতেও ধর্ষণ প্রবণতা রোধ করা যাবে না।

লেখক: কলামিস্ট। 

Logo-orginal