, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

Avatar Maftun

রাঙ্গুনিয়ায় চন্দ্রঘোনা পাহাড় ধসে ২২ ঘর বিধ্বস্ত

প্রকাশ: ২০১৯-০৭-১৩ ২৩:০২:৩৯ || আপডেট: ২০১৯-০৭-১৪ ০০:৩৭:২৩

ইসমাঈল হেসেন নয়ন, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি :

টানা বর্ষণে রাঙ্গুনিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় ভূমি ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নে পাহাড় ধসে ২২টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির পূর্ব তৎপরতায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া ভারী বৃষ্টিপাতের এই ইউনিয়নের ২ শতাধিক সড়ক, নদী ভাঙ্গনে ১২টি ঘর নদী গর্বে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরো অর্ধ শতাধিক ঘরবাড়ি। চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে ফেরির প্লাটুন ডুবে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে রাঙামাটি- বান্দরবান সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আজগর বলেন, গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে চন্দ্রঘোনায় কুষ্ঠু হাসপাতাল এলাকার কুষ্ঠু পাহাড় ধসে ৫টি ঘর, মিশন এলাকায় ৪টি ঘর, বনগ্রাম এলাকার কলাবাইজ্জা ঘোনা এলাকায় ১৩টি ঘর চাপা পড়েছে। তবে আগে থেকে এসব ঘরে বসবাসকারীরা নিরাপদে সরিয়ে আনায় প্রাণহানি হয়নি। এছাড়াও এই ইউনিয়নের চৌধুরী গোট্টা এলাকার জেলে পাড়ায় ৩টি ঘর এবং বুইজ্জার দোকানের দেওয়ানজি হাট এলাকায় ৯টি ঘর কর্ণফুলীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। ঝুঁকিতে আছে এই দুই এলাকার আরও অর্ধ শতাধিক ঘর। এছাড়াও এই ইউনিয়নের বনগ্রাম এলাকার ২কিলোমিটার দীর্ঘ প্রধান সড়ক ও ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আরও ৩টি সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। তবে জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে স্থানীয়রা সেচ্ছাশ্রমে প্রধান সড়কটি সংস্কার করা হয়েছে। এভাবে ইউনিয়নের ২ শতাধিক আভ্যন্তরিণ সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম বিপর্যস্ত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান সহ আশেপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। ড্রেন দখল সহ পানি চলাচলের নির্দিষ্ট গতিপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েছে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসাধারণ। তবে এই পরিস্থিতি রুখতে উপজেলা প্রশাসন সহ আমি নিজে বার বার ঝটিকা অভিযান চালিয়ে পানি চলাচলের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করেছি।’
তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের পক্ষ থেকে ৩০ কেজি চাল এবং শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এবং ঝুকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে।’
শনিবার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের এই পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে তাৎক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান, উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পূর্বিতা চাকমা। পরিদর্শনকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এসময় তিনি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।
এভাবে রাঙ্গুনিয়ার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আভ্যন্তরীন সড়ক ডুবে চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এসব এলাকার বিভিন্ন স্থানে পানির ঢলে ধসে পড়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। পাহাড়ী ঢলে পুকুর ডুবে মাছ পানিতে ভেসে গেছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় নতুনভাবে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চন্দ্রঘোনা-কদমতলী, শিলক, পদুয়া, কোদালা, লালানগর, পোমরা, বেতাগী, সরফভাটা, হোছনাবাদ, রাজানগর, ইসলামপুর ও স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের অন্তত দেড়শত গ্রাম। তবে কিছু কিছু এলাকায় পানি নেমে গেলেও এক ঘন্টার ভারী বৃষ্টিপাতে আবারও প্লাবিত হয় এসব এলাকা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করছে প্রশাসন। শুরুতে উপজেলায় ঝুকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। আবার সরেজমিনে গিয়ে ঝুকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানের স্কুল সহ আশেপাশের সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেওয়া হয়েছে। বন্যা দুর্গত ও ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Logo-orginal