, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

জেনে নিন জিলহজ মাসের গুরুত্ব ও করণীয়

প্রকাশ: ২০১৯-০৮-০৫ ১০:৩১:৩০ || আপডেট: ২০১৯-০৮-০৫ ১০:৩১:৩০

Spread the love

মাওলানা আনসারুল্লাহ হাসান: আল্লাহর তাআলার বিধানানুসারে যে চারটি  মাসপবিত্র ওসম্মানিত, তার একটি হল যিলহজ্ব মাস।আর এ মাসের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও মর্যাদাপূর্ণ সময়হল আশারায়ে যিলহজ্ব বা যিলহজ্ব মাসের প্রথমদশক।

দুটি ইবাদত এ দশকের মর্যাদাকে আরোঅধিক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছে। কুরআন-হাদীসেএই দশকের বিশেষ ফযীলত ও অসীম গুরুত্ব ওতাৎপর্যের কথা বর্ণিত হয়েছে।স্বয়ং আল্লাহতাআলা এই দশকের সম্মান ও পবিত্রতা প্রকাশান্তেএই দশকের রজনীগুলোর নামে শপথ করেছেন।  ইরশাদ হয়েছে।

والفجر، وليال عشر

শপথ ভোরবেলার, শপথ দশ রাত্রির।-সূরা ফজর(৮৯) : ১-২

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা., হযরতআবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. ও মুজাহিদ রাহ. সহঅধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও মুফাসসিরের মতেএখানে দশ রাত্রির দ্বারা যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশরাতকেই বুঝানো হয়েছে। হাফেয ইবনে কাসীররাহ. বলেন, এটিই বিশুদ্ধ মত।-তাফসীরে ইবনেকাসীর ৪/৫৩৫-৫৩৬

হাদীস শরীফে এই দশককে দুনিয়ার সবচেয়েউত্তম  ও মর্যাদাবান দশক হিসেবে আখ্যায়িত করাহয়েছে।

হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

أفضل أيام الدنيا العشر، يعني عشر ذي الحجة، قيل ولا مثلهن في سبيل الله؟ قال : ولا مثلهن في سبيل الله، إلا رجل عُفِّر وجهه بالتراب.

দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনগুলো হল যিলহজ্বের দশদিন। জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহর  রাস্তায়ও কি তারসমতুল্য নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায়ওতার সমতুল্য নেই, তবে ঐ ব্যক্তি, যার চেহারাধূলিযুক্ত হয়েছে, অর্থাৎ শাহদাতের মর্যাদা লাভকরেছে।-মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১১২৮; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ২০১০

অন্য বর্ণনায় হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত হয়েছেু

ما من أيام أفضل عند الله من أيام عشر ذي الحجة …

যিলহজ্বের দশ দিনের চেয়ে কোনো দিনই আল্লাহরনিকট উত্তম নয়।-সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ২৮৪২

এই দশকের নেক আমল আল্লাহর নিকট সবচেয়েপ্রিয়

কুরআন-হাদীসে আশারায়ে যিলহজ্বের উপরোক্তবৈশিষ্ট্য ও বিশেষ তাৎপর্যের কথা যেমন বর্ণিতহয়েছে তেমনি দশকের আমল ও ইবাদত-বন্দেগীরবিশেষ ফযীলত ও সওয়াবের কথাও অত্যন্তগুরুত্বের সাথে বর্ণিত হয়েছে। এই দশকের নেকআমল, বিশেষত আল্লাহর যিকির সম্পর্কে পবিত্রকুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন

ويذكروا اسم الله في أيام معلومات على ما رزقهم من بهيمة الأنعام

 (তরজমা) নির্দিষ্ট দিনসমূহে তারা যেন আললাহরনাম উচ্চারণ করে সেই সকল পশুর উপর, যা তিনিতাদের দিয়েছেন।-সূরা হজ্ব (২২) : ২৮

ইমাম বুখারী রাহ. বলেন, হযরত ইবনে আববাসরা. বলেছেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট দিনসমূহ’’ দ্বারা যিলহজ্বেরদশ দিনই উদ্দেশ্য। অনুরূপভাবে হযরত ইবনেওমর রা., হযান বসরী রাহ.,  আতা রাহ., মুজাহিদরাহ., ইকরামা রাহ., কাতাদাহ রাহ., ইমাম নাখায়ীরাহ., ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমামআহমদ রাহ.সহ অধিকাংশ উলামায়ে কেরামেরঅভিমত, সুনির্দিষ্ট দিনসমূহ দ্বারা যিলহজ্বের দশদিনই বোঝানো হয়েছে।-তাফসীরে ইবনে কাসীর৩/২৮৯; লাতায়িফুল মাআরিফ ৩৬১

ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. বলেন, আল্লাহকেস্মরণ ও তার নাম উচ্চারণ শুধু যবেহ করার সময়নির্দিষ্ট নয়; বরং সুনির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নামউচ্চারণ অর্থ হল, আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদেরযেসব নেয়ামত দান করেছেন, বিশেষত জীব-জন্তুকে তাদের অধীন করে দিয়েছেন, তাদের খাদ্যবানিয়েছেন, ইত্যাদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।-প্রাগুক্ত।

এই দশকের দিন-রাতসমূহে নেক আমলের গুরুত্বহাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবনেআববাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন

ما من أيام العمَلُ الصالح فيها أحب إلى الله عز وجل من هذه الأيام يعني أيام العشر، قالوا : يا رسول الله، ولا الجهاد في سبيل الله؟ قال : ولا الجهاد في سبيل الله، إلا رجل خرج بنفسه وماله، ثم لم يرجع من ذلك بشيء.

আল্লাহর নিকট যিলহজ্বের দশ দিনের নেকআমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনেরআমল নেই। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়ারাসূলুল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও (এর চেয়েউত্তম) নয়? তিনি বললেন, না, আল্লাহর রাস্তায়জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ, সেই ব্যক্তির জিহাদ এরচেয়ে উত্তম, যে নিজের জানমাল নিয়ে আল্লাহররাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে, তারপর কোনোকিছুই নিয়ে ফিরে আসেনি।- সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৩৮; সহীহ বুখারী, হাদীস : ৯৬৯; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৭৫৭; সুনানে ইবনেমাজাহ, হাদীস : ১৭২৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৯৬৮; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩২৪

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদকরেছেন-

(অর্থ) আল্লাহ তাআলার নিকট আশারায়ে যিলহজ্বেরআমলের চেয়ে অধিক মহৎ এবং অধিক প্রিয় অন্যকোনো দিনের আমল নেই। সুতরাং তোমরা সেইদিবসগুলোতে অধিক পরিমাণে তাসবীহ(সুবহানাল্লাহ) তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) তাহলীল(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ কর।-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ৫৪৪৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪১১০; বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস : ৩৭৫০; ত্ববারানী, হাদীস : ১১১১৬; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫৯৩২; শরহু মুশকিলিল আছার, হাদীস : ২৯৭১ 

কুরআনের উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসসমূহেরআলোকে স্পষ্ট বুঝা যায়, এই দশ দিনের যেকোনো নেক আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।তাই মুমিন বান্দার জন্য অধিক পরিমাণে সওয়াবঅর্জন, আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং আখেরাতেরপাথেয় সংগ্রহের এরচেয়ে উপযুক্ত সময় আর কীহতে পারে? এজন্য পূর্ববর্তীদের জীবনীতে এইদশকের আমল সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন এইদশকের দিনগুলোর আগমন ঘটত এত অধিকআমল ও মুজাহাদা করতেন, যা পরিমাপ করাওসম্ভব নয়। আমাদেরও উচিত বিভিন্ন নেক আমলেরমাধ্যমে এই দশকের রাত-দিনগুলোকে জীবন্ত ওপ্রাণবন্ত করে তোলা।

আশারায়ে যিলহজ্বের বিশেষ আমল

এই দশক যেহেতু নেক আমলের বিশেষ সময় তাইএই দশ দিনের যেকোনো আমল যেমন আল্লাহরনিকট প্রিয় ও পছন্দনীয় অধিক পরিমাণে নফলনামায আদায় করা, রোযা রাখা, যিকির-আযকার, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদি।তাই আল্লাহর নেয়ামত ও বিশেষ অনুগ্রহ মনে করেএই দশকে সাধ্যমতো নেক আমলের পাবন্দী করাএকান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া বিভিন্ন হাদীসে এইদশকের বিশেষ কিছু আমলের কথাও বর্ণিতহয়েছে। যেমন-

১. চুল, নখ, মোচ ইত্যাদি না কাটা

যিলহজ্বের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানীর আগপর্যন্ত নিজের নখ, চুল, মোচ, নাভীর নিচের পশমইত্যাদি না কাটা। এটা মুস্তাহাব আমল।

হযরত উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إذا رأيتم هلال ذي الحجة وأراد أحدكم أن يضحي فليمسك عن شعره وأظفاره.

তোমরা যদি যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখতে পাও আরতোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে তবে সেযেন স্বীয় চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৯৭৭; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৫২৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৭৯১; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৪৩৬২; সহীহইবনে হিববান, হাদীস : ৫৮৯৭

যে ব্যক্তি কুরবানী করতে সক্ষম নয় সেও এ আমল পালন করবে। 

#সংগৃহীত মাওলানা আনসারুল্লাহ হাসানের লেখা থেকে।

Logo-orginal