, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

jamil Ahamed jamil Ahamed

এবার ফোনে ১ মিনিট করে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন কাশ্মীরিরা

প্রকাশ: ২০১৯-০৮-১৯ ১৭:১১:০৭ || আপডেট: ২০১৯-০৮-১৯ ১৭:১১:০৭

Spread the love

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৭টি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ খুলে দিয়ে ল্যান্ডলাইন পরিসেবা ফের চালু করা হয়েছে কাশ্মীরে। টানা দুই সপ্তাহ ধরে চলা অবরোধের অবসান ঘটিয়ে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি শিথিল রয়েছে। সংবাদ বিবিসি বাংলার ।

শনিবার শ্রীনগরে এক সংবাদ সম্মেলনে জম্মু-কাশ্মীর সরকারের মুখপাত্র রোহিত কানসাল বলেছেন, ধারণ মানুষের যোগাযোগের জন্য ৫০ হাজারেরও বেশি ল্যান্ডলাইন চালু করে দিয়েছে সরকার।

তবে সরকারের এ বক্তব্য মানতে নারাজ সাধারণ কাশ্মীরিরা।

কাশ্মীরিদের দাবি, তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা ও দোকানপাটে এখন পর্যন্ত ল্যান্ডলাইন চালু হয়নি। মোবাইল ফোন এখনও অকেজোই রয়েছে।

গত দুই সপ্তাহে চলা পরিস্থিতির তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা। দিল্লিতে বসবাসকারী একাধিক কাশ্মীরির মুখেও শোনা যাচ্ছে একই কথা।

তারা জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীরে তাদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ এখনও সেভাবে করতে সক্ষম হচ্ছেন না তারা।

কাশ্মীরে অবস্থিত তাদের পরিবার জানিয়েছে, সেখানে থানায় গিয়ে লম্বা লাইন দিয়ে ভারতের অন্যান্য প্রদেশের অবস্থিত কাশ্মীরিদের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে তাদের। আর লাইন এতটাই দীর্ঘ হয় যে, মিনিটখানেকের বেশি কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না তারা।

কাজের জন্য দিল্লিতে অবস্থান করছেন কাশ্মীরের বারামুলার মেয়ে সাদাফ ওয়ানি।

তিনি বলেন, আজ (রোববার) আব্বু জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ফোন করেছিলেন। আর ফোনটি এসেছিল কাশ্মীরের একটি থানা থেকে। কিন্তু কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই লাইন কেটে যায়।

তিনি যোগ করেন, মিডিয়াতে যে খবর শোনা যাচ্ছে আদতে তা ঘটছে না। এমনটি হলে আমি তো বাবার সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতে পারতাম। আমি জানি কাশ্মীরে ল্যান্ডলাইন এখনও চালু হয়নি। চালু হলে বাবা আমাকে ফোন করতে থানায় যাবেন কেন!

সাদাফ ওয়ানির মতো দিল্লিতে থেকে পড়াশোনা করতে আসা বা চাকরিরত অনেক কাশ্মীরির অভিজ্ঞতাও একই বার্তাই দিচ্ছে।

তারা সবাই বলছেন, বলা হলেও এখনও পরিস্থিতি বিশেষ কিছু বদলায়নি। মোবাইল, টেলিফোন বা ইন্টারনেটে পৃথিবী থেকে এখনও বিচ্ছিন্ন হয়েই আছে কাশ্মীর।

সাদাফের মতো অন্য আরেকজন জানালেন, সেখানে জনগণদের এখন যে সুযোগটি দেয়া হচ্ছে, তা হলো- থানায় গিয়ে পুলিশের সামনে দাঁড়িয়েই ফোন করা যাচ্ছে। আর দূরদূরান্তে স্বজনদের নিজেদের খবর জানাতে থানায় ভিড় করছেন অসংখ্য কাশ্মীরি। যে কারণে মিনিটখানেকের বেশি কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না কাউকে।

সাদাফসহ দিল্লিতে থাকা কাশ্মীরিরা জানান, শ্রীনগর, বারামুলা ও সোপোরেসহ কাশ্মীরের কয়েকটি স্থানের আত্মীয়স্বজনদের ল্যান্ডলাইনে ক্রমাগত চেষ্টা করেছেন তারা। কারও নম্বরেই কল যায়নি।

তা হলে কাশ্মীরে যে ৫০ হাজারেরও বেশি ল্যান্ডলাইন চালু করার কথা সরকার থেকে জানানো হচ্ছে, সেগুলো কোনো লাইন বলে প্রশ্ন করেন তারা।

এ বিষয়ে সাদাফ জানান, গত সপ্তাহে আমি শ্রীনগরের একটি হোটেলে উঠেছিলাম। হোটেলের ল্যান্ডলাইনেও ক্রমাগত চেষ্টা করেছি সারাদিন। রিং বাজেনি কোনো। তবে কোন ল্যান্ডলাইন চালু করা হয়েছে বুঝতে পারছি না।

দিল্লি থেকে কাশ্মীরে কাউকে ল্যান্ডলাইনে পাওয়া গেছে বলে কোনো কথা এ কয়দিনে শোনেননি তিনি।

দিল্লিতে অবস্থান নেয়া কাশ্মীরি যুবক মুদাসসা জানান, শনিবার রাতে সেখানকার থানা থেকে তার কাছেও ফোন আসে। তিনি ফোন ধরে বাবা-মায়ের কণ্ঠ শুনতে পান।

ঠিক ১৫ দিন পর বাবা-মায়ের সঙ্গে ১ মিনিট কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় নগরী শ্রীনগরে সাধারণ মানুষের চলাচলের ওপর আবারও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রাতভর পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হওয়ার পর ভারতীয় প্রশাসন এ পদক্ষেপ নেয়।

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের পর দিন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যসচিব বিভিআর সুব্রাহ্মণ্যম অবরুদ্ধ কাশ্মীর ধীরে ধীরে সচল হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এ জন্য শনিবার শ্রীনগরের কয়েকটি অংশসহ কাশ্মীর উপত্যকার ১৭টি টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ল্যান্ডফোন সংযোগও সচল করা হয়।

কিন্তু ২৪ ঘণ্টায় শ্রীনগরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষের পর রোববার থেকে আবারও সেখানে নিরাপত্তা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। যদিও ভারতীয় প্রশাসনের দাবি, কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও নতুন করে কারফিউ জারি করা হয়নি।

Logo-orginal