, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

admin admin

কাশ্মীরি নারীদের ভোগের কথা বলে বিকৃত যৌনকারীর পরিচয় দিল বিজেপির নেতা কর্মীরা

প্রকাশ: ২০১৯-০৮-১৩ ১৭:১০:৩৪ || আপডেট: ২০১৯-০৮-১৩ ১৭:১০:৩৪

Spread the love

কাশ্মীরি নারীদের ভোগ করতে মরিয়া হয়ে উঠছে ভারতের বিকৃতমনা পুরুষরা অধিকৃত কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদাদানকারী ৩৭০ ধারাটি গত ৫ আগস্ট তুলে নিয়েছে মোদি সরকার।

এর আগে অবশ্য উপত্যাকার ওপর ১৪৪ ধারা আরোপ করে সেখানকার বাসিন্দাদের মূলত ঘরে থাকতে বাধ্য করেছে ভারত।

সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে লাখ লাখ সেনা। বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ, অফিস আদালত, বাজারঘাটসহ সবকিছু। এ অবস্থায় কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের অবস্থা যে কতটা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে তা সহজেই অনুমান করা যায়।

কিন্তু এসব খবর ছাপিয়ে ভারতের সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসছে ভারতীয় পুরুষদের বিবৃত মানসিকতা। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা উঠে যাওয়ায় খুশিতে নাকি বোগল বাজাচ্ছে ভারতীয় পুরুষরা।

তারা নাকি একে কাশ্মীরের সুন্দরী নারীদের এতদিন পর ভোগ করার সুযোগ হিসেবেই দেখছে। তাই বুঝি অমিত শাহের এই ঘোষণার পরপরই গুগলে ‘কাশ্মীরি গার্ল’ সার্চ করতে শুরু করেছেন ভারতীয় পুরুষেরা।

কেবল সাধারণ পুরুষ নয়, বিভিন্ন নেতা এমনকি খোদ মন্ত্রী পর্যন্ত কাশ্মীরি নারীদের বিয়ে করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। আর নিজেদের এসব বিকৃত বাসনা গোপন করার কোনো চেষ্টাই তারা করেননি।

বরং জন সমাবেশে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ঘোষনা করেছেন। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাত্তার শুক্রবার এক জনসভায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আমাদের পথের কাঁটা সরে গেছে। এখন কেবল বিহার থেকে নয়, আমরা এখন কাশ্মীর থেকেও মেয়ে আনতে পারবো।

মজার কথা হচ্ছে, তিনি ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’র মত একটি নারীবান্ধব কর্মসূচিতে গিয়ে নারীদের বিরুদ্ধে এত বড় অপমানজনক কথা বলেছেন। এখানে বলে রাখা ভালো, মেয়েভ্রণ হ’ত্যার কারণে ভারতের এই রাজ্যটিতে নারীদের সংখ্যা খুব কম।

প্রতি এক হাজার পুরুষের বিপরীতে সেখানে মাত্র ৮৫০ জন নারী রয়েছে। তাই হরিয়ানার পুরুষেরা পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে মত পশ্চাতপদ রাজ্যগুলো থেকে বিয়ের নামে নারী যোগাড় করে থাকে।
এর আগে বিজেপি নেতা বিক্রম সাইনি তার দলের নেতা-কর্মীদের কাশ্মীরে গিয়ে জমি ও নারীদের ওপর দখল নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি মোদি সরকারের ওই বিতর্কিত ঘোষণার পরদিনই কাশ্মীরের মুজাফফরনগরে গিয়ে বলেন,

‘মোদিজীকে ধন্যবাদ। তিনি আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছেন। এ আনন্দে ড্রাম বাজাচ্ছে গোটা ভারত। বিজেপিতে অবিবাহিত কর্মীরা, যারা এতদিন ধরে কাশ্মীরের সুন্দরী নারীদের বিয়ে করার স্বপ্ন দেখছে

তারা এখন নির্ভয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন। তোমরা সবাই কাশ্মীরে যাও এবং সেখানকার সুন্দরী নারীদের বিয়ে করো। একই সঙ্গে সেখানকার জমাজমির মালিক হও।বিজেপি নেতাদের এসব বিবৃতির প্রেক্ষিতে গুগলে ‘কাশ্মীরি গার্ল’ খোঁজার যে ট্রেন্ড দেখা গেছে।

বলাবাহুল্য এই ঘটনা ভারতীয় পুরুষদের ‘ধ’র্ষণকামী’ বিকৃত মানসিকতারই’ প্রমাণ বহন করে। এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ ভারতের কিছু সংখ্যক নারী নেত্রী। ইন্ডিয়ামিটু’র সমন্বয়ক ও সাংবাদিক ঋতুপর্ণা চ্যাটার্জি বলেন,
‘এরা ধ’ র্ষণকামী পুরুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পুরুষের যুদ্ধক্ষেত্রে টার্গেট হয়েছে নারীদেহ। কাশ্মীরি মেয়েদের নিয়ে বিজেপি বিধায়কের সবশেষ মন্তব্য সেই বিষয়টির প্রমাণ বহন করছে।’ বিজেপি বিধায়কের মন্তব্য এবং অনলাইনে ‘কাশ্মীরি গার্ল’

লিখে খোঁজার বিষয়টিকে সরাসরি নারী অবমাননা বলছেন নয়াদিল্লির সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও নারী অধিকার নেত্রী মিহিরা সুদ। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরের নারীরা যুদ্ধের গণিমতের মাল নন।
তারাও অন্যদের মতো মানুষ মতামতের অধিকার তাদেরও আছে।বিষয়টিতে চরম ক্ষুব্ধ কিছু মানবাধিকার কর্মী বলেন স্মার্টফোন হাতে যারা এই ধরনের গুগল সার্চ করছেন, তারা আসলে হরিণের চামড়া গায়ে দেওয়া নেকড়ে।

তবে ভারতীয় নেতাদের এসব বিকৃত বিবৃতি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কাশ্মীরি নেতার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সম্ভবত, ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে ওই অঞ্চলটির যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকায় এসব কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এখনও তাদের কানে যায়নি।প্রসঙ্গত, ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত এই উপত্যকার নারীদের রূপ ও গুণের খ্যাতি রয়েছে বিশ্ব জুড়ে। বলা হয়ে থাকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী এই রাজ্যের মেয়েরা।
কেবল এশিয়া নয়- সাগরের মত নীল চোখ আপেলের মত গায়ের রং আর মিষ্টি হাসি আর ঐতিহ্যবাহী পোশাকের কল্যাণে তারা সবার মন জয় করে নিয়েছে। তারা সবার মন জয় করে নিয়েছে।যুদ্ধ-মহড়ার জন্য ভারত সীমান্তবর্তী ঘাঁটিতে সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে পাকিস্তান!
কাশ্মীরের স্বাধীনতার সর্বশেষ রক্ষা কবচ হিসেবে পরিচিত ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রতিবাদে রাজধানী শ্রীনগরে শুক্রবার হাজার হাজার লোক বিক্ষোভে নামে। সংবাদ মাধ্যম বিবিসির ভিডিও ফুটেজে এমন তথ্য উঠে এসেছে।বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানের প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, জুমার নামাজের জন্য কারফিউ কিছুটা শিথিল করার সুযোগে মাত্র আধঘন্টার মধ্যেই শ্রীনগরের ঈদগাহ ময়দানের ওই বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে যায়।
এছাড়া বিবিসি জানায় তাদের কাছে যেসব ভিডিও আছে তাতে দেখা যায়, হাজার হাজার লোকের সেই বিক্ষোভে কাশ্মীরের স্বাধীনতার পক্ষে মুহুর্মূহু স্লোগান উঠছে। ওই বিক্ষোভে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও-
ছররা গুলিও নিক্ষেপ করে, যাতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী জখম হয়েছেন। তবে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট মন্ত্রক শনিবার টুইট করে জানায়, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে যে খবর বেরিয়েছে কাশ্মীরে প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন, সেটা সম্পূর্ণ ভুল খবর। এতে বলা হয় শ্রীনগর বারামুল্লায় কয়েকটি বিক্ষোভ হয়েছে, কিন্তু কোনওটাতেই জনা কুড়ির বেশী মানুষ ছিলেন না।

শুক্রবারের বিক্ষোভের পর থেকেই রাজ্যে কারফিউ বহাল ছিল। বিবিসির সংবাদদাতা রিয়াজ মাসরুর শ্রীনগর থেকে যে ভিডিও পাঠিয়েছেন, তাতে দেখা যায় শুক্রবার ওই শহরে জুম্মার নামাজের পর কয়েক হাজার মানুষের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের চিত্র।
বিক্ষোভকারীদের কারও হাতে কালো পতাকা, কারও বা সবুজের ওপরে চাঁদতারা আঁকা পতাকা, কারও হাতে ‘উই ওয়ান্ট ফ্রীডম’ লেখা পোস্টার। মানুষের গলাতেও শোনা যাচ্ছে স্বাধীনতার দাবীতে স্লোগান।

রিয়াজ মাসরুর জানা্ছেন, নিরাপত্তা বাহিনী প্রথমে মানুষকে জড়ো হতে বাধা দেয় নি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে একজায়গায় প্রথমে শূন্যে গুলি চালায় তারা, তারপরে পেলেট গান থেকে ছররা গুলি ছোঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর।
তার পাঠানো ভিডিওতে বিক্ষোভের ওপরে পুলিশ ছররা গুলি চালানোর পর ছত্রভঙ্গটেলিফোন-ইন্টারনেট সংযোগ ছিন্ন, রাজনৈতিক নেতা সহ শত শত লোক গৃহবন্দী বা আটক অবস্থায় আছেন। শ্রীনগরের পথে পথে ফৌজি টহল ও তল্লাশি চলছে, দোকানপাট বন্ধ, জনজীবন স্তব্ধ ।

বিক্ষোভকারীদের ছুটোছুটির দৃশ্যও দেখা গেছে। ভিডিওতে ধরা পড়েছে গুলি ছোঁড়ার শব্দ, তার পর মানুষ যে যেদিকে পারছেন পালাচ্ছেন।

অনেককেই আড়াল খুঁজতে দেখা যাচ্ছে. কেউ কেউ আবার মাটিতে শুয়ে পড়ছেন বা হামাগুড়ি দিয়ে নিরাপদ জায়গার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। ভারতের সংবিধান থেকে কাশ্মীর রাজ্যের স্বায়ত্বশাসন দানকারী ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার পর থেকে রাজ্যটি কার্যত অবরুদ্ধ এবং বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। #সংগৃহীত।

Logo-orginal