, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

jamil Ahamed jamil Ahamed

হাইকোর্টের রায়ে ভালোবাসার জয় হলো সুস্মিতার

প্রকাশ: ২০১৯-০৮-০২ ১২:৩৪:৫৮ || আপডেট: ২০১৯-০৮-০২ ১২:৩৪:৫৮

Spread the love

হাইকোর্টের রায়ে ভালোবাসার জয় হলো সুস্মিতার। জয় হলো সুম্মিতার ৮৯ দিনের কোলের শিশুরও। জামিন পেলেন মিথ্যা মামলায় ১৪ বছরের সাজা হওয়া তার প্রেমিক তুষারও। খবর দৈনিক যুগান্তরের ।

ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্রাহ্মণ বর্ণের মেয়ে সুস্মিতা দেবনাথ অদিতি ও হরিজন বর্ণের যুবক তুষার দাস। এরপর সুস্মিতার বাহ্মণ বাবার করা মিথ্যা অপহরণ মামলায় ১৪ বছরের সাজা হয় তুষারের। ওই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তার জামিনও মঞ্জুর করা হয়েছে। এর ফলে তুষারের মুক্তিতে আর বাধা রইল না।

বৃহস্পতিবার ৮৯ দিনের শিশুসন্তান কোলে নিয়ে আদালত কক্ষে আসেন সুস্মিতা। তার স্বামী তুষার ছিলেন কাঠগড়ায়। শুনানিতে হাইকোর্ট জানতে চান, যেখানে ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হয়নি সেখানে অপহরণের অভিযোগে কিভাবে সাজা দেয়া যায়? এ বিষয়ে রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের বক্তব্য গ্রহণ শেষে তুষারকে জামিন দেন আদালত।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে তুষার দাসের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট শিশির মুহাম্মদ মনির ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসাইন।

হাইকোর্ট বলেন, আমাদের সমাজে এ রকম অসম বিয়ে হলে সমাজচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আইন তো ভিন্ন। একদিকে আইন অন্যদিকে বাস্তবতা। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ বাস্তবতাও ভাবতে হবে।

এদিকে স্বামীর জামিন পাওয়ায় মুখে হাসি ফুটে সুস্মিতার। রায়ের পর তিনি বলেন, হাইকোর্ট আমাকে ন্যায়বিচার দিয়েছেন। আমার কোলের শিশু ওর বাবাকে কাছে পাবে।

সুস্মিতা আরও বলেন, আমি ভালোবেসে স্বেচ্ছায় তুষারকে বিয়ে করেছি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিবেচনা না করে সবাইকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। আমার বাবাকে বলতে চাই, তোমরা ভালো ও সুখে থেকো। যদি পার আমার কাছে এসো, এসে সবকিছু মেনে নাও। কারণ ভালোবাসায় কোনো উঁচু-নিচু-বর্ণ নেই।

জানা গেছে, সুস্মিতা ও তুষারের বাড়ি শরীয়তপুরে। তারা ভালোবেসে বিয়ে করেন প্রায় ২ বছর আগে। তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মুনির গণমাধ্যমকে জানান, ‘তুষার ও সুস্মিতা ভালোবেসে বিয়ে করেন দুই বছর আগে। প্রায় তিন মাস আগে তাঁদের কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। কিন্তু তুষার দাস হরিজন (নিম্ন) বর্ণের হওয়ার কারণে শুরুতেই এ বিয়ে মেনে নিতে পারেননি সুস্মিতার মা-বাবা।’

অ্যাডভোকেট শিশির মুনির আরো জানান, মেয়ে নাবালিকা—এ অভিযোগ তুলে সুস্মিতার বাবা তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর আসামি তুষার দাস ওরফে রাজ ভিকটিম সুস্মিতা ওরফে অদিতিকে অপহরণ করে নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর অপহরণের অভিযোগে সুস্মিতার বাবা বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।

২০১৯ সালের ২৩ জুলাই ওই মামলার রায় হয়। মামলায় অপহরণের দায়ে তুষারকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন শরীয়তপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা জজ আবদুস ছালাম খান। সুস্মিতা স্বেচ্ছায় তুষার দাসকে বিয়ে করার কথা বললেও তাঁর কথা আমলে নেননি নিম্ন আদালত।

যেদিন রায় হয়, সেদিনই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তুষার। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তিনি আপিল করেন। এখন স্বামীকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড থেকে মুক্ত করতে উচ্চ আদালতে এসেছেন স্ত্রী সুস্মিতা।

অবশেষে হাইকোর্টের রায়ে জয় হলো সুস্মিতার ভালোবাসার। গতকাল হাইকোর্ট আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাঁকে ওই দায় থেকে খালাস দেন।

Logo-orginal